মিড ডে মিলেও দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গে: কেন্দ্রীয় রিপোর্ট
১৩ এপ্রিল ২০২৩স্কুল পড়ুয়াদের জন্য খাবার পরিবেশন করা হয় মিড ডে মিলে। পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টির ঘাটতি মেটানোর লক্ষ্যে চালু প্রকল্পটির নাম পিএম পোষণ। এই প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রের জয়েন্ট রিভিউ কমিশন (জেআরএম) বা যৌথ পর্যবেক্ষক দল। এই দলে রাজ্যের প্রতিনিধিও ছিলেন।
জেআরএম-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি প্লেট অতিরিক্ত মিড ডে মিল পরিবেশনের রিপোর্ট করা হয়েছে। রাজ্যের তথ্য, এই ছয় মাসে ১৪০ কোটি ২৫ লক্ষ প্লেট খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল।
কিন্তু রিপোর্টে বলা হয়েছে, জেলাগুলি থেকে রাজ্য সরকারকে যে তথ্য দেয়া হয়, তার সঙ্গে এই হিসেব মিলছে না। জেলাগুলির রিপোর্টে ওই সময়ে পরিবেশিত প্লেটের সংখ্যা ছিল ১২৪ কোটি ২২ লক্ষ। এই ১৬ কোটি প্লেটের মূল্য বাবদ ১০০ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে জেআরএম-এর দাবি।
রাজ্য সরকার এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বক্তব্য, "রাজ্যের প্রতিনিধিকে না জানিয়ে রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। আমাদের প্ৰতিনিধি তাতে সই করেননি। আমরা দেখতে পাইনি যে কী রিপোর্ট জমা পড়েছে।" তার প্রশ্ন, "পশ্চিমবঙ্গের রিপোর্ট কোথায় তৈরি করা হয়েছে, কোনো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দপ্তরে? নাকি কমিটির কারো বাড়িতে বসে? তাতে কারা সই করলেন?"
জেআরএম-এ রাজ্যের প্রতিনিধি ছিলেন মিড ডে মিল প্রকল্পের অধিকর্তা তপন অধিকারী। অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেন, "জেলার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি রাজ্যের ত্রৈমাসিক রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই ও নভেম্বরে রিপোর্ট গিয়েছিল। তাতে বাড়তি খাবার পরিবেশনের কথা নেই। তা হলে কেন এটা লেখা, সেটা আমরা জানি না।"
হিসেবে গরমিল ছাড়াও একটি গুরুতর বিষয় সামনে এসেছে রিপোর্টে। অভিযোগ, গত বছর মার্চে রামপুরহাট গণহত্যায় স্বজনহারা গ্রামবাসীকে ক্ষতিপূরণ দিতে মিড ডে মিলের টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল বগটুই গ্রামে গিয়ে চেক বিতরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও-র তত্ত্বাবধানে যে চেকগুলি দেয়া হয়, তার অর্থ এসেছে পিএম পোষণ যোজনার তহবিল থেকে। এই বিষয়ে নিয়ে তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডা. সুভাষ সরকার। তার মন্তব্য, "বগটুইয়ের ক্ষতিপূরণের জন্য নেয়া টাকা রাজ্য সরকার পোষণ তহবিলে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছে। কিন্তু তার সপক্ষে কোনো নথি দেখাতে পারেনি।"
সরকারি স্তরে এই তরজার ছবি রাজনীতিতেও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন, "ছয় মাসে এই অনিয়ম হলে তৃণমূলের ১২ বছরের শাসনে মিড ডে মিলে দুর্নীতির অঙ্ক কত?" তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের ভাষায় এই রিপোর্ট 'কুৎসাপত্র'। প্রশ্ন উঠছে, শিশুদের খাবারও কেন রাজনৈতিক চাপানউতোরের বিষয় হয়ে উঠল?
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি অতীতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিল। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোভিডের সময় দুই বছর স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। সেই সময় ঠিকঠাক বরাদ্দ করা হয়নি। তখনো অনিয়ম হয়েছে।"
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে শাসক দল। মিড ডে মিল কি তাদের চিন্তা বাড়ালো? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক, অধ্যাপক রাজাগোপাল ধরচৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ছেলেমেয়েরা খাবার না পেলে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়বেন। তবে এখানে খাবারের অভাব নয়, হিসেবে কারচুপির অভিযোগ। পঞ্চায়েত ভোটে প্রভাব পড়ে কি না, দেখতে হবে।"