মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
৫ নভেম্বর ২০১৭রবিবার ঢাকায় ৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের (সিপিসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানান৷ এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সংসদীয় ফোরাম৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এর ভাইস প্যাট্রন৷ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বর্তমানে এর চেয়ারপার্সন৷
শেখ হাসিনা সিপিসি'র উদ্বেধনী বক্তৃতায় বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা শুধু এ অঞ্চলে নয়, এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করছে৷ মিয়ানমার সরকারের এমন আচরণের জন্য সেখান থেকে ৬ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে৷''
তিনি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িকভাবে আমরা এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি৷ আপনাদের অনুরোধ জানাবো রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করুন৷ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং তাদের ফেরত নিতে আপনারা মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ বরাবরই বলে আসছে, রোহিঙ্গা সমস্যার পেছনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই, সমস্যার সৃষ্টি ও কেন্দ্রবিন্দু মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই নিহিত৷''
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়-এই নীতির ভিত্তিতে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হয়৷ বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আমরা সব সময়ই সুসম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি৷ এর ফলে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে পেরেছি৷ একইভাবে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে৷''
সিপিএ'র বাংলাদেশ সংসদীয় দলের সদস্য এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ দেশগুলোর আইন প্রণেতাদের প্রতি উন্মুক্ত আহ্বান জানিয়েছেন৷ আমরা চাই এখন তারা নিজ নিজ দেশের সংসদে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং তাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব পাশ করুক৷ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে৷ কমনওয়েলথভুক্ত দেশের আইন প্রণেতারা সেচ্চার হলে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে মিয়ানমারের ওপর৷''
সম্মেলনে যে সংসদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার বা প্রতিনিধিরা এসেছেন তারা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানালেন তিনি৷ বললেন, ‘‘তারা রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতনকে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা হিসেবে দেখছেন৷ আর তারা বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা করেছেন৷'' আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান,‘‘সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার কথা রয়েছে৷''
কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন(সিপিএ) এর সদস্য ৫২টি দেশের মধ্যে ৪৪টি দেশ, ১৮০টি শাখার মধ্যে ১১৪টি শাখা এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে৷ তিন দিনের সম্মেলনে এসব দেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের ৫৬ জন স্পিকার, ২৩ জন ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদ সদস্যসহ সাড়ে পাঁচশ মত প্রতিনিধি এ সম্মেলন অংশ নিতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এসেছেন৷
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ষষ্ঠ অংশীদারিত্ব সংলাপে রোহিঙ্গা সংকট
এদিকে রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ষষ্ঠ অংশীদারিত্ব সংলাপ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,‘‘রোহিঙ্গা সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র৷''
এক সংবাদ সম্মেলনে শ্যানন বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্যার সমাধান করাভ আমরা এজন্য মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলছি৷ রোহিঙ্গারা যে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে আছে সেটি সমাধানের চেষ্টা করছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা মিয়ানমার সফর করেছেন৷ এছাড়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে৷ আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আছে কিন্তু সেটি আমরা ভাবছি না৷ আমরা এখন সমাধান চাই, কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়৷''
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা এ নিয়ে আলোচনা করছি৷''
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি৷ যুক্তরাষ্ট্র এ ইস্যুতে আমাদের অন্যতম সহযোগী৷ গত দুই মাসে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য ৩১টি পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷'' রোহিঙ্গা ছাড়াও আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক৷