‘মশা প্রাকৃতিক কারণে বাড়ছে, বাইরে থেকেও আসছে’
১২ মার্চ ২০২১ডয়চে ভেলে: এবার মশা মারার ক্র্যাশ প্রোগ্রামে নাকি নতুন কৌশল নিয়েছেন আপনারা? সেই কৌশলটা কী?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান: এবার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছি৷ আগে ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) ১০ টি অঞ্চলে আমরা একবারে একই দিনে অভিযান চালাতাম৷ এবার তা না করে এক অঞ্চলে একদিন করে আমরা সব জনবল ও ইকুইপমেন্ট দিয়ে কাজ করছি৷
তাতে লাভ কী হবে?
আমাদের কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন এটা সুইপিং অপারেশনের মতো হবে৷ প্রত্যেক অঞ্চল আলাদাভাবে করে আমরা শেষ পর্যন্ত যেখান থেকে শুরু করেছি সেখানে ফিরে আসবো৷ আমরা পুরো জনবল এক অঞ্চলে নিয়োজিত করে লার্ভ সাইড এবং অ্যাডাল্ট সাইড ধংস করবো৷ এতে সুফল পাবো বলে আশা করছি৷
ঢাকায় দুই সিটিতেই মশার ঘনত্ব চারগুণ বেড়েছে৷ আর আপনারা গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাস অ্যাডাল্টি সাইড করেননি৷ তাহলে কী ধরনের কাজ করেছেন?
যারা বলছেন চারগুণ বেড়েছে, তারা তাদের মতো করে বলছেন৷ আমরাও বলছি, মশা বেড়েছে৷ কিন্তু চারগুণ বেড়েছে- ওভাবে আমরা বলছি না৷ তবে মশা অবশ্যই বেড়েছে৷ আর আমরা গত ১০ মাস অ্যাডাল্টি সাইড করিনি, এটা ঠিক না৷ প্রতিদিন বিকেল বেলায় আমরা যে ফগিং করি, সেটা কিন্তু অ্যাডাল্ট মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য৷ এটা প্রতিদিনের জন্যই হচ্ছে৷ করোনার মধ্যেও এক বছরে আমরা ছয়টি চিরুনি অভিযান করেছি৷
‘নোভালুরণ’নামে একটি কীটনাশক প্রায় ৪৬ লাখ টাকা খরচ করে চার মাস আগে মশার প্রজননস্থলে ব্যবহার করেছিলেন৷ উদ্দেশ্য ছিল লার্ভা অবস্থায়ই মেরে ফেলা৷ লার্ভা তো সেই ওষুধে মরেনি বলে খবর প্রকাশ হয়েছে...
ওষুধটা কিন্তু কার্যকর৷ যারা বলছেন কাজ করেনি, তারা ধারণাপ্রসূত কথা বলছেন৷ আমাদের কীটতত্ত্ববিদরা ফিল্ডে প্রয়োগ করেছেন৷ আমরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেছি৷ আমরা শতভাগ কার্যকর পেয়েছি৷ তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকবে৷
মশার ওষুধে নাকি মশা মরছে না৷ আর মার্শাল কোম্পানির যে ওষুধ কিনেছিলেন তা কাজে আসছে না বলে বাতিল করেছেন...
অবশ্যই মশা মরছে৷ আর ওষুধগুলো যে শতভাগ কার্যকর- সে বিষয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত৷ আমাদের কমিটিতে জনপ্রতিনিধিসহ নানা সেক্টরের লোক আছেন৷ কীটতত্ত্ববিদ আছেন৷ তাদের সামনেই ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়৷ এরপর থেকে আমরা সাংবাদিকদের সামনেই এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করবো৷
আপনারা লার্ভা ও অ্যাডাল্ট মশা মারতে কী কৌশলে কাজ করেন?
লার্ভার জন্য স্প্রে করি৷ আর অ্যাডাল্ড মশা মারার জন্য ফগিং করি৷ আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি৷ তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, প্রাকৃতিক কারণে কোনো বছরে মশা বেশি হয়, কোনো বছরে কম হয়৷ এবার শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বড় বড় শহরে এবার মশা বেশি৷ শুধু বড় শহর নয়, সব এলকায়ই মশা বেশি৷
কোন প্রাকৃতিক কারণে এবার মশা বেশি?
আমার কাজকে আমি জাস্টিফাই করছি না৷ তবে আমিও মাননীয় মেয়র থেকে সব কর্মকর্তা এবং কর্মীরা শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এই মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য৷ কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়৷
সিটি কর্পোরেশনের মোবাইল কোর্ট কি লার্ভা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে?
পাঁচটি মোবাইল কোর্ট কাজ করছে৷ লার্ভা পেলে আমরা প্রতিদিনই কোনো প্রতিষ্ঠানকে বা বাড়ির মালিককে অথবা দোকান মালিককে জরিমানা করছি৷ আজও (বুধবার) আমরা জরিমানা করেছি৷ মিল্কভিটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান৷ সেখানে হাজার হাজার লার্ভা প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে৷ তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলা করেছি৷ জরিমানা করেছি৷
এবার এত মশা বাড়ার কারন কী?
একটা কারণ প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত৷ দ্বিতীয়ত, গত বছরের নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে বৃষ্টি হয়েছে৷ কিউলেক্স মশার সিজন নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল-মে পর্যন্ত৷ ওই সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে৷ মশা সৃষ্টির একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে৷ এছাড়া ওয়াসার যে খাল আছে, তাতে এহেন জিনিস নাই যে ফেলা হচ্ছে না৷ তাতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে৷ বক্স কালভার্টেরও একই অবস্থা৷
যখন বৃষ্টি হলো তখন আপনারা কি কাজ করেননি? কাজ করলে তো এত মশা হতো না...
আমরা অবশ্যই খেয়াল করেছি এবং আমাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত আছে৷ আরেকটি বিষয়, আমি যদি প্রতিদিনই স্পেশাল এফোর্ট দিই সেটাই নর্মাল এফোর্ট হয়ে যায়৷
মশক নিধন কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় নেই৷ তারা যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেই এলাকা চেনেন না৷ আবার ফগিং মেশিনে ওষুধ কম দেয়ার অভিযোগও আছে...
না, আমরা ফগিং মেশিনের কন্টেইনার ফুল করে দিচ্ছি৷ ওষুধ সাপ্লাই নাই এটা ভুল তথ্য৷
প্রত্যেক বছরই তো একই অবস্থা হয়৷ আপনারা কাজ করেন, মশা মরে না৷ এটা কি আপনারা মূল্যায়ন করেন? কেন এমন হয়?
আমরা মূল্যায়ন করি৷ আমাদের পরামর্শক আছেন, কীটতত্ত্ববিদ আছেন৷ তাদের সাথে আলোচনা করি৷ তাদের পরিকল্পনায়ই কাজ করি৷
মশা মারতে দুই সিটি কর্পোরেশনের বছরে ১১৭ কোটি টাকা বাজেট৷ এই বাজেট কি কম?
না, বাজেট কম নয়৷ আমি বজেটকে দায়ী করতে চাই না৷ আপনাদের আরো কিছু জিনিস বুঝতে হবে৷ যেমন, ঢাকার অনেকগুলো জায়গা আছে, যা ছিটমহলের মতো৷ যেমন বসুন্ধরা৷ পুরো বসুন্ধরা কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে নয়৷ কিন্তু সেখানে মশা জন্ম হচ্ছে৷ আবার এয়ারপোর্টের দায়িত্ব কিন্তু আমাদের নয়৷ আমরা তাদের মশা মারার মেশিন কিনে দিয়েছি৷ বলেছি, আপনারা মশা মারেন৷ আবার সিটি কর্পোরেশনের যেখানে শেষ, সেখানেও তো মশা হচ্ছে ৷ আমরা মারলাম, কিন্তু ওইসব জায়গা থেকে তো মশা উড়ে আসছে৷ সিটি কর্পোরেশনের বাইরে থেকে মশা আসছে৷ ওই মশা তো আমরা থামাতে পারছি না৷ কিন্তু আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই৷