মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচলেন সাঈদী
১৫ মে ২০১৭সোমবার রিভিউ আবেদনের রায়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷ মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ আবেদন আদালত খারিজ করে দেয়৷ একইসঙ্গে সাঈদীর পক্ষে খালাসের আবেদনও খারিজ করে দেয়া হয়৷
বেঞ্চের অন্য চার বিচারপতিরা হলেন – জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার৷ আদালতে সাঈদীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন৷ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ আপিলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়৷
গত বছরের ১৭ জানুয়ারি সাঈদীর খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দায়ের করেন তার আইনজীবী৷ তারপর রাষ্ট্রপক্ষ তার শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করে৷ আর রিভিউয়ের রায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ডই দেয়া হলো৷
সোমবারের রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুকে আলম বলেন, ‘‘সাঈদী ছিল যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমনি৷ সাঈদী দেশ, সভ্যতা ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর৷ কিন্তু এমন একজন মানুষের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যথিত৷ সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনেই নিতে হবে৷ তাই দুঃখ আমার রয়েই গেল৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার দুর্বলতা ও ব্যর্থতার কারণেই সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা যায়নি৷’’
সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ন্যায়বিচার হয়নি৷ একমাত্র খালাসই ছিল আমার বাবার জন্য ন্যায়বিচার৷’’
তবে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলার তদন্ত এবং প্রসিকিউশনে কোনো ত্রুতি থাকলে ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিত না৷ আমরা ট্রাইব্যুনালে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় পেয়েছি৷ পরবর্তীতে আপিল ও রিভিউতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয় মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে৷ অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত এবং প্রসিকিউশনের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার যে কথা বলেছেন, তা হাস্যকর৷ কারণ তিনিই আপিল ও রিভিউয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা দুঃখজনক যে সঈদীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকেনি৷ আদালতের রায় আমাদের মেনে নিতে হবে৷ তবে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড হলেও সাঈদীর অপরাধ কিন্তু প্রমাণ হয়েছে৷’’
২০১৩ সালের ২৮ ফের্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ শোনানোর পর, সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে গুজব ছড়িয়ে বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামসহ ৩৪ জেলায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ সহিসংতায় প্রথমদিনেই ২২ জন নিহত হয়৷ শুধু বগুড়াতেই নিহত হয় ১১ জন৷ এই সহিংসতায় সর্বমোট ৭৮ জন নিহত হন৷ পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়া ছাড়ায় তার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা কার্যালয়েও হামলা করে৷
সেই সহিসংসতার কোনো প্রভাব বিচার বিভাগে পড়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তুরিন আফরোজ বলেন, ‘‘বিচারকরা তো ভয়ের ঊর্ধে থেকে বিচার কাজ করেন৷ তাঁরা প্রভাবমুক্ত থাকেন৷ তবে সহিংসতার ভয় তো এখনো আছে৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
২০১৩ সালের মার্চের ১ তারিখের ছবিঘরটি দেখুন৷