দরগায় নারীর প্রবেশাধিকারের দাবি
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮সম্প্রতি দরগায় নারীদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ পুণের এক আইন কলেজের তিন ছাত্রীর পক্ষে মামলাটি করেছেন এক আইনজীবী৷ মূল দরগায় প্রবেশাধিকার না থাকায় সুফি সাধক হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সমাধির দেওয়াল ছুঁয়ে প্রার্থনা করেন নারীরা৷
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ভারতের অঙ্গরাজ্য কেরলের শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে৷ এখনো সব বয়সের মহিলারা শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি৷ এই বিতর্কের মধ্যেই নারীদের প্রবেশাধিকার নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দিল্লির নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগা৷ সেখানে রীতিমতো নোটিশ দিয়ে দরগার মূল অংশে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ৷ দরগায় চাদর চড়ানো, ফুল নিবেদন বা অন্যান্য ধর্মীয় প্রথা পালনের অধিকার থেকে বঞ্চিত নারীরা৷ পুণের কয়েকজন ছাত্রী জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে নিজামুদ্দিন দরগায় মহিলাদের প্রবেশাধিকার চেয়েছেন৷ তিন ছাত্রীর হয়ে মামলা লড়ছেন আইনজীবী কমলেশ কুমার মিশ্র৷ শুনানি শুরুর আগে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার, দিল্লি পুলিশ এবং দরগার ট্রাস্টের কাছে এই বিষয়ে জবাব চেয়েছে হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ৷ পরবর্তী শুনানি ১১ এপ্রিল৷
আসলে কিছুদিন আগে নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগায় গিয়েছিলেন আইন পাঠরতা ছাত্রীরা৷ সেখানে তাঁরা দেখেন, দরগার ভেতরে মহিলাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না৷ মূল ফটকের মাথায় হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘‘দরগার ভেতরে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ৷'' তাঁরা দরগা কর্তৃপক্ষের কাছে এর কারণ জানতে চান৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁদের কথা শুনতে চায়নি৷ পরে দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যান ওই ছাত্রীরা৷ পুলিশের কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাননি৷ এরপর ওই তিন ছাত্রী চিঠি দেন কেন্দ্রীয় সরকার এবং দরগা কর্তৃপক্ষকে৷ কোনো উত্তর না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা৷ দিল্লি হাইকোর্টে মামলার আবেদনে এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অসাংবিধানিক' ঘোষণার দাবি করা হয়েছে৷ আরো বলা হয়েছে, দরগা ধর্মপ্রাণ মানুষ ও জনগণের জন্য উন্মুক্ত জায়গা৷ এমন জায়গায় লিঙ্গের ভিত্তিতে প্রবেশাধিকার ভারতীয় সংবিধানবিরোধী৷ এর জন্য দায়ী প্রাচীন বিশ্বাস৷
নিজামুদ্দিন আউলিয়ার বংশধর এবং দরগার কর্মকর্তা সৈয়দ কালিম নিজামি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘ইসলামে মহিলাদের কবরের কাছে যাওয়া নিষেধ৷ তাই শুধু দরগা নয়, কবরস্থানেও মহিলারা যেতে পারেন না৷ তাছাড়া ৭০০ বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে৷ তাই প্রথা মেনে চলাই শ্রেয়৷'' রাজস্থানের আজমের শরিফ দরগা, মহারাষ্ট্রের হাজি আলি দরগায় মহিলাদের প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই৷
ভারতীয় উপমহাদেশে হজরত ফরিদ গাঞ্জশাকার, হজরত বখতিয়ার কাকী এবং গরীবে নওয়াজ হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি ছিলেন চিশতিয়া তরিকায় সুফি সাধক৷ তাঁদের মতবাদ ছিল, ঈশ্বরে প্রেম মানেই মানবতার প্রেম৷ তাঁদের উত্তরসুরি ছিলেন প্রখ্যাত সূফি আউলিয়া খাজা সৈয়দ মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া৷ ষোড়শ শতকে মোঘল সম্রাট আকবরের উজির আবুল ফজলের লেখা ‘আইন-ই-আকবর'-এ নিজামুদ্দিন আউলিয়ার জীবনীর উল্লখ পাওয়া যায়৷ তাঁর জন্ম ১২৩৮ সালে৷ উত্তর প্রদেশের বাদাউন জেলায়৷ মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তাঁর পিতা হজরত আহমদ বাদাউনির মৃত্যু হয়৷ তারপর মা বিবি জুলেখার সঙ্গে দিল্লি চলে আসেন৷ ২০ বছর বয়সে নিজামুদ্দিন আউলিয়া অধুনা পাকিস্তানের আজোধান যান৷ সেখানে হজরত বাবা ফরিদ নামে পরিচিত সুফি সন্ত ফরিদ গঞ্জেসকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ পরে বাবা ফরিদ গঞ্জসাকার নিজামুদ্দিনকে তাঁর উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন৷ সুফি সাধনার জ্ঞান, উদারতা, মানব প্রেম এবং ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য দিল্লির মুসলিমদের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তিনি৷ ১৩২৫-এর ৩ এপ্রিল মৃত্যু হয় তাঁর৷ ১৫৬২ সালে তাঁর সমাধিস্থলে বর্তমান দরগা নির্মিত হয়৷
দরগার খাদিম অলহাজ সৈয়দ নঈমুদ্দিন নিয়াজি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘দরগায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মহিলাদের কোনো বাধা-নিষেধ থাকা উচিত নয়৷ কারণ, সুফি সাধকরা সারা জীবন মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তাঁদের রোগব্যাধি সারিয়েছেন৷ তাঁদের মৃত্যুর পর মহিলারা ব্রাত্য হবেন কেন?'