1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুর্শিদাবাদে আল কায়দা ঢুকল কী করে

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

একদিনে নয়জন সন্দেহভাজন আল কায়দা জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে ভারতের এনআইএ। তারা সবাই মুর্শিদাবাদের। প্রশ্ন উঠেছে আল কায়দা কী করে মুর্শিদাবাদে পা রাখল?

https://p.dw.com/p/3imc9
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/AA/F. Khan

এর আগে মুর্শিদাবাদ বা বলা ভালো পশ্চিমবঙ্গ থেকে জেএমবি জঙ্গিরা ধরা পড়েছে। কিন্তু আল কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কেউ ধরা পড়েনি। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ গত শনিবার অভিযান চালিয়ে মুর্শিদাবাদ ও কেরালা থেকে এই নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক, একজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র, দুজন ছোট ব্যবসায়ী এবং একজন মেকানিক। এনআইএ তাদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, প্রত্যেকের বাড়ি থেকে কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা দাবি করেছেন, তারা নির্দোষ। আল কায়দা কেন কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, এমন কোনো প্রমাণ বাড়ির লোকেরা পাননি। মুর্শিদাবাদ থেকে ধরা হয়েছে নাজমুস সাকিব, আতাউর রহমান, মইনুল মন্ডল, আল মামুন কালাম, সুফিয়ান এবং  লিউ ইয়ান আহমেদকে। তদন্তকারী সংস্থার সূত্র দাবি করেছে, তাদেরকে কয়েকজনকে অনলাইনে জিহাদি পত্রপত্রিকা পড়িয়ে দলে টানা হয়েছিল। পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড়ে থেকে তারা সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছিল। তাদের নেটওয়ার্ক তাই কেরালা থেকে বাংলা ছড়িয়েছে। এমনকী দিল্লিতেও ছড়াতে পারে। কারণ, একজন পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে দিল্লিতে কাজ করেছে। সেখানেও তার কিছু যোগাযোগ ছিল। এটা আল কায়দার একটা বড় মডিউল, যা ভারতে কাজ করছিল।

মুর্শিদাবাদ থেকে এত জন অভিযুক্ত আল কায়দা জঙ্গির ধরা পড়া নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন যুবকরা জড়িয়ে পড়ছেন সন্ত্রাসবাদের জালে? কেনই বা মুর্শিদাবাদ থেকে বারবার জঙ্গিরা ধরা পড়ছে? কীভাবে এই প্রবণতা বন্ধ করা যাবে?

এমনিতে আল কায়দার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নয় জন গ্রেফতার হওয়ার পর রাজনীতিও যথারীতি শুরু হয়েছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ এখন সন্ত্রাসের আতুরঘড় হয়ে গেছে। তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, জঙ্গিরা ঢোকে সীমান্ত পেরিয়ে। সীমান্ত সামলানো বিএসএফের কাজ। বিএসএফ কেন্দ্রের হাতে। দায়টা কেন্দ্রের। খুব স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল ও বিজেপি ভোটের আগে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। কিন্তু তারা মূল প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেছে।

রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, রাজ্যে সন্ত্রাসবাদীদের দলে নাম লেখানোর পিছনে একটা বড় কারণ তো নিঃসন্দেহে দারিদ্র্য। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''যারা সন্ত্রাসবাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই গরিব। তাদের লোভ দেখিয়ে সন্ত্রাসে নিয়ে আসাটা সহজ। কিন্তু তার পাশাপাশি মৌলবাদের বাড়বাড়ন্তও একটা কারণ। এটাও গরিব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়ছে।'' 

লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বহরমপুরের সাংসদ এবং মুর্শিদাবাদকে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। এই ঘটনার পর রীতিমতো উদ্বিগ্ন অধীরও বলছেন, আল কায়দার মতো সংগঠন গরিব মানুষগুলিকেই শিকার করে। তবে তিনি মনে করছেন, ভারতের রাজনীতিতে একটা সাম্প্রদায়িরক মনোভাব ছড়াচ্ছে। তাতে যে বার্তা যাচ্ছে, তা ঠিক নয়। জঙ্গি সংগঠনগুলি এটাকে ব্যবহার করে গরিব, কম শিক্ষিত মানুষদের প্রভাবিত করছে। অর্থাৎ, অধীর মনে করছেন, দারিদ্র্য তো বটেই, তার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা মনোভাব ছড়ানোটাও বড় কারণ। আর মুর্শিদাবাদ গরিব জেলা। ফলে সেখান থেকে গরিব ও কম শিক্ষিতদের নিজেদের দলে নিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে।

এই সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করার পুরো দায়িত্বটাই কি কেন্দ্রের? রাজ্যের পুলিশের কি কোনো দায়িত্ব নেই? আবার রাজ্য পুলিশের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ তা সকলেই জানেন। সেই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারেরও কি আরো বেশি করে রাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে চলা উচিত? সন্ধি মুখোপাধ্যায় মনে করেন, একটা জায়গায় রাজ্য পুলিশের দায়িত্ব থেকে যায়। পুলিশ অতীতে সেটা করেওছে। সেটা হলো, স্থানীয় প্রশাসন জানে, কোন জায়গাগুলি স্পর্শকাতর। কোথায় মানুষ প্রভাবিত হতে পারেন। পুলিশকে সেই জায়গায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে আরো বেশি করে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তা হলে পরিস্থিতির বদল হবে। তাদের জন্য কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে।

সন্ধিবাবু মনে করছেন, সন্ত্রাসবাদীদের চিহ্নিত করা এবং ধরার কাজটা এনআইএ অনেক ভালোভাবে করতে পারে। কারণ, তাদের সেই প্রশিক্ষণ আছে, দক্ষতা আছে, তারা এই ধরনের কাজই মূলত করে থাকে। তাদের কাছে গোয়েন্দা ইনপুটও আসে। ফলে এনআইএ যে মুর্শিদাবাদে এসে গ্রেফতার করেছে, সেটা স্বাভাবিক। সম্প্রতি তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে গোয়েন্দা তথ্য, প্রশিক্ষিত সংস্থা, অন্য পরিকাঠামো আছে। তবে তাদের উচিত রাজ্য সরকারগুলিকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। অধীরের প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসন কি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো দক্ষ?     

মুর্শিদাবাদে এনআইএ-র হানা এবং জঙ্গিদের গ্রেফতার নতুন নয়। এর আগেও খাগড়াগড় এবং বুদ্ধগয়াতে বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত অনেককেই মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেফতার করেছিল এনআইএ। তবে তারা ছিল মূলত জেএমবি ও অন্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এ বার আল কায়দার মতো মারাত্মক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত জঙ্গিও ধরা পড়ল মুর্শিদাবাদ থেকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসেছে, মুর্শিদাবাদে এত জঙ্গি তৎপরতা কেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে একদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত, অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড। তাই সীমান্ত পেরিয়ে এসে অন্যরাজ্যে চলে যাওয়ার  সুযোগ আছে। আর মুর্শিদাবাদ খুব ঘনবসতিপূর্ণ জেলা। ফলে সেখানে গোপনে কাজ করারও সুযোগ আছে। এই কারণেই মুর্শিদাবাদের গরিব মানুষকে টার্গেট করছে জঙ্গি সংগঠনগুলি এবং কিছুটা সফলও হচ্ছে।