মায়ের মৃতদেহের সামনে অসহায় শিশু
২৮ মে ২০২০একের পর এক ট্রেন, একের পর এক লাশ। মাসের পর মাস অপেক্ষারত পরিবার প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে নিচ্ছেন আরও এক পরিযায়ী শ্রমিকের নিথর দেহ। এ দৃশ্যে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষ। কিছুতেই আর কিছু এসে যায় না। যদি না ওই শিশুটি নাড়িয়ে দিতো। তার এক মিনিটের ভিডিও ঝাঁকিয়ে দিতো গোটা ভারতবর্ষকে।
গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে বিহারে নিজের গ্রামে ফিরছিলেন ২৩ বছরের এক পরিযায়ী শ্রমিক। সঙ্গে ছিল তাঁর কোলের শিশু। কাজ চলে গিয়েছে বহু দিন। লকডাউনে আটকে থাকাকালীন প্রতিদিন খাবার জোটেনি। একবেলা নিজে খেয়েছেন, একবেলা শিশুকে খাইয়েছেন। এমনই পরিস্থিতিতে শোনা যায়, সরকার 'শ্রমিক ট্রেন' চালাবে। ফেরা যাবে বাড়ি। গুজরাটের প্রায় ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় শিশুকে কোলে নিয়ে স্টেশনে পৌঁছেছিলেন ওই নারী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে থেকেছেন ট্রেনে ওঠার জন্য। নামার কথা ছিল মুজফফরপুর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রায় দুই দিনের ট্রেন যাত্রায় খাবার মেলেনি, মেলেনি খাওয়ার জল। দিনের বেলা ট্রেনের জানলা দিয়ে গরম লু ঢুকেছে কামরায়। লোহার গাড়ি আরও গরম হয়েছে। মুজফফরপুর আসার আগেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন ওই নারী। মুজফফরপুরে ওই অবস্থাতেই নামিয়ে দেওয়া হয় ওই তাঁকে। স্টেশনেই তাঁকে শুইয়ে দিয়ে শরীর ঢেকে দেওয়া হয় কাপড়ে। কারণ আর চৈতন্য ফেরেনি তাঁর। কোলের শিশু কিছুই বুঝতে পারেনি। মায়ের শরীরের ওপর দেওয়া কাপড় নিয়ে সে খেলেছে। বার বার ডেকেছে মাকে। মর্মান্তিক এই দৃশ্য ভাইরাল হয়ে গিয়েছে দেশ জুড়ে।
ওই শিশুটির একটি ভিডিও বাস্তবকে সামনে নিয়ে এসেছে। নইলে আমরা জানতেই পারতাম না যে, প্রতিদিন শ্রমিক এক্সপ্রেস থেকে কোনও না কোনও স্টেশনে নামছে পরিযায়ী শ্রমিকের লাশ। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারেই ১০ জন শ্রমিকের মৃতদেহ নামানো হয়েছে। প্রায় সকলেই গরমে, না খেতে পেয়ে, জলের অভাবে মারা গিয়েছেন।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতির কথা সকলেই জানেন। কিন্তু কেউ কোনও কথা বলছেন না। ঠিক যে ভাবে বার বার এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে গোটা লকডাউনের সময় জুড়ে পায়ে হেঁটে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা এবং রাস্তায় মারা যাওয়ার বিষয়টি। যথারীতি রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, মুজফফরপুরের নারী আগেই অসুস্থ ছিলেন। সে কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বিরোধীরা ক্ষতিপূরণ দিতে শুরু করেছে। রাজনীতি চলছে রাজনীতির মতোই।
শুধু ওই শিশুটিই বুঝতে পারলো না খেলতে খেলতে হারিয়ে গেল তার মা।