মিয়ানমারের জঙ্গলে পালিয়ে থাকা এক রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার
১০ ডিসেম্বর ২০১৬মিয়ানমারের মংডুর চালিপাড়াং এলাকায় বন আর টিলার মাঝে লুকিয়ে আছেন নূর মোহাম্মদ৷ বাংলাদেশের একটি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে তিনি কথা বলেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷ তিনি জানান, ‘‘মংডুর এলাকার বন আর টিলার মধ্যে তারা কয়েকজন লুকিয়ে আছেন৷ তাদের বড়িও ওই এলাকায়৷ গত অক্টোবরে তাদের এলাকায় হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়৷ হেলিকপ্টার থেকেও হামলা চালানো হয়৷ ওই হামলায় অনেক লোক মারা গেছে৷ আর কেউ কেউ পালিয়ে বাঁচতে পেরেছেন৷''
তিনি জানান, হামলাকারীরা নারীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে৷ অনেককে ধরে নিয়ে গেছে৷
এখন পরিস্থিতি কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যখন মিলিটারী থাকেনা তখন আমরা গ্রামে যাই৷ সৌরবিদ্যুতে, ব্যাটারির মাধ্যমে মোবাইল চার্জ দিয়ে ফিরে আসি৷ আমরা কয়েকজন মিলে মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবসাও করতাম৷ কেউ কেউ আছেন জীবনের ঝূঁকি নিয়ে৷ আমরা মাঝে মাঝে খাবারের খোঁজেও যাই৷ তবে আবার বনে ফিরে আসি৷''
এভাবে বাঁচা সম্ভব? প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘খাবার নেই, পানি নেই৷ তিনদিনও না খেয়ে থেকেছি৷ তারপরও বাঁচার চেষ্টা করছি৷ আপনারা যদি পারেন আমাদেও জন্য কিছু করেন৷''
নূর মোহাম্মদ জানান, ‘আমাদের গ্রামে সাত হাজারের মত বাসিন্দা, দেড় হাজারের মত পরিবার৷ তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে৷ কোনো ঘর-বাড়িই আর অক্ষত নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমার ছয় বোন, বাবা-মা নেই৷ দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছি৷ চারবোন হামলার দিন আমার সঙ্গে বাড়িতে ছিলো৷ দুই বোন পালিয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং গেছে বলে জানতে পেরেছি৷ বাকি দুই বোন কোথায় আছে জানিনা৷''
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পনিগুলোর নেটওয়ার্ক কাজ করে এবং ওইসব এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানির সিম ব্যবহার হয়৷ নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ডয়চে ভেলে'র ঢাকা প্রতিনিধির চার দফা কথা হয়েছে৷ তবে তাঁকে সব সময় মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি৷ মাঝে মাঝে পাওয়া গেছে৷ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমি বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসার চেষ্টা করছি৷ ওখানে আমার আত্মীয়-স্বজন আছে৷ কিন্তু আসতে পারবো কিনা জানিনা৷''
এদিকে জাতিসংঘের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ‘‘গত ছয় সপ্তাহে ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে৷ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, ৯ অক্টোবর থেকে রাখাইনে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-অভিযানে অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন৷ এছাড়া ঘর হারিয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ৷ সহিংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গরা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে আসছেন৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন মন্তব্যে৷