ভোটযুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া
১৩ মার্চ ২০২১সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেল ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ছুঁতে চাইছে জনতাকে৷ বিজেপির শীর্ষ নেতা অমিত শাহ নিজে বলেছেন, উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে সাফল্যের পেছনে দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অবদান উল্লেখযোগ্য৷ তাই পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি লড়াই যখন তুঙ্গে, তখন সামাজিক মাধ্যমে বিজেপির তৎপরতাও তুঙ্গে৷ একই ফর্মুলায় হাঁটছে রাজ্যের শাসকদল৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে মনোনয়ন পেশ করতে গিয়ে দেড়দিনে ২০ বার ফেসবুক লাইভে এসে ৪০ লক্ষের উপর দর্শক পেয়েছেন৷ অন্যদিকে বাম-কংগ্রেসও নিজস্ব আইটি সেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে নানা ধরনের বার্তা, কার্টুন এবং প্যারোডি৷ পাশাপাশি নেতা-নেত্রীদের স্লোগান, বক্তব্য সব কিছু ঘিরেই মিম তৈরি হচ্ছে৷ দলবদল করছেন যারা, তারাও বাদ যাচ্ছেন না৷ এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চোট নিয়েও সোশ্যল মিডিয়ায় মিম, ছড়া, কার্টুন বেরিয়ে গিয়েছে৷
বিজেপির লক্ষ্য
সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে দলের বক্তব্য মানুষের মনে পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচিতে কেন্দ্রের শাসকদলই সবচেয়ে এগিয়ে৷ কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প এবং দলের মতাদর্শ বুথস্তর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সব ধরনের সামাজিক মাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন তারা৷ অমিত শাহ সম্প্রতি একটি দলীয় সোশ্যাল মিডিয়া বৈঠকে হোয়াটসঅ্যাপে ৫০ লক্ষ মেসেজ ছড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশিত৷ বিজেপির নিজস্ব সামাজিক মাধ্যমের তৈরি ‘মোদী পাড়া' নামে একটি অ্যাপে দু কোটি মানুষকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ কেন সোশ্যাল মিডিয়ার এত গুরুত্ব? রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন অনেকেই নিউজপেপার পড়েন না, টিভি দেখেন না৷ কিন্তু প্রত্যেকদিন ফেসবুক দেখে তরুণ প্রজন্ম৷ বিশেষ করে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সিরা, এমনকি গৃহবধূরাও৷ তাই সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা রাজনীতিকে রান্নাঘরে, শোওয়ার ঘরে নিয়ে যাওয়াটাই লক্ষ্য৷’’ সামাজিক মাধ্যমে মিম, ভিডিও ক্লিপ বানানোর জন্য সম্প্রতি বিজেপি গ্রাফিক্স ইন্টার্নও নিয়েছে৷
তৃণমূলের কৌশল
কেন্দ্রের প্রকল্পের তুলনায় রাজ্যের প্রকল্প কতটা ভালো, রাজনৈতিক ব্যঙ্গ বা কার্টুনের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় মঞ্চে প্রচারের জন্য তৃণমূলও প্রস্তুত৷ অমিত শাহের সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে বৈঠক করার পরেই তৃণমূলও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে৷ তৃণমূলের দাবি, ধাপে ধাপে রাজ্যের ২৯৪ বিধানসভা কেন্দ্রেই এই প্রশিক্ষণ হবে৷ ফেসবুক ও টুইটারে তৃণমূলের শীর্ষ সংগঠনের যে প্রচার ব্যবস্থা তা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ দুজনকে৷ বরং জেলা স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা গ্রুপ বা পেজগুলিকে সাজানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে আরো বেশি৷ উত্তর চব্বিশ পরগনার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘জেলার প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন অভিভাবকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বিধানসভা ভিত্তিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে বিরোধীদের অপপ্রচার, কুৎসার জবাব দেওয়া হচ্ছে৷’’
বামেদের ঝোঁক
ভোটের অনেক আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বামপন্থি দলগুলো সক্রিয় বলে দাবি করছেন কর্মীরা৷ রীতিমতো ছক কষে তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ভলান্টিয়ারদের সাহায্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে টুম্পা সোনার মতো প্যারোডি বা কার্টুনরঙ্গ৷ সঙ্গে রয়েছে নেতাদের লাইভ ভাষণও৷ ভোটকেন্দ্রিক কনটেন্ট তৈরি করার পরে তা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচিতে আপাতত অনেক কিছুই৷ সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাস বলেন, ‘‘একটা বুথে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ষাট শতাংশের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি প্রাথমিকভাবে৷ এবার যত ভোট এগিয়ে আসবে, সেই সংখ্যাটা বাড়বে৷ রয়েছে দলের পোর্টালও৷ পোর্টালে যা বেরোয়, সেগুলোকেও নানাভাবে পপুলার করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ দলের সঙ্গে কর্মীদের ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলও ভোটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে৷’’
কড়া নজর কমিশনের
এবারের ভোটে সোশ্যাল মিডিয়াতেও কড়া নজর রাখছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ গত লোকসভা ভোট থেকেই প্রার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টও প্রকাশ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন৷ নির্বাচনে বিজ্ঞাপনী প্রচার থেকে এতদিন ছাড় পেতো টুইটার ট্রেন্ডিং এবং হ্যাশট্যাগ৷ এবার সেগুলিকেও নির্বাচনি প্রচারের তালিকায় ধরা হবে৷ জেলা ও ব্লকস্তরে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক প্রচার নজরে রাখতে কমিশন জেলাভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল তৈরি করেছে৷