সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
৩০ অক্টোবর ২০১২মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল গত জুনে৷ এক বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণের ঘটনার জেরে শুরু হওয়া দাঙ্গায় তখন শতাধিক নিহত এবং অসংখ্য মানুষ গৃহহারা হয়৷ মুসলিম রোহিঙ্গা এবং বৌদ্ধদের মধ্যে দ্বিতীয় দফা দাঙ্গা শুরু হয় কয়েকদিন আগে৷ তাতে এ পর্যন্ত ৮৮ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮০ জন৷ মিয়ানমারের এক সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে৷
রোববার পাউকতাও শহরে শ'তিনেক বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয় বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সরকারি কর্মকর্তা জানান৷ সোমবারও মিয়ানমারে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ তবে মৃতদের সকলেই ক'দিন আগের দাঙ্গায় আহত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা-বৌদ্ধদের দাঙ্গা নতুন কিছু নয়৷ সে দেশে রোহিঙ্গাদের মনে করা হয় অবৈধ অভিবাসি৷ লেখাপড়া, চাকরি এবং আরো কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের অধিকার সীমাবদ্ধ৷ দাঙ্গা বাঁধলেও রোহিঙ্গারা পড়েন অসহায় অবস্থায়৷ শনিবার উপগ্রহ থেকে তোলা কিছু ছবি প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটির তোলা ছবিগুলোতে ফুটে উঠেছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহ চিত্র৷ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কিয়াকপু অঞ্চলে চালানো ধ্বংসযজ্ঞের ছবি দেখে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে ‘‘ব্যাপক ধ্বংসলীলা'' হিসেবে বর্ণনা করেছে৷
গৃহহারা রোহিঙ্গাদের বর্ণনাতেও উঠে আসছে ভয়াবহ চিত্র৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আশরা বানু বলেছেন, ‘‘ওরা বলেছিল আমাদের ঘরে থাকতে৷ পরে ওরাই এসে ঘরে আগুন দিয়ে দেয়৷ আমরা যখন পালাচ্ছি, তখন রাখাইনরা আর পুলিশ পেছন থেকে গুলি করছিল৷''
জাতিসংঘ বলছে সাম্প্রতিক দাঙ্গায় মিয়ানমারে এ পর্যন্ত গৃহহারা হয়েছেন ২৮ হাজার মানুষ৷ তবে সংস্থার মিয়ানমারের আবাসন এবং মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়ক অশোক নিগম সোমবার বলেছেন, নৌকায় চড়ে যাঁরা পালিয়ে গেছেন তাঁদের এ হিসেবের আওতায় আনা যায়নি বলে সংখ্যাটা আরো বেশি হওয়াই স্বাভাবিক৷
ব্রিটেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু করা দরকার বলে মনে করছে৷ সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বলেন, ‘‘রাখাইন রাজ্য থেকে যে সহিংসতার খবর আসছে তাতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ সাম্প্রতিক হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে৷ অবিলম্বে তাঁদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত৷ যুক্তরাজ্য আবারও সব পক্ষের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে৷ ওই অঞ্চলে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সে দেশের সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান – আপনারা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করুন৷''
বার্তা সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারে শনিবারের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত৷ কিন্তু দু'সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া দাঙ্গার কারণে অনেক মানুষ এখনো গৃহহারা৷ জুন মাসের মতো এবারের দাঙ্গার পরও উপদ্রুত এলাকা থেকে শত শত মানুষ নৌকায় চড়ে আশ্রয় নিয়েছে রাখাইন প্রদেশের সিতওয়েতে৷ স্থানীয় প্রশাসন এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায়৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে বলছিলেন, ‘‘হাজার হাজার লোক যে এভাবে চলে আসছে, তা কিন্তু শহরের নিরাপত্তার জন্য ভালো নয়৷ আমরা এখানে আর কোনো হানাহানি দেখতে চাইনা৷ তাই গৃহহারাদের অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেয়া উচিত৷''
এসিবি/ডিজি (এএফপি,এপি, রয়টার্স)