1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংঘাত বাড়ছে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ মার্চ ২০২১

জাতীয় নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা হলেও তার ভূমিকা নিয়ে বিরোধীরা বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছে৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনকে আক্রমণ করছেন৷ জবাব দিয়েছে কমিশন৷

https://p.dw.com/p/3qo8x
Indien Mamata Banerjee
ছবি: Dipa Chakraborty/Pacific Press Agency/imago images

একুশেরনির্বাচনের নির্ঘণ্টঘোষণার পরেই রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে৷ একদিকে কমিশনের লক্ষ্য একশ শতাংশ হিংসামুক্ত নির্বাচন৷ অন্যদিকে, কমিশনের নিরপেক্ষতাই পড়ছে প্রশ্নের মুখে৷ শাসক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংঘাতের পারদ চড়ছে৷

নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ

রাজ্যে আদর্শ আচরণ বিধি চালু হয়ে গিয়েছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি৷ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বঙ্গ সফরে এসে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন৷ একইরকমভাবে বাঁকুড়ার সভা থেকে মমতা ঘরে ঘরে রেশন পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ তাতেই নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে৷ সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা এখনও মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন৷ সরকারি প্রকল্প নিয়ে নির্বাচনী সভায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া কার্যত নির্বাচনী বিধিভঙ্গের সামিল৷ কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বের কেউই রাজ্যের শাসক দলের অংশ নন৷ তাই আচরণবিধি তাদের ক্ষেত্রে খাটে না৷

‘‘কমিশনের সঙ্গে প্রশাসনের সংঘাত নতুন নয়’’: অনিন্দ্য বটব্যাল

পক্ষপাতের অভিযোগ

নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগের পাল্টা হিসেবে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা৷ তার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন৷ কেন্দ্রের কথায় কমিশন পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ এভাবে চলতে থাকলে আহত পা নিয়ে তিনি কমিশনে ধর্নায় বসবেন৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা পাল্টা বলেছেন, ‘‘মমতা ভয় পেয়ে গিয়েছেন৷ হার নিশ্চিত বুঝে এই অভিযোগ তুলছেন৷'' কমিশনকে জড়িয়ে এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনে কতটা ক্ষতি গণতন্ত্রের? পর্যবেক্ষক, অধ্যাপক অনিন্দ্য বটব্যাল বলেন, ‘‘কমিশনের সঙ্গে প্রশাসনের সংঘাত কোনো নতুন বিষয় নয়৷ ১৯৯১ সালে বাম সরকারের সঙ্গে কমিশনের সংঘাত হয়েছিল৷ কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় তাহলে গণতন্ত্রের পক্ষে তা ক্ষতিকারক৷''

কেন মমতার ক্ষোভ?

১) কমিশনের বিরুদ্ধে মমতার ক্ষোভের সূচনা ভোট ঘোষণার দিন থেকে৷ নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গ আট দফা ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ অথচ ২৩৯ আসনের তামিলনাড়ু বিধানসভার ভোট নেওয়া হবে এক দিনে৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, কেন পশ্চিমবঙ্গে এত দফায় ভোট নেওয়া হবে?

২) কমিশন এবার রাজ্যে প্রায় ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এতেও আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল৷ বাকি সব রাজ্যে একজন করে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক থাকছেন৷ অথচ নজিরবিহীন হলেও এবার বাংলায় থাকছে দুজন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক - মৃণালকান্তি দাস ও বিবেক দুবে৷ এই দুবেকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে তৃণমূলের‍৷

৩) পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর অপসারণে৷ পুলিশ ও প্রশাসনের একাধিক কর্তাকে সরিয়েছে কমিশন, যারা মুখ্যমন্ত্রীর নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ৷

৪)নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহত হওয়ার পর তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, কেন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে পারল না? চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অথচ কমিশনের রিপোর্ট, নন্দীগ্রামে নিছক দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ কোনো চক্রান্ত নেই৷

৫) কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৭ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে৷ ১০০ মিটারের বাইরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে৷ বিরোধীদের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশকে বুথের কাছে ঘেঁষতে না দিলে তৃণমূল রিগিং করতে পারবে না৷ তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে এই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কমিশন৷

‘‘দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন করালে জটিলতা তৈরি হতেই পারে’’: উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

বাড়ছে তিক্ততা

তৃণমূলের সঙ্গে কমিশনের তিক্ততা ক্রমশ বাড়ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, তিনি হস্তক্ষেপ করছেন৷ আবার উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন রাজ্য সরকারকে কড়া চিঠি লিখেছেন৷ তাঁর দাবি, কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক৷ এই সুদীপ জৈনকে রাজ্যে ভোটের দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবিতে ইতিমধ্যে তৃণমূল দরবার করেছে৷

সবমিলিয়ে সংঘাতের ছবি উঠে এলেও এর মধ্যে বাড়াবাড়ি দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কমিশন আট দফায়, দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন করাবে৷ এর ফলে কিছু জটিলতা তৈরি হতেই পারে৷ বিশেষত পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে৷ সেটাকে বড় ধরনের সংঘাত বলে ভাবা ঠিক নয়৷''