1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাস্ক, লকডাউনকে যেভাবে দেখেছেন গ্রামের মানুষ

রাহাত রাফি
১৬ আগস্ট ২০২০

লকডাউন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, ফেস মাস্ক ইংরেজি এ শব্দগুলো শহুরে শিক্ষিত মানুষদের কাছে বেশি বোধগম্য৷ দেশব্যাপী যখন অঘোষিত লকডাউন আরোপ করা হয় তখন এ বিষয়গুলো গ্রামের মানুষের কাছে কি কোনো অর্থ তৈরি করেছিল?

https://p.dw.com/p/3h2B3
Bangladesch | Islamisches Opferfest  | Eid-ul Azha
ছবি: bdnews24.com

উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা৷ গলির চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, বাস কিংবা রেল স্টেশন- সবখানেই মানুষের আলোচনা ঘুরেফিরে করোনা ভাইরাস নিয়ে৷ সামান্য ঠান্ডা, সর্দি হলেই কেউ কেউ যেন সন্দেহ করছে৷ করোনা ভাইরাসের প্রথমদিকে অনেকটা এমেনই ছিল রাজধানীর চিত্র৷

কিছুদিন পর শুরু হলো লকডাউন৷ পরবর্তী দুমাস প্রায় চার দেয়ালে বন্দি জীবন কাটায় ঢাকার বাসিন্দারা৷

কিন্তু কেমন ছিল গ্রামের মানুষেরা? কতটাই বা তারা বুঝতে পেরেছিল মাস্ক ব্যবহার আর সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের গুরুত্ব?

আমার সুযোগ হয়েছিল ‘লকডাউনের’ পুরো সময়টা গ্রামে কাটানোর৷ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে একটি গবেষণার কাজে বাংলাদেশে যাই৷ প্রস্তুতি ছিল মার্চের ৩০ তারিখে জার্মানি ফিরবো৷ কিন্তু মার্চের শেষ সপ্তাহে লকডাউন আরোপ হওয়ায় দেশের সাথে সব আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, আটকে যায় আমার মতো অনেকেই৷ সেই আটকে যাওয়া এতে দীর্ঘায়িত হবে প্রথমে বুঝতে পারিনি৷ লকডাউন শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন গ্রামে চলে যাই, একটু বাড়তি নিরাপত্তার আশায়৷ আর সেখানেই কাটে আমার পরবর্তী চার মাস৷

খুব আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করছিলাম করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ আশঙ্কাকে কীভাবে নেয় গ্রামের মানুষেরা৷ গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্য সচেতনতা, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার মূলমন্ত্র, তুলনামূলক কম বলে ধরা হয়ে থাকে৷

মুখে মুখে মাস্কের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছিল আমরা বিশেষ কোন একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি৷ এমনকি বাড়ি বাড়ি ঘুরে গৃহস্থালিসামগ্রী বিক্রেতাদের ঝুড়িতেও দেখা গেছে এ পণ্যটি৷ বাজারগুলোতে দেখলাম দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা চলছে, তবে সবসময় যে সফল হয়েছে তা বলা যাবে না৷

সারাদিন সরব থাকা হাইওয়েগুলোতে ছিল শুনশান নীরবতা৷ নেই কোনো যান, মানুষের চলাচলও সীমিত৷ যেমনটা ভেবেছিলাম লকডাউন হয়তো শহরকেন্দ্রিকই হবে, সে ধারণাটায় কিছুটা হলেও ছেদ পড়লো আমার৷ দেখলাম, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা৷ পাড়ার ছেলেদের খেলার মাঠ থেকে গ্রামের বাজার পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করছে তারা৷ গ্রামে এমন পরিস্থিতি আমি আগে কখনো দেখিনি৷ চলাফেরা সীমিত করে দেওয়ার এ সরকারি সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছে অনেকেই, সহযোগিতাও করতে দেখেছি কাউকে কাউকে৷

এর উল্টো চিত্রও বেশ পরিষ্কার ছিল৷ ফেসমাস্ক কেন ব্যবহার করতে হবে এর ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় এমন অনেককেই পেয়েছি৷ এটা পশ্চিমাদের আবিষ্কার, বলেছেন কেউ কেউ৷ করোনা যখন বাংলাদেশে ধরা পড়ে, তখন গ্রীষ্মের শুরু৷ তীব্র গরমে তাই ফেসমাস্ক পরাকে বাড়তি চাপ হিসেবেই দেখেন তারা৷ দেখেছি সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং নিয়েও মানুষের বিভ্রান্তি৷

একটি বিষয়কে যদি পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা না করে চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এর অর্থ মানুষ নিজের মতো করে দাঁড় করাবে ও নিজ জীবনে আরোপ করবে, এটাই স্বাভাবিক৷ আর তাই উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক যোগযোগবিদ্যা বলছে, যোগাযোগের সফল সূত্র হলো যাকে আপনি বলছেন তার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ব্যাখ্যা করা৷

করোনা ভাইরাসের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়গুলো সমাজে খুব একটা নতুন নয়৷ যেমন ধরুন, ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে শহরে কিংবা গ্রামে অনেকেই মাস্ক পরে থাকেন৷ নিয়মিত হাত ধোয়া ও পরিষ্কার থাকাও অনেকেরই স্বাভাবিক জীবনের অংশ৷ এ বিষয়গুলোকে যদি তাদেরকে তাদের মতো করে বুঝানো যেতো, তাহলে হয়তো আরো ভালো ফল পেতাম আমরা৷

 Rahat Rafe - Student DW Academy
রাহাত রাফি, ডয়চে ভেলেছবি: DW/S. Islam

লকডাউনের প্রথম শিকার ছিল পরিবহণ খাত৷ এ খাতে শহরে কর্মরত প্রায় সবায়ই উপার্জনহীন অবস্থায় গ্রামে ফিরে এসেছে৷ গ্রামে ফিরেছে শহরেরে শ্রমিক শ্রেণি৷ যা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে গ্রামের সমাজে৷ 

এদিকে দীর্ঘ সময় আটকে থেকে বন্ধ হয়ে গেছে রুটি রুজি৷ সরকারি সহয়তা যতটা পাচ্ছিল তা যথেষ্ট নয়৷ এক পর্যায়ে তারা আর পাত্তা দিতে চাইলো না স্বাস্থ্য বিধিগুলোকে, ভেঙে পড়ল লকডাউন আর সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর সব চর্চা৷

শুধু বাংলাদেশ নয়, করোনা ভাইরাস থামিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকেই৷ গ্রামের মানুষের কাছে নতুন এ ধারণাটি তাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে ভালোই৷ সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচারে চিরাচারিত যোগাযোগ প্রথাকে বদলে দিয়েছে৷ হয়তো আমরা আবারো আগের অবস্থায় ফিরে যাবো, কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিশে থাকবে লকডাউন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, ফেস মাস্কের ধারণাগুলো৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান