ব্রেক্সিট চুক্তির বাইরে সমঝোতার সম্ভাবনা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ব্রেক্সিট চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন যে সম্ভব নয়, অবশেষে তা বুঝতে পেরেছে ব্রিটেনের টেরেসা মে সরকার৷ জানুয়ারি মাসে ব্রিটেনের সংসদ এই চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেবার পর থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছিল৷ তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী বার বার ব্রাসেলসে গিয়ে সেই চুক্তির মধ্যে আয়ারল্যান্ড সীমান্তে ব্যাকস্টপ সংক্রান্ত বোঝাপড়ায় পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন৷ কিন্তু এমন প্রচেষ্টা বিফল হওয়ায় বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের সরকার বাস্তব পরিস্থিতি কার্যত মেনে নিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার ব্রেক্সিটের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের ব্রাসেলস সফরের পর এই উপলব্ধি দেখা গেছে৷
এমন প্রেক্ষাপটে আরও সময় নষ্ট না করে বরং সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তির অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চান টেরেসা মে৷ তাই আগামী দিনগুলিতে ইইউ-র সঙ্গে সংলাপের লক্ষ্য হবে এমন আইনসিদ্ধ গ্যারেন্টি আদায় করা, যা ব্রিটিশ সংসদের ইইউ-বিরোধী সদস্যদের আশ্বস্ত করতে পারবে৷ মূল চুক্তির বাইরেই এক নথির মধ্যে ব্যাকস্টপ সংক্রান্ত আশ্বাস আদায় করার চেষ্টা করে যাবে ব্রিটিশ সরকার৷ উল্লেখ্য, ব্রিটেন ব্যাকস্টপ সংক্রান্ত ব্যবস্থার সময়সীমা সীমিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছে৷ ব্রেক্সিট চুক্তির সঙ্গে দুই পক্ষের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশিত রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে রদবদল করে এ বিষয়ে গ্যারেন্টি অন্তর্গত করা যেতে পারে৷ তবে এমন আপোশ মীমাংসা কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
তাই এ বিষয়ে কোনো সমঝোতা যে ব্রিটেনের সংসদে অচলাবস্থা কাটাতে পারবে, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না৷ তাই ইউরোপীয় নেতারা এমন প্রস্তাব সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করছেন৷ তাঁদের ধারণা, ব্রিটেনের বিভক্ত সংসদে যে কোনো ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ৷ ইইউ-র ধারণা, এই অবস্থায় ব্রিটেন বিচ্ছেদের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে চলেছে৷ কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের ঘোর বিরোধী৷ তাঁরা প্রধানমন্ত্রী মে-কে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করতে বাধ্য করতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে ২১ ও ২২শে মার্চ ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে সেই আবেদন বিবেচনা করবেন ইইউ নেতারা৷
ব্রিটেনের সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের চাবিকাঠি বিরোধী লেবার দলের হাতে রয়েছে৷ কারণ প্রধানমন্ত্রীর টোরি দলের মধ্যে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরা দ্বিতীয় ভোটেও তাঁদের সমর্থন জানাবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ লেবার নেতা জেরেমি কর্বিন বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইইউ-র মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ তিনি বিচ্ছেদের পর ব্রিটেনকে ইইউ-র সঙ্গে শুল্ক ইউনিয়নে রাখার পক্ষে সওয়াল করে আসছেন৷ তাঁর যুক্তি, সে ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে জটিলতা ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কার কোনো কারণ থাকবে না৷ সংসদে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরা অবশ্য এমন প্রস্তাবের ঘোর বিরোধী৷ তাদের উপর প্রধানমন্ত্রীর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতার কড়া সমালোচনা করেন কর্বিন৷
ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বৃহস্পতিবার আশার আলো দেখিয়েছেন৷ তাঁর মতে, ইইউ-র সঙ্গে ব্যাকস্টপ সংক্রান্ত বোঝাপড়া দ্রুত সম্ভব হবে৷ সে ক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহেই সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভোটাভুটি হতে পারে৷ তবে সরকার প্রকাশ্যে এতটা আশাবাদী হতে পারছে না৷ ইইউ সূত্র অনুযায়ী ২৮শে ফেব্রুয়ারির আগে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই৷
এসবি/জেডএইচ (এএফপি, রয়টার্স)