মুসলমানদের বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন সু চি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত রাখাইনে কোনো ধরণের সশস্ত্র সংঘর্ষ ও সেখানে কোনো ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' চলেনি বলে দাবি করেন সু চি৷ ‘‘তবুও অনেক মুসলমানের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে আমরা উদ্বিগ্ন৷ কেন এরকম ঘটছে তার কারণ আমরা খুঁজে বের করতে চাই,’’ বলেন তিনি৷
বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সু চি বলেন, তাঁর দেশ যে কোনো সময় যাচাই প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত৷ ‘‘যাচাইয়ের মাধ্যমে যে শরণার্থীরা এ দেশের বলে প্রতীয়মান হবে, তাঁদের কোনো সমস্যা ছাড়াই গ্রহণ করা হবে এবং তাঁদের নিরাপত্তা ও মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করা হবে,’’ বলেন তিনি৷
তবে অতীতে বাংলাদেশ থেকে খুবই অল্প সংখ্যক শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিয়েছে মিয়ানমার৷ যাচাইয়ের প্রক্রিয়াও বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ৷
সু চি তাঁর বক্তব্যে রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলমানদের কথা বলতে গিয়ে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেননি৷ তবে বলেছেন, ঐ অঞ্চলে বসবাসকারী বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং সেখানে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে তাঁর সরকার সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
রাখাইনে চলা সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ৷ সু চি তাঁর আধ ঘণ্টার বক্তব্যে এই অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ না করে বলেছেন, তাঁর সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ৷ ‘‘আমরা সব ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেআইনি সংঘাতের নিন্দা জানাই৷ আমরা ঐ রাজ্যে শান্তি, স্থিতি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ,’’ বলেন সু চি৷
সংঘাতের কারণে যেসব মানুষ দুর্দশায় পড়েছেন তাঁদের বিষয়টি তিনি গভীরভাবে অনুভব করেন বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের এই নোবেলজয়ী নেত্রী৷
ট্রাম্পের কাছে প্রত্যাশা নেই হাসিনার
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সোমবার এক পর্যায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ সেই সময় ট্রাম্পকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টি জানান৷ তবে এ নিয়ে ট্রাম্প কোনো মন্তব্য করেননি বলে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ ‘‘তিনি শুধু জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কেমন করছে? আমি বলেছি, বাংলাদেশ বেশ ভালো করছে, তবে আমাদের একমাত্র সমস্যা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা,’’ রয়টার্সকে বলেন হাসিনা৷ ‘‘তবে তিনি (ট্রাম্প) শরণার্থীদের নিয়ে কোনো কথা বলেননি,’’ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷
শরণার্থীদের ব্যাপারে ট্রাম্প তাঁর মনোভাব আগেই পরিষ্কার করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেন, মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে তাঁর কাছে সহায়তা চাওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ ‘‘অ্যামেরিকা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কোনো শরণার্থী নেবে না৷ ফলে আমি তাদের কাছ থেকে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে কী আশা করতে পারি? তিনি ইতিমধ্যে তাঁর মনোভাব জানিয়েছেন৷ তাই আমি কেন তাঁকে (সাহায্যের বিষয়ে) জিজ্ঞেস করতে যাব?’’ বলেন হাসিনা৷
গণ-আদালতে শুনানি
ইটালি ভিত্তিক সংগঠন ‘পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল’ বা পিপিটির গঠন করা একটি আন্তর্জাতিক গণ-আদালত অং সান সু চিসহ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীবাহিনীকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত করেছে৷ সোমবার মালয়েশিয়ায় এই মামলার শেষ পর্বের শুনানি শুরু হয়েছে৷ সেখানে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)