সিদ্দিকির দলকে পাশে চায় বাম–কংগ্রেস
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ১০০ থেকে ১১০টি আসনের ফলাফলে প্রভাব ফেলে ৩০% মুসলিম ভোট। আগে বামফ্রন্ট এই ভোটের সিংহভাগ পেতো, ২০১১ সাল থেকে যে ভোট পেয়ে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। যে কারণে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই নানা সরকারি সুযোগ–সুবিধা পাইয়ে দিতে সচেষ্ট বাংলার মুসলিমদের। কিন্তু রাজ্যে বিজেপির উত্থান এবং হিন্দুত্ববাদী চিন্তা রাজনৈতিক জমি পাওয়ার পর তৃণমূল সরকারের সেই নীতি মমতা ব্যানার্জির জন্যে বুমেরাং হয়েছে। তাকে মুসলিম–তোষণকারী হিসেবে চিহ্নিত করে হিন্দু ভোট চাইছে বিজেপি। পাশাপাশি মুসলিম ভোট না জোগাড় করতে পারলে অন্তত সেই ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতে বিজেপি তৎপর। আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল এবার পশ্চিমবঙ্গেও প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণার পর থেকেই মুসলিম ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যাতে আখেরে বিজেপিরই লাভ হবে।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের ফুরফুরা শরিফের ছোট পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট' নামে নতুন দল গড়েছেন, যে দল মুসলিম ছাড়াও দলিত ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ভোট এক জায়গায় আনতে উদ্যোগী। সাধারণ অবস্থায় মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গেই আইএসএফ–এর নির্বাচনি বোঝাপড়া হওয়ার কথা, কিন্তু আব্বাস সিদ্দিকির দল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোটকেই তাদের স্বাভাবিক মিত্র বলে মনে করছে এবং বৃহত্তর বিজেপি–বিরোধী জোট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তার জন্য তিন দিন, অর্থাৎ গত রবিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সিদ্দিকি। জানিয়েছিলেন, এর মধ্যে সমঝোতা না হলে তিনি একলা চলো নীতি নেবেন। রবিবার সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরই জল্পনা শুরু হয়, তা হলে বোধহয় বাম–কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসএফ–এর জোট হচ্ছে না।
বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, যিনি এই নির্বাচনি সমঝোতা প্রক্রিয়ার অন্যতম শরিক, তিনি সরাসরি বললেন, সিদ্দিকির দলের সঙ্গে জোটের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার যে ‘খবর' রটছে, তা বিভ্রান্তিকর প্রচার।
প্রদীপবাবু জানালেন, সিপিএমের মোহাম্মদ সেলিম এবং কংগ্রেসের আবদুল মান্নান, এই দুই নেতা আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে কথা বলেছেন। সিদ্দিকির দল বামফ্রন্টের সম্পাদক বিমান বসুকে জোটের প্রস্তাব দিয়ে চিঠিও দিয়েছে। আর কংগ্রেসকে যেহেতু এআইসিসি–র অনুমোদন নিয়ে তবেই এগোতে হবে, প্রদেশ নেতৃত্ব এই জোটের প্রস্তাবের কথা দিল্লিতে জানিয়েও দিয়েছে। সম্মতি পেলেই জোট হবে। এই অবস্থায় উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার রটনা প্রসঙ্গে প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে আলোচনা একদম ভেস্তে যায়নি। যদি কেউ বলে থাকে, তা হলে সে মিথ্যে বলছে! কোন আসনগুলো ওদের ছাড়া হতে পারে, সেগুলোও আজকে আমরা আলোচনার মধ্যে নিয়েছিলাম।''
প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগণার দেগঙ্গা, বা ভাঙড়–এর মতো বেশ কিছু বিধানসভা আসন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে ছাড়ার কথা ইতোমধ্যেই ভাবা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সেকুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান নৌশাদ সিদ্দিকি জানাচ্ছেন, ‘‘আমরা ওদেরকে লিস্ট দিয়েছি। ওরাও দিয়েছে, যে কে কোথায় দাঁড়াচ্ছে। সে জায়গায় যদি দু'পক্ষই অ্যাডজাস্ট করে, তা হলে অবশ্যই জোট হবে।'' কোথায় কোথায় প্রার্থী দিতে চায় আইএসএফ? সিদ্দিকি জানালেন, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুর— সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৯৫টা আসনে তারা প্রার্থী দেবেন।