1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমার: বাংলাদেশকে যা করতে হবে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন ‘জঙ্গি গোষ্ঠীর' উত্থানের খবরে বাংলাদেশকে সতর্ক করে দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা৷ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এই জঙ্গি গোষ্ঠীও আর তৎপরতা বিস্তৃত করতে পারবে না৷

https://p.dw.com/p/2UXVm
রোহিঙ্গা
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Ismail

‘হারাকা আল-ইয়াকিন' নামের এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি গত ৯ অক্টোবর মিয়ামারের সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালায়৷ হামলায় মোট ৯ জন পুলিশ নিহত হয়৷ পরে আরেক হামলায় এক সেনাসদস্যও নিহত হয়৷ 

ব্রাসেলস ভিত্তিক থিংক ট্যাংক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) জানিয়েছে, হারাকা আল-ইয়াকিন নামের নতুন ওই সশস্ত্র গ্রুপটি গত অক্টোবরে মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত৷ এই গ্রুপটির আন্তর্জাতিক যোগাযোগও স্পষ্ট৷ পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে৷

আইসিজির দাবি, হারাকা আল-ইয়াকিন গোপনে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে দু'বছরের বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ হারাকা নেতা আতা উল্লাহ-র জন্ম করাচিতে৷ তিনি বর্তমানে সৌদি আরবের মক্কায় রয়েছেন৷ তার বাবা একজন অভিবাসী রোহিঙ্গা মুসলিম৷ আতা উল্লাহ পাকিস্তান বা অন্য কোথাও গিয়ে আধুনিক গেরিলাযুদ্ধের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে দাবি করছে আইসিজি৷ হারাকা গ্রুপের ২০ সদস্যের একটি দল দেশের বাইরে থেকে গ্রুপটির কর্মকাণ্ড তদারকি করে থাকে৷

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত অক্টোবরেও সরকারি বাহিনীর ওপর হামলায় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে কিছু রোহিঙ্গা নেয়া হয়েছে৷ ফলে এটি বাংলাদেশের জন্য ভাবনার বিষয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়ায় কিছু মাদ্রাসা আছে যা সৌদি সহায়তায় পরিচালিত হয়৷ ঐ সব মাদ্রাসার একটিতে অভিযান চালিয়ে তিন রোহিঙ্গা জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের খবরও আছে৷ খবর আছে সেই সব মাদ্রাসায় বৈঠকেরও৷''

Noor Khan - MP3-Stereo

তিনি আরো বলেন, ‘‘সৌদি আরব ভিত্তিক রোহিঙ্গারা এই জঙ্গি গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে এবং অর্থায়ন করছে৷''

আব্দুর রশীদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের কোনোভাবেই এই জঙ্গিদের প্রতি নমনীয় ভাব দেখানোর সুযোগ নেই৷ প্রধানমন্ত্রী নিজেও সংসদে বলেছেন কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না৷''

মানবাধিকার নেতা এবং জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের এখন উচিত হবে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে চাপ আরও জোরদার করা৷ কারণ এই নির্যাতনকে জঙ্গিরা সহানুভূতি পাওয়ার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে৷ বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারের ওই জঙ্গি গোষ্ঠী কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে৷''

নূর খান বলেন, ‘‘খেয়াল রাখতে হবে জঙ্গিদের যেমন প্রতিরোধ করতে হবে, তেমনি জঙ্গি দমন বা প্রতিরোধের নামে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই, যা মিয়ানমার সরকার করছে৷''

Abdur Rashid - MP3-Stereo

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সোমবার বলেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুটপাটের যে অভিযোগ তা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের' শামিল হতে পারে৷

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে৷ এর মধ্য দিয়ে সেখানে ‘মানবিক বিপর্যয়' তৈরি হয়েছে৷ সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা বিষয়ক পরিচালক রাফেন্দি ডিজামিন বলেন, ‘‘মিয়ানমারে সেনাবাহিনী বেসামরিক রোহিঙ্গাদেরকে নির্মম ও নিয়মিত সহিংসতার লক্ষ্যে পরিণত করেছে৷''

এর আগে জাতিসংঘও একই অভিযোগ তুলেছিল৷ মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ করেছিল জাতিসংঘ৷ তাই বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মিয়ানমারের নতুন জঙ্গি গোষ্ঠীর বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে৷ এখানে বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত৷ সহজ না হলেও বাংলাদেশের এ নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও কাজের পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দেয়া উচিত বলে মনে করেন নূর খান৷

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে নতুন এই জঙ্গি গোষ্ঠী কি সত্যিই আর তৎপরতা বিস্তৃত করতে পারবে না? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য