1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীকে 'ভালো' বলে কোন পয়েন্ট তুলছেন মমতা!

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

রাজনীতির কারবারিদের মন্তব্যের কোনো কালানুক্রম থাকে না। তাই মোদীকে ভালো বলতেও মমতার বাধে না।

https://p.dw.com/p/4H8dg
মোদী-মমতা
ছবি: PTI Photo

পার্থ চট্টোপাধ্যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আচমকাই দিল্লি সফর করেন। দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। যা নিয়ে সে সময় রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা হয়েছিল। কোনো কোনো মহলে প্রশ্ন উঠেছিল, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে 'সেটিং' করতেই কি দিল্লিতে মমতা?

সেটিং শব্দটি ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন নয়। যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আপস মীমাংসার এমন নজির এর আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও নিশ্চয় হবে। সম্প্রতি বিহারের রাজনীতিতে এমন ঘটনার নজির আমরা দেখেছি।

কিন্তু চলতি সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা যা বললেন, রোমহর্ষক। এতদিন ধরে চলা যাবতীয় জল্পনা-কল্পনার উত্তর যেন এক লাইনে দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়া। মমতা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, ''প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিবিআই-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার করছেন, তা আমি মনে করি না। এসব বিজেপি-র নেতারা করাচ্ছেন। সিবিআই আগে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ছিল। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে আছে।''

অর্থাৎ, মোদী ভালো বিজেপি খারাপ এমন একটি ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন মমতা। কোন মুখ্যমন্ত্রী একথা বলছেন? এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন-পর্বে একের পর এক নির্বাচনী জনসভায় মমতা মোদীর কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোড়ানোর কথা বলেছেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে গালিগালাজ করেছেন। ভয়ংকর ভাষা ব্যবহার করেছেন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একবার নয়, বার বার প্রত্যক্ষ সংঘাতে গেছেন মমতা। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের যোজনা মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে চালু হতে দেননি।

স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

সেই জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রী আচমকা এমন মন্তব্য, রাজনৈতিক পাঠে ৩৬০ ডিগ্রি বদল বলেই মনে হয়। এমন বদল যে অবশ্যম্ভাবী, একাধিক বিশেষজ্ঞ তার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কেন অবশ্যম্ভাবী বলেছিলেন তারা? কারণ, দুর্নীতির জল যে ঘোলা, তা মুখ্যমন্ত্রী সম্যক জানেন। মমতা জানেন, কান টানলে মাথা আসে। আর মাথায় হাত লাগলে কোথা থেকে কী ঘটিয়া যাইতে পারে, স্কুলের ছাত্রও তা জানে।

সুতরাং রফার প্রয়োজন। রাজনীতিতে রফা এককেন্দ্রিক নয়। তার নানা মাত্রা নানা পর্যায়। দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে দেখা করা যদি তার একটি মাত্রা হয়, তবে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য একটি পর্যায়।

বিহার দেখেছে লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করে, সেই জোট ভেঙে নীতীশ কুমার বিরোধী বিজেপিকে সরকারে নিয়ে এসেছেন। জনগণের রায় সেখানে প্রাধান্য পায়নি। আবার সেই নীতীশই বিজেপির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করে লালুপ্রসাদের দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আবার সরকার ফেলে দিয়ে বিরোধী আরজেডিকে সরকারে নিয়ে এসেছেন।

ভারতীয় রাজনীতিতে সব সম্ভব। একদা এনডিএ-র মন্ত্রী মমতা সে কথা খুব ভালো করে জানেন। একসময় আরএসএস-এর গুণকীর্তন করা মমতা জানেন, রাজনীতির এঁদোগলিতে কখন কোন তাস কীভাবে খেলতে হয়।

আমরা যারা ভোট দিয়ে সুশাসনের কল্পনায় ট্যাক্সের টাকা ভরি তারা সেদিনও আদার ব্যাপারীছিলাম, এখনো তা-ই আছি। রাজনীতির কারবারিদের সেসব নিয়ে যে খুব বেশি মাথা ব্যথা নেই, তা আরো একবার প্রমাণ হয়ে গেল।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷