মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের খবর ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন আইজ প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন৷ পাশাপাশি একাধিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থাও ফাঁসি কার্যকরের খবর জানিয়েছে৷ আর কশিমপুর কারগারে সামনে থেকে সাংবাদিক চৌধুরী আকবর হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘ফাঁসির জন্য কারাগার এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷''
এদিকে জামায়াতে ইসলামী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে রবিবার গায়েবানা জানাজা এবং সোমবার সারাদেশে আধাবেলা হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে৷
কাসেম আলীর দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হল৷ এর আগে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে৷
ফাঁসি কার্যকর করার আগে বিকেলে মীর কাসেমের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয় স্বজনসহ মোট ৩৮ জনকে শেষ বারের মত দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়৷ তারা দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা বলা ও দেখা করার সুযোগ পান৷ কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করার পর কারাগার থেকে বের হয়ে তার স্ত্রী সৈয়দা আয়েশা খানম জানান, ‘‘উনি বলেছেন, শেষ মুহূর্তে ছেলেকে দেখতে পারলাম না এই আক্ষেপ রয়ে গেল৷ ছেলে আমার পরিবারে ফিরে আসবে এ প্রত্যাশা করি৷''
আয়েশা খানম আরও জানান, ‘‘তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জান্নাতে যাবো৷ আমি আগে গিয়ে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবো৷ তোমরা কান্নাকাটি কোরো না৷ যারা মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি করেছে তারা কখনোই জয়ী হবে না৷ একদিন এই দেশে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা হবেই এবং ইসলামই জয়ী হবে৷''
প্রসঙ্গত, ৩০ আগস্ট মীর কাসেমের আপিল রিভিউ আবেদন খারিজ করে চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ৷ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ থাকলেও শুক্রবার সকালেই তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন৷ তারপরই কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নেয়া হয়৷ বিচার চলাকালে তিনি এই কারাগারেই ছিলেন৷ আগের পাঁচজনের ফাঁসি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হলেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়৷ এরপর গত ৮ মার্চ আপিলের রায়েও ওই সাজা বহাল থাকে৷ ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ১৯ জুন রিভিউ আবেদন আবেদন করেন মীর কাসেম৷
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আদালতে প্রমাণিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘‘১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যেকোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে নির্যাতন কেন্দ্র ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়৷ নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরও পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়৷'' এই অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ এছাড়া আরো ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ডের রায় হয় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে৷
ট্রাইবুন্যালে মামলার শুনানিতে প্রসিকিউটররা মীর কাসেমের অপরাধ সম্পর্কে বলেন, ‘‘এই অপরাধী পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হওয়া এক ‘বাঙালি খান‘ যিনি সে সময় জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন৷ ডালিম হোটেলকে নির্যাতন কেন্দ্র বানিয়ে সেখানে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে৷''
উল্লেখ্য, ইসলামী ছাত্রশিবিরের (তত্কালীন ছাত্রসংঘ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, অর্থাত্মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন৷ তিনি হলেন জামায়াতের পঞ্চম শীর্ষ নেতা, চূড়ান্ত রায়েও যার সর্বোচ্চ সাজার সিদ্ধান্ত এসেছে৷