মশায় নাকাল ঢাকার নাগরিক
১২ মার্চ ২০২১কেমন আছে নগরবাসী? এ প্রশ্ন সামনে রেখে আজকাল আর কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই৷ অনলাইনভিত্তিক সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেই অনেকটা আঁচ করা যায় পরিস্থিতি৷ সম্প্রতি ঢাকা শহরে ফেসবুকে মশার যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরছেন অনেকেই৷ নগরের নিকেতনের বাসিন্দা লেখক-গবেষক আফসান চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘নিকেতনে ঘোষণা দিয়ে মশার ওষুধ দেয়া হলো, অনেক বেশি ওষুধ৷ মশা আগের মতোই৷ যে চিনিতে মিষ্টি নাই সেটা এক চামচ আর এক মণ একই৷’’
নগরপিতারা কামান দাগিয়ে মশা মারবেন- এ আশা নিয়ে নগরবাসী একেবারে বসে যে থাকে, তা কিন্তু নয়৷ ঘরের মশা তাড়াতে কেউ ব্যবহার করছে কয়েল, কেউবা অ্যারোসোল৷ এসব সহনীয় মাত্রার কীটনাশকে তৈরি হলেও অনেকেই এগুলোর গন্ধ সহ্য করতে পারে না৷ শুরু হয়ে যায় হাঁচি-কাঁশি৷ আবার বাংলাদেশে যে অনেক ব্র্যান্ডই রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহারের মাত্রা সীমা মানছে না, সেটাও উঠে এসেছে অনেক সময়৷
ঘরে ঘরে মশক নিধনে বর্তমানে কয়েল-অ্যারোসোলের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় রিচার্জেবল ব্যাট৷ বাসায় বসে মশা মারার ব্যাট চালাতেই ব্যস্ত থাকছে কেউ কেউ৷ মশক নিধনের সবরকম উপকরণের চাহিদা যে বেড়েছে, তা জানা যায় রাজধানীর বাজার ঘুরে৷ মিরপুরের বাসিন্দা ডেইজি আখতার জানালেন, তার বাসায় প্রতিদিন অ্যারোসোল দিতে হচ্ছে৷ সন্ধ্যা হলে জ্বালাতে হয় কয়েল৷ মশা মারার ব্যাটও রেখেছেন ঘরে৷ তার অভিযোগ, আগে একটা অ্যারোসোলেই মাস চলে যেতো৷ এখন প্রতি সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে৷
চলতি বছর ঢাকা শহরেমশা বেশি- এটা জানা গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে৷ তারা জানিয়েছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার মশার ঘনত্ব চার গুণ বেশি৷ তবে এগুলো এডিস মশা নয়৷ শুধুই কিউলেক্স মশা৷ এ থেকে হতে পারে ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ৷ তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, ঢাকা শহরে যে প্রজাতির কিউলেক্স আছে, সেগুলো থেকে ফাইলেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি কম৷ এ তথ্য এসেছে গবেষণা থেকেই৷
কিন্তু মশার কামড়ের চুলকানি কম যন্ত্রণার নয়৷ কানের কাছে ঘ্যানঘ্যানও অসহনীয়৷ আর এডিস মশা যদি চলে আসে, তবে তো ডেঙ্গু জ্বরের ভয়ে থাকতে হবে নগরবাসীকে৷ করোনাকালে প্রকোপ কম থাকলেও তার আগের বছর কিন্তু এডিসের যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে৷ ২০১৯ সালে শুধু ঢাকা শহরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ৷ এরমধ্যে মারা যায় শতাধিক৷ সেই সময়ে পরিবারের সদস্য আক্রান্ত হওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)-কে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম৷ তিনি অবশ্য জানালেন, এই নোটিশের মূল লক্ষ্য ছিল মশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো৷
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ নগর প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও মশা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না৷ এ বিষয়ে তানজিম আল ইসলাম বলেন, শুধু ঋতুভিত্তিক কাজ করলে হবে না৷ মশক নিধন কার্যক্রমে সারা বছর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া থাকতে হবে৷
অন্যদিকে ঢাকা শহরে এবার কিউলেক্স মশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনাবৃষ্টিও একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বৃষ্টি হলেই এ জাতীয় মশা কমে আসবে৷ তার আগে পর্যন্ত নর্দমা সচল রাখতে হবে৷ ডোবানালা রাখতে হবে পরিচ্ছন্ন৷ কারণ, নোংরা ও আবদ্ধ পানি কিউলেক্স মশা প্রজননের প্রধান স্থান৷ তাই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে মেয়র-কাউন্সিলরদের নজরদারি অনেক বেশি প্রয়োজন৷ তারা অবশ্য নগরবাসীকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ কখনো কখনো নাগরিক দায়িত্বশীলতার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন কঠোর কায়দায়৷ সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম রাস্তায় পড়ে থাকা বাসাবাড়ির বর্জ্য সংশ্লিষ্ট ভবনে ফেরত পাঠান৷ তারপর বলেন, যারা রাস্তায় ময়লা ফেলে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, উত্তর সিটি সেই ময়লা তাদের বাড়িতে ফেলে আসবে৷
নগর পরিচ্ছন্ন হলে, বৃষ্টি এলে কমে আসবে কিউলেক্স মশা৷ কিন্তু সেই সময়ে আবার ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ কারণ, জমে থাকা পরিচ্ছন্ন পানি হচ্ছে এডিস মশার প্রজননস্থল৷ সেই মৌসুম থেকে খুব বেশি দূরে নেই ঢাকা শহর৷ তাই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিতে হবে এখনি৷ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এডিস মশা৷ এর উপায় জানিয়ে দিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার৷ তার মতে, এডিস মশা জন্মায় পাত্রে জমে থাকা পানিতে৷ এই মশা নিয়ন্ত্রনে বৃষ্টির পূর্বেই অকেজো পাত্র সরানোর তাগিদ দিলেন তিনি৷