মাদুরোর সময় শেষ হয়ে আসছে
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ভেনেজুয়েলার স্বঘোষিত অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট গুয়াইদো জানিয়েছেন, তিনি ‘দখলদারিত্বের অবসান, মধ্যবর্তী সরকার গঠন এবং সুষ্ঠু ও স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চান৷'
ডয়চে ভেলের অস্কার শেঙ্কলারকে গুয়াইদো বলেন, এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাই তাঁর লক্ষ্য৷ ভেনেজুয়েলার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে দেখতে পান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে কে কে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করেন সেটা দেখা যাবে৷''
নিরপেক্ষ নির্বাচন অবশ্য আপাতদৃষ্টিতে বেশ দূরের বিষয়ই মনে হচ্ছে৷ ৩৫ বছরের গুয়াইদো এবং নিকোলাস মাদুরোর মধ্যে চলা ক্ষমতার লড়াই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে৷
অনেকেই আশংকা করছেন, বিরোধীদের এখনকার চাঙ্গা ভাব বেশিদিন থাকবে না এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও একসময় ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না দেখে অপেক্ষাকৃত অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে৷ গুয়াইদো অবশ্য লড়াইয়ে তাঁর জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী৷
তিনি বলছেন, ‘‘নিকোলাস মাদুরোর সময় শেষ হয়ে আসছে৷ এই সরকারের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, কোনো পরিকল্পনা নেই, জনগণের সমর্থনও নেই৷ এই আন্দোলন ক্রমশই জোরালো হচ্ছে এবং অবশ্যম্ভাবী এই ভবিষ্যৎ থেকে আমরাপিছু হটবো না৷''
অবরোধ সত্ত্বেও আসছে সহায়তা
মাদুরো সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিলেওকিছু খাদ্য সহায়তা এসে পৌঁছেছে ভেনেজুয়েলায়৷ কোন পথে কীভাবে এসব ত্রাণ আসছে, তা জানাননি গুয়াইদো৷ তবে তিনি বলেন, ‘‘সাহায্য পৌঁছে দিয়ে কিছু মানুষের জীবন রক্ষা করতে পেরেছি আমরা৷ অপুষ্টিতে ভোগা গর্ভবতী মায়েদের সাড়ে চার হাজার ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কিছু ওষুধ দিয়েছি৷''
মাদুরো এসব সহায়তাকে ‘রাজনৈতিক নাটক' এবং মার্কিন আক্রমণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করলেও, গুয়াইদো বলছেন, অবরোধের মধ্যেও ত্রাণ পৌঁছে দেয়া মাদুরোর বিরুদ্ধে ‘ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ' বিজয়৷
রাজধানী কারাকাসে এক সভায় গুয়াইদো ঘোষণা দেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি বড় আকেরের ত্রাণ এসে পৌঁছাবে৷ জনতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘‘ত্রাণ পৌঁছানের বিষয়টি নিশ্চিত, কারণ ততোদিনে দখলদারের (মাদুরো) সামনে ভেনেজুয়েলা ছেড়ে পালানো ছাড়া উপায় থাকবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘ত্রাণ না পৌঁছালে অন্তত তিন লাখ ভেনেজুয়েলান মারা যাবে৷ ২০ লাখ মানুষ এখন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে৷''
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যে ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ তিন সপ্তাহ আগে তিনি ‘শান্তিপূর্ণ' ক্ষমতা হস্তান্তর না হলে মাদুরোকে ‘পরিণাম' ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেন৷ মার্কিন সরকার সব ধরনের বিকল্পই চ্ন্তা করছে বলেও জানান ট্রাম্প৷
লাটিন অ্যামেরিকার রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর ইতিহাস দীর্ঘদিনের৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনেনি৷
এদিকে মাদুরো আবারো অভিযোগ করেছেন, গুয়াইদো ভেনেজুয়েলায় একটি ‘পুতুল সরকার' প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন৷
এর জবাবে গুয়াইদো বলেন, ‘‘মাদুরোর কাছে বলার মতো খুব বেশি যুক্তি নেই৷ আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে নিজের সব সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে ভেনেজুয়েলা৷ দখলদারিত্বের অবসানে করণীয়ও ঠিক করবে দেশের জনগণ৷
সেনাবাহিনীকে বার্তা
গুয়াইদে বলছেন, এখনও তাঁর আশা, বিদেশি সহায়তা ছাড়াই ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে৷ এবং এজন্য দেশের সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি৷ গুয়াইদোর দাবি, ‘‘সৈনিকদের ৮০-৯০ শতাংশও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সাথে একমত৷'' সৈনিকরাও ‘পর্যাপ্ত বেতন পায় না, তাঁদের পরিবারও দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়' বলে মন্তব্য গুয়াইদোর৷
অলিভার পিপার/এডিকে