মিষ্টি কি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে?
৮ মে ২০১৮ডয়চে ভেলে : আপনারা কী কী দিয়ে মিষ্টি তৈরি করেন?
রাজকুমার ঘোষ: মিষ্টির উপাদানের বড় অংশটাই হলো দুধ৷ গরুর দুধ আর চিনি৷ এটা দিয়েই মূলত মিষ্টি তৈরি হয়৷ এর বাইরে সামান্য একটু ময়দা ব্যবহার করা হয়৷
মিষ্টির স্বাদ বাড়াতে কি এর বাইরে কিছু ব্যবহার করা হয়?
মিষ্টি তৈরির সময় যদি চিনির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয় আর ছানার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়, তাহলে মিষ্টির স্বাদ বেড়ে যায়৷ এছাড়া যেসব মিষ্টি শুধু চিনির শিরা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বা চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, সেসব মিষ্টির কোয়ালিটি একটু কম থাকে৷ দুধ দিয়ে শুধু ছানা তৈরি করা হয় না, বিভিন্ন ধরনের ক্ষিরসা তৈরি করা হয়৷ এই ক্ষিরসা আর ছানার সংমিশ্রণে সুস্বাদু মিষ্টি তৈরি করা হয়৷
মিষ্টির কারিগরদের কি কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?
আমরা তো আসলে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গা থেকে মিষ্টি সংগ্রহ করে থাকি৷ ওইসব জায়গা থেকে আমরা কারিগরদের নিয়ে আসি৷ তাঁদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি, কীভাবে তাঁরা মিষ্টিগুলো বানিয়েছেন৷ আমাদের কারিগররা তাঁদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন৷ আসলে ভালো মিষ্টি তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ অবশ্যই প্রয়োজন৷
মিষ্টিতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আছে এমন উপাদান ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ আছে৷ আপনি কী বলেন?
শুধু মিষ্টি না, চিনিযুক্ত খাবার সবার জন্যই ক্ষতিকর৷ এতে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়৷ শরীরের ওজন বেড়ে যায়৷ এর কিন্তু উপকারিতাও আছে৷ আসলে মিষ্টির মূল উপাদান ছানা৷ এই ছানা হয় গরুর দুধ থেকে৷ আমরা ছানা তৈরির জন্য দুধ সংগ্রহ করি একেবারেই গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে৷ কৃষকরা সেখান থেকে দুধ সংগ্রহ করে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়৷ আমাদের মিষ্টি তৈরির যে ফর্মুলা, সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না৷ যাঁরা অনৈতিকভাবে ব্যবসা করেন, তাঁরা কী কারণে করেন, আমি জানি না৷
চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু দুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরি করলে একদিনের বেশি ভালো থাকার কথা নয়৷ কিন্তু আপনাদের তৈরি মিষ্টি কয়েকদিন থাকলেও তো নষ্ট হচ্ছে না...
আমরা যেসব মিষ্টি তৈরি করি এর মধ্যে অনেক মিষ্টি আছে যা একদিন নয়, ৬ ঘণ্টাও বাইরে রাখলে নষ্ট হয়ে যায়৷ কারণ, যেসব মিষ্টিতে মিষ্টির পরিমাণ বা চিনি একদমই কম সেগুলো বেশি সময় রাখা যায় না৷ আর যেসব মিষ্টিতে চিনির পরিমাণ বেশি সেগুলো বেশি সময় রাখলেও নষ্ট হবে না৷ আমরা ওই মিষ্টিগুলো বিক্রির সময় ক্রেতাদের বলে দেই যে, ওই মিষ্টিটা এসি গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে বা দ্রুত বাসায় নিয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে৷ তা না হলে ৬ ঘণ্টা পরই নষ্ট হয়ে যাবে৷
মিষ্টি তৈরিতে কি তাহলে কোনো রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় না?
কোনো রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় না৷ তবে যদি কোনো মিষ্টি আপনি একমাস রাখতে চান, তাহলে কিছু রাসায়নিকের ব্যবহার করতে হবে৷ সেটা অবশ্যই স্বাস্থ্যকর৷ ভারতের হলদিরাম বিখ্যাত মিষ্টি তৈরি করছে৷ তারা সারা পৃথিবীতেই মিষ্টি সরবরাহ করে৷ তারা ওই ধরনের কিছু কেমিকেল হয়ত ব্যবহার করে থাকে৷ তা না হলে এত দূর-দূরান্তে মিষ্টি পাঠানো সম্ভব হতো না৷
মিষ্টিতে কিফরমালিনের ব্যবহার হয়?
আমি কখনও শুনিনি৷ ফরমালিন নিয়ে তো আমরা বিশাল স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি৷ আমাদের ফলমূলে ফরমালিন ব্যবহার হয়৷ দুধে এটার ব্যবহার আমার জানা মতে হয় না৷
দেশে কত প্রকারের মিষ্টি আছে? এ বিষয়ে কিছু জানেন?
সারাদেশে ৪০ থেকে ৫০ ধরনের মিষ্টি তৈরি হয়ে থাকে৷
বছরের কোন সময়ে মিষ্টি বেশি বিক্রি হয়?
বিশেষ করে উৎসবের সময় মিষ্টি বেশি বিক্রি হয়৷ ঈদের সময়, পহেলা বৈশাখের সময় বা পূজা-পার্বণের সময়ও মিষ্টি বেশি বিক্রি হয়৷ আবার বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে তখনও মিষ্টি বেশি কেনে মানুষ৷ সব মিলিয়ে কোনো উৎসব ঘিরে মিষ্টি বিক্রি বেশি হয়৷ সবচেয়ে বেশি হয় ঈদ আর পহেলা বৈশাখে৷
মিষ্টি তৈরিতে নারীদের অংশগ্রহণ কেমন?
দেখেন মিষ্টি যাঁরা তৈরি করেন, তাঁদের বলা হয় ময়রা৷ আগে হিন্দু ময়রারাই সব মিষ্টি তৈরি করতেন৷ এখন অনেক ব্যবসায়ী এর মধ্যে ঢুকে পড়েছেন৷ ময়রাদের আগে মিষ্টির দোকান ছিল৷ সেখানে পরিবারের নারীদের সঙ্গে নিয়েই তাঁরা মিষ্টি তৈরি করতেন৷ এখন বাণিজ্যিকভাবে যে মিষ্টি তৈরি হচ্ছে, সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ তেমন নেই৷ তবে আমার ইচ্ছে আছে নারীদের এই কাজে নিয়ে আসার৷ তাঁদের একটা কর্মসংস্থানও তাতে হবে৷
মিষ্টি বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে, না কমেছে?
মিষ্টি বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে, আবার কমেছেও৷ দেশে মানুষ তো বাড়ছে৷ ফলে বিক্রি সেভাবে কমছে না৷ আগে মানুষের এত রোগ ছিল না৷ ফলে তারা মিষ্টি খেতো৷ এখন রোগ-ব্যাধি বেড়েছে৷ ফলে তাঁরা মিষ্টি কম খাচ্ছেন৷ আবার দেশে মানুষ বাড়ায় মিষ্টির চাহিদাও বাড়ছে৷ এখন দেখেন কোনো বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে বা কোনো উৎসব হচ্ছে, তখন তাঁরা কিন্তু মিষ্টি সিলেক্ট করে৷ কেউ খাক আর না খাক৷ বাংলাদেশে মিষ্টির এখনো একটা অবস্থান আছে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷