মরুভূমিতেও শেষরক্ষা করতে পারলেন না মে
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ব্রেক্সিটের তারিখ এগিয়েআসা সত্ত্বেও আবার বিলম্বের পথে চলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে৷ চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ সংসদে ভোটাভুটির কথা ছিল৷ কিন্তু মিশরের শার্ম আল শেখ শহরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে মে বলেন, আগামী ১২ মার্চের মধ্যে তিনি সংসদে সংশোধিত ব্রেক্সিট চুক্তি পেশ করবেন৷ সে ক্ষেত্রে এমন চুক্তি অনুমোদন ও কার্যকর করতে মাত্র ১৭ দিন সময় থাকবে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী এখনো মনে করেন, যে নির্ধারিত সময়ে চুক্তিসহ ব্রেক্সিট কার্যকর করা সম্ভব৷
এমন ঘোষণার পর টেরেসা মে নিজের মন্ত্রিসভা, দল ও সংসদে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন৷ তাঁর পক্ষে আদৌ কোনো সমাধানসূত্র অর্জন করা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় আরও বাড়ছে৷ তাছাড়া শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিষয়টি টেনে আনলে ব্রিটেন প্রবল অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে অনেক মহল৷
সরকারের প্রতি অনাস্থা দেখিয়ে ব্রিটেনের সংসদে বুধবারই পালটা প্রস্তাব আনা হতে পারে৷চুক্তিহীন ব্রেক্সিটরুখতে দল, মত নির্বিশিষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ এমনকি মন্ত্রিসভার তিন সদস্যও সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করে এমন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবার অঙ্গীকার করেছেন৷ সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়াতে সরকারকে কার্যত বাধ্য করা হতে পারে৷
বলা বাহুল্য, ব্রিটিশ রাজনীতির এমন অস্থির পরিস্থিতির ফলে ইইউ নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র উপরও আর আস্থা রাখতে পারছে না৷ আয়ারল্যান্ড সীমান্তে ‘ব্যাকস্টপ' ব্যবস্থা নিয়ে ব্রিটেনের সংসদে ক্ষোভ প্রশমিত করতে আইনসিদ্ধ আশ্বাস চাইছেন তিনি৷ তাঁর দাবি মেনে ব্রেক্সিট চুক্তিতে রদবদলের সম্ভাবনা শুরু থেকেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে দুই পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বিষয়ে রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত ইইউ৷ তবে এমন পদক্ষেপ ব্রিটিশ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ ইইউ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক বলেছেন, আগামী ২১ ও ২২ মার্চ ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ব্রিটেনকে এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাতে হবে৷
এমন অচলাবস্থা কাটাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক পালটা প্রস্তাব প্রস্তুত করছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ ব্রিটিশ সংসদ যদি প্রধানমন্ত্রীকে ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়াতে বাধ্য করে, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই এই প্রস্তাব পেশ করা হতে পারে৷ মাত্র তিন মাস অথবা স্বল্প সময়ের জন্য বিলম্ব না করে প্রায় দুই বছরের জন্য ব্রেক্সিট মুলতুবি রাখতে চায় ইইউ৷ ব্যাকস্টপ সম্পর্কে জটিলতা কাটাতে এই সময়কালে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়েও এক সার্বিক চুক্তি প্রস্তুত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে বর্তমান অনিশ্চয়তাও দূর হবে৷ আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ও অন্যান্য বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে স্থায়ী সমঝোতা সম্ভব হলে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
এমন প্রস্তাব কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তাঁরা ব্রেক্সিট কার্যকর করতে কোনোরকম বিলম্ব চান না৷ ইইউ একমাত্র ২১ মাসের বিলম্ব মেনে নিলে তাঁরা বড় সমস্যায় পড়তে পারেন৷ তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই এমন প্রস্তাবের উল্লেখ করা হয়েছে বলে কট্টরপন্থিদের সন্দেহ হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে তাঁরা বিলম্ব এড়াতে বর্তমান ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য হবেন৷
এসবি/জেডএইচ (রয়টার্স, এএফপি)