1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মশা প্রাকৃতিক কারণে বাড়ছে, বাইরে থেকেও আসছে’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ মার্চ ২০২১

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান ঢাকায় মশা বেড়ে চলার বেশ কিছু কারণ এবং মশা কমানোয় তাদের উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন৷

https://p.dw.com/p/3qXlZ
মশার প্রজননক্ষেত্র
ছবি: DW/M.M.Rahman

ডয়চে ভেলেএবার মশা মারার ক্র্যাশ প্রোগ্রামে নাকি নতুন কৌশল নিয়েছেন আপনারা? সেই কৌশলটা কী?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোজোবায়দুর রহমান: এবার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছি৷ আগে ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) ১০ টি অঞ্চলে আমরা একবারে একই দিনে অভিযান চালাতাম৷ এবার তা না করে এক অঞ্চলে একদিন করে আমরা সব জনবল ও ইকুইপমেন্ট দিয়ে কাজ করছি৷

তাতে লাভ কী  হবে?

আমাদের কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন এটা সুইপিং অপারেশনের মতো হবে৷ প্রত্যেক অঞ্চল আলাদাভাবে করে আমরা শেষ পর্যন্ত যেখান থেকে শুরু করেছি সেখানে ফিরে আসবো৷ আমরা পুরো জনবল এক অঞ্চলে নিয়োজিত করে লার্ভ সাইড এবং অ্যাডাল্ট সাইড ধংস করবো৷ এতে সুফল পাবো বলে আশা করছি৷

ঢাকায় দুই সিটিতেই মশার ঘনত্ব চারগুণ বেড়েছে৷ আর আপনারা গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাস অ্যাডাল্টি সাইড করেননি৷ তাহলে কী ধরনের কাজ করেছেন?

যারা বলছেন চারগুণ বেড়েছে, তারা তাদের মতো করে বলছেন৷ আমরাও বলছি, মশা বেড়েছে৷ কিন্তু চারগুণ বেড়েছে- ওভাবে আমরা বলছি না৷ তবে মশা অবশ্যই বেড়েছে৷ আর আমরা গত ১০ মাস অ্যাডাল্টি সাইড করিনি, এটা ঠিক না৷ প্রতিদিন বিকেল বেলায় আমরা যে ফগিং করি, সেটা কিন্তু অ্যাডাল্ট মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য৷ এটা প্রতিদিনের জন্যই হচ্ছে৷ করোনার মধ্যেও এক বছরে আমরা ছয়টি চিরুনি অভিযান করেছি৷

‘করোনার মধ্যেও এক বছরে আমরা ছয়টি চিরুনি অভিযান করেছি’

 নোভালুরণ’নামে একটি কীটনাশক প্রায় ৪৬ লাখ টাকা খরচ করে চার মাস আগে মশার প্রজননস্থলে ব্যবহার করেছিলেন৷ উদ্দেশ্য ছিল লার্ভা অবস্থায়ই মেরে ফেলা৷ লার্ভা তো সেই ওষুধে মরেনি বলে খবর প্রকাশ হয়েছে...

ওষুধটা কিন্তু কার্যকর৷ যারা বলছেন কাজ করেনি, তারা ধারণাপ্রসূত কথা বলছেন৷ আমাদের কীটতত্ত্ববিদরা ফিল্ডে প্রয়োগ করেছেন৷ আমরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেছি৷ আমরা শতভাগ কার্যকর পেয়েছি৷ তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকবে৷

মশার ওষুধে নাকি মশা মরছে না৷ আর মার্শাল কোম্পানির যে ওষুধ কিনেছিলেন তা কাজে আসছে না বলে বাতিল করেছেন...

অবশ্যই মশা মরছে৷ আর ওষুধগুলো যে শতভাগ কার্যকর- সে বিষয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত৷ আমাদের কমিটিতে জনপ্রতিনিধিসহ নানা সেক্টরের লোক আছেন৷ কীটতত্ত্ববিদ আছেন৷ তাদের সামনেই ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়৷ এরপর থেকে আমরা  সাংবাদিকদের সামনেই এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করবো৷

আপনারা লার্ভা অ্যাডাল্ট মশা মারতে কী কৌশলে কাজ করেন?

লার্ভার জন্য স্প্রে করি৷ আর অ্যাডাল্ড মশা মারার জন্য ফগিং করি৷ আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি৷ তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, প্রাকৃতিক কারণে কোনো বছরে মশা বেশি হয়, কোনো বছরে কম হয়৷ এবার শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বড় বড় শহরে এবার মশা বেশি৷ শুধু বড় শহর নয়, সব  এলকায়ই মশা বেশি৷

কোন প্রাকৃতিক কারণে এবার মশা বেশি?

আমার কাজকে আমি জাস্টিফাই করছি না৷ তবে আমিও মাননীয় মেয়র থেকে সব কর্মকর্তা এবং কর্মীরা শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এই মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য৷ কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়৷

সিটি কর্পোরেশনের মোবাইল কোর্ট কি লার্ভা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে?

পাঁচটি মোবাইল কোর্ট কাজ করছে৷ লার্ভা পেলে আমরা প্রতিদিনই কোনো প্রতিষ্ঠানকে বা বাড়ির মালিককে অথবা দোকান মালিককে জরিমানা করছি৷ আজও (বুধবার) আমরা জরিমানা করেছি৷ মিল্কভিটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান৷ সেখানে হাজার হাজার লার্ভা প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে৷ তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলা করেছি৷ জরিমানা করেছি৷

এবার এত মশা বাড়ার কারন কী?

একটা কারণ প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত৷ দ্বিতীয়ত, গত বছরের নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে বৃষ্টি হয়েছে৷ কিউলেক্স মশার সিজন নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল-মে পর্যন্ত৷ ওই সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে৷ মশা সৃষ্টির একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে৷ এছাড়া ওয়াসার যে খাল আছে, তাতে এহেন জিনিস নাই যে ফেলা হচ্ছে না৷ তাতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে৷ বক্স কালভার্টেরও একই অবস্থা৷

যখন বৃষ্টি হলো তখন আপনারা কি কাজ করেননিকাজ করলে তো এত মশা হতো না...

আমরা অবশ্যই খেয়াল করেছি এবং আমাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত আছে৷ আরেকটি বিষয়, আমি যদি প্রতিদিনই স্পেশাল এফোর্ট দিই সেটাই নর্মাল এফোর্ট হয়ে যায়৷

মশক নিধন কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় নেই৷ তারা যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেই এলাকা চেনেন না৷ আবার ফগিং মেশিনে ওষুধ কম দেয়ার অভিযোগও আছে...

না, আমরা ফগিং মেশিনের কন্টেইনার ফুল করে দিচ্ছি৷ ওষুধ সাপ্লাই নাই এটা ভুল তথ্য৷

প্রত্যেক বছরই তো একই অবস্থা হয়৷ আপনারা কাজ করেন, মশা মরে না৷ এটা কি আপনারা মূল্যায়ন করেন? কেন এমন হয়?

আমরা মূল্যায়ন করি৷ আমাদের পরামর্শক আছেন, কীটতত্ত্ববিদ আছেন৷ তাদের সাথে আলোচনা করি৷ তাদের পরিকল্পনায়ই কাজ করি৷

মশা মারতে দুই সিটি কর্পোরেশনে বছরে ১১৭ কোটি টাকা বাজেট৷ এই বাজেট কি কম?

না, বাজেট কম নয়৷ আমি বজেটকে দায়ী করতে চাই না৷  আপনাদের আরো কিছু জিনিস বুঝতে হবে৷ যেমন, ঢাকার অনেকগুলো জায়গা আছে, যা ছিটমহলের মতো৷ যেমন বসুন্ধরা৷ পুরো বসুন্ধরা কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে নয়৷  কিন্তু সেখানে মশা জন্ম হচ্ছে৷ আবার এয়ারপোর্টের দায়িত্ব কিন্তু আমাদের নয়৷ আমরা তাদের মশা মারার মেশিন কিনে দিয়েছি৷ বলেছি, আপনারা মশা মারেন৷ আবার সিটি কর্পোরেশনের যেখানে শেষ, সেখানেও তো মশা হচ্ছে ৷ আমরা মারলাম, কিন্তু ওইসব জায়গা থেকে তো মশা উড়ে আসছে৷ সিটি কর্পোরেশনের বাইরে থেকে মশা আসছে৷ ওই মশা তো আমরা থামাতে পারছি না৷ কিন্তু আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই৷