1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মন্দিরে নারীদের প্রবেশ নিয়ে ফের বিক্ষোভ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৭ নভেম্বর ২০১৮

শবরীমালা মন্দিরের দরজা ফের খুললো৷কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্বেও আবার বাধার মুখে পড়লেন নারীরা৷ ভক্তদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে আহত হলেন এক চিত্র সাংবাদিক৷ মন্দিরের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/37oay
Hindu Frauen Gebet Gott Surya 30.10.2014
ছবি: Reuters/Anindito Mukherjee

নজিরবিহীন নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় গোটা শবরীমালা মন্দির চত্বর৷ কার্যত দুর্গের চেহারা নেয়৷ সোমবার থেকে মাত্র দু'দিনের জন্য কেরালার বিখ্যাত শবরীমালার পর্বত চুড়ায় আয়াপ্পা মন্দিরের দরজা দ্বিতীয়বার খুলে দেবার পর মন্দির দর্শনে হাজার হাজার ভক্তের সমাবেশ হয়৷ অভূতপূর্ব নিরাপত্তা বলয়৷ মন্দিরের চারপাশে মোতায়েন করা হয় আড়াই হাজার পুলিশ৷ তার মধ্যে রয়েছেন ৩০জন নারী পুলিশ, যাঁদের বয়স পঞ্চাশোর্ধ৷ রয়েছে ২০ জনের সশস্ত্র নারী কমান্ডো বাহিনী৷ মন্দিরের চারপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা৷ ভক্তদের লম্বা লাইন৷ কিন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকায় একসঙ্গে চারজনের বেশি দর্শনার্থীকে মন্দির চত্বরে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না৷ গত মাসে মন্দির দর্শনে সব বয়সের নারীদের অধিকার আছে- এই মর্মে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেবার পরও মন্দির কর্তৃপক্ষ, হিন্দু সংগঠনগুলি এবং ভক্তরা তা মানতে রাজি নয়৷ এই নিয়ে শুরু হয় ভক্তদের সঙ্গে নিরাপত্তা এবং আইন প্রশাসনের সংঘাত৷১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি কোনো নারী এখনো পর্যন্ত মন্দিরে ঢুকতে পারেনি৷

কিছু গোঁড়া সংগঠন রায় কার্যকর করতে বাধা দিচ্ছে, ভারতের প্রগতিশীলতা তাঁরা চায় না’

সোমবার ২৫ বছরের এক নারী তাঁর স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মন্দির দর্শনে যান৷ কিন্তু মূল শিবিরেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়৷ গন্ডগোলের আশঙ্কায় তাঁরা ফিরে যেতে বাধ্য হন৷ মন্দির দর্শনে যান ললিতা নামে আরেকজন নারী৷ তাঁকেও বাধা দেওয়া হয়৷ তাঁকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়৷ বিক্ষোভ সামাল দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়৷ সেই ছবি তুলতে গিয়ে জনৈক চিত্র সাংবাদিকও আক্রান্ত হন৷ শেষ পর্যন্ত ওই নারীকে তাঁর বয়সের প্রমাণ হিসেবে দেখাতে হয় আধারকার্ড, যেখানে তাঁর জন্ম তারিখ সরকারিভাবে নথিভুক্ত আছে৷ সেই হিসেবে তাঁর বয়স ৫২ বছর৷ পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে মন্দির পর্যন্ত পৌঁছে দেয়৷

শবরীমালা মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আইন আগে, নাকি ধর্মবিশ্বাস আগে প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. অমল মুখোপাধ্যায়ের কাছে এই প্রশ্নটা রাখলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথম কথা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ভারতীয় সংবিধান অনুসারে সবাই মেনে চলতে বাধ্য৷ কাজেই সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, সেখানে আইন ও সংবিধান সেকথাই বলছে৷ সর্বোচ্চ আদালতের রায় সব আদালতকেই মেনে নিতে হবে৷ সুপ্রিম কোর্ট যা বলেছে, তা আইন অনুসারেই বলেছেন৷ এটা সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব মত নয়৷ সেটা সবাইকেই মেনে নিতে হবে, যদি না কেন্দ্রীয় সরকার নতুন কোনো আইন প্রণয়ন করে৷ সর্বোচ্চ আদালত নারী স্বাধীনতার অনুকূলে যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে, সেটা ভারতের প্রগতিশীলতার পক্ষেই গেছে৷ যাঁরা তা লংঘন করতে চাইছেন, তাঁরা গুরুতর অন্যায় করছেন৷ শবরীমালা মন্দিরে সব নারীকে প্রবেশাধিকার দিয়ে শীর্ষ আদালতের রায় কার্যকর করা সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের পক্ষে বাধ্যতামূলক৷ যদি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন তা মানতে অস্বীকার করে, তাহলে তাঁকে বা তাঁদেরকে আইন ভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে৷'' 

 ড. মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে আরো বলেন, ‘‘কিছু গোঁড়া সংগঠন এই রায় কার্যকর করতে বাধা দিচ্ছে৷ ভারতের প্রগতিশীলতা তাঁরা চায় না৷ তাঁরা আদ্দিকালের সাবেকি সংস্কারের অন্ধকারেই থাকতে চায়৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক৷ সংশ্লিষ্ট সরকারের উচিত সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে এদের মোকাবিলা করা৷'' ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মীয় সংস্কার কি সব সময় আইন মোতাবেক হয়- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের ২৫ নং ধারায় ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷ কিন্তু সেটা পূর্ণ স্বাধীনতা নয়৷ সেটা নিয়ন্ত্রণের দ্বারা আবদ্ধ৷ সংবিধানেই সেকথা বলা আছে৷ কাজেই ধর্ম বিশ্বাস সমাজ সংস্কৃতির বাধা হয়ে দাঁড়ালে, সেটা দূর করার দায়িত্ব সরকারের৷''

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সের নারী ভক্তদের প্রবেশাধিকার নিয়ে গোটা দেশে বিতর্কের আবহে মন্তব্য করেছেন যে, এক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার আছে৷ কোনো ভেদাভেদ থাকতে পারে না৷ ধর্মকে রাজনীতির রং দিয়ে কিছু দল এবং সংগঠন এক ধরনের রাজনীতির খেলায় মেতে উঠেছে৷ এটা ঠিক নয়৷

শবরীমালা কর্ম সমিতি নামে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনগুলির তরফে বলা হয়, ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি কোনো মহিলা সাংবাদিক বা চিত্র সাংবাদিককে যেন খবর সংগ্রহ করার জন্য পাঠানো না হয়৷ সমিতির পক্ষে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে৷ শুনানি আগামী ১৩ই নভেম্বর৷ তারপর ১৭ই নভেম্বর থেকে দুই মাসের জন্য আবার শবরীমালা মন্দিরের দরজা খুলবে৷ আইন-শৃংখলা, সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দৃষ্টিতে দেখলে পরিস্থিতি মোটেই স্বস্তিজনক নয়৷ সংঘাতের মেঘ যেন ঘনীভূত হচ্ছে৷ দেশে আইনের শাসন কায়েম করা এক প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে৷ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটব্যাঙ্ক ধরার আশায় ধর্মীয় আবেগকে যেভাবে উস্কে দেওয়া হচ্ছে, তার মোকাবিলা করা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে৷