‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে সমকামী অধিকারকর্মী হত্যা’
৩১ আগস্ট ২০২১মামলায় সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক জিয়াসসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড আর দুই পলাতককে খালাস দেয় আদালত৷
রায়ে বলা হয়, স্বাধীন মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করতেই ওই দুইজনকে হত্যা করা হয়৷ ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল কলাবাগানের বাসায় ঢুকে সমকামী অধিকার কর্মী ও সমকামীদের ম্যাগাজিন ‘রূপবান’-এর সম্পাদক জুলহাজ মান্নান এবং নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা করা হয়৷
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ৷
তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হযেছে৷ পাশাপাশি আরেকটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ জিয়া ও আকরাম পলাতক৷ বাকি চারজনের উপস্থিতিতে বিচারক রায় ঘোষণা করেন৷
অভিযোগে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় অপর দুই পলাতক আসামি সাব্বিরুল হক চৌধুরী এবং জুনাইদ আহমদ ওরফে মওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে জুনায়েদকে খালাস দিয়েছেন বিচারক৷
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার খান জাকির জানান, ‘‘আদালত তার রায়ের বলেছেন, আসামিরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের সদস্য৷ সমকামীদের নিয়ে র্যালি করাসহ সমকামীদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করায় ওই দুইজনকে তারা হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়৷ স্বাধীন মত প্রকাশ ও স্বাধীনভাবে কাজ করা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যেই তাদের হত্যা করা হয়েছে৷’’
আর জুলহাজের ভাই ও মামলার বাদী ভাই মিনহাজ মান্নান বলেন, ‘‘আমি অপরাধীদের শনাক্ত ও তাদের বিচার চেয়ে মামলা করি৷ এই মামলায় যাদের শাস্তি হয়েছে, যারা ঘাতক, সবাই আমার অজ্ঞাত৷ আমি তাদের চিনি না বা চিহ্নিতও করতে পারিনি৷ তাই এই মামলার রায়ে সন্তোষ বা অন্তোষ প্রকাশ করার আমার অবকাশ আছে বলে মনে করি না৷ যারা মামলার তদন্ত করেছেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করেছেন, বিষয়টি তাদের৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের মনোজগতে যদি পরিবর্তন না আসে, আমরা যদি পরমতসহিষ্ণু না হই, আইনি কাঠামো যদি আরো শক্তিশালী না হয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের শক্ত হাতে দমন না করে, তাহলে এই ধরনের ঘটনা সামনে আরো ঘটবে বলে আশঙ্কা থেকেই যায়৷ যদি প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত হয়, বিচারের আওতায় আসে, তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা কমে যাবে৷’’
এদিকে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরও আদালতে উপস্থিত আসামিদের মধ্যে কোনো অনুতাপ দেখা যায়নি৷ শুরু ধেকেই তারা ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল৷
আসামিদের আইনজীবী এবিএম খায়রুল ইসলাম লিটন দাবি করেছেন তারা ন্যায় বিচার পাননি৷ তিনি বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন৷