ভারতে নির্বাচন
৭ অক্টোবর ২০১৩নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট হবে দুটি জাতীয় দল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে আগামী বছরে হতে চলা সাধারণ নির্বাচনের সেমি-ফাইনাল৷ এই বিধানসভা ভোটে ভারতের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় এই প্রথম একটা নতুন অধ্যায় সংযোজিত হলো সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশে৷ সেটা হলো, এই প্রথম প্রার্থীদের পছন্দ না হলে তাঁদের প্রত্যাখ্যান করার অধিকার থাকবে ভোটারদের৷ এ জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে প্রার্থীদের নামের তালিকার শেষে থাকবে বিশেষ বোতাম, যার নাম ‘‘নান অফ দি অ্যাবোভ'', সংক্ষেপে ‘‘নোটা''৷ আগে যে ব্যবস্থাটা ছিল তাতে কোনো ভোটার কাউকে ভোট না দিতে চাইলে তা কাগজে কলমে নথিভুক্ত করতে হতো৷ অর্থাৎ, ঐ ভোটারের পরিচয় গোপন থাকতো না৷ এবারে, এই নতুন ব্যবস্থায় কিন্তু গোপনীয়তা থাকবে৷
সব কটি রাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই কংগ্রেস বনাম বিজেপির, বিশেষ করে মিজোরাম ছাড়া অন্য চারটি গো-বলয়ের রাজ্যে৷ নির্বাচনি ইস্যু বলতে একদিকে যেমন মনমোহন সিং সরকারের নীতি-পঙ্গুত্ব, আর্থিক বেহাল দশা, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে মোদীর সাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি, সংখ্যালঘুদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা, দলের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব এবং আর্থিক ও সামাজিক নীতি৷ ফলে কংগ্রেস ও বিজেপি কেউই স্বস্তিতে নেই৷
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বিধানসভার ভোটের তারিখ ঘোষণার আগেই সর্বশক্তি দিয়ে নেমে পড়েছেন ভোট-ময়দানে৷ যদিও পাখির চোখ তাঁর কাছে দিল্লির মসনদ দখল৷ তবে এই পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফলে বোঝা যাবে মোদীর ‘ইমেজ' কতটা কাজ দিয়েছে৷ ফল ভালো না হলে তার দায় বর্তাবে মোদীর ওপর৷ প্রতিটি জনসভায় তুলোধুনো করছেন তিনি মনমোহন সিং সরকারকে৷ হালে অর্ডিন্যান্স বিতর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং-এর কর্তৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন৷
পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভার মোট আসন সংখ্যা ৬৩০৷ ভোটারদের মোট সংখ্যা সাড়ে ১১ কোটির বেশি৷ মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে শাসকদল বিজেপি এবং দিল্লি, রাজস্থান ও মিজোরামে কংগ্রেস৷ কেন্দ্র শাসিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিত চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী৷ বিরোধী বিজেপি শীলা দিক্ষিত সরকারকে নানাভাবে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে, কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি৷
তবে এ বছর ‘আম আদমি পার্টি' নামে নতুন একটি দল ভোটে নেমেছে কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্ব রেখে৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে তৃণমূল স্তরের এই দলের মূলধন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি৷ সমীক্ষকদের ধারণা, সরকার গড়ার মতো সংখ্যাগরিষ্টতা না পেলেও ভোট ভাগাভাগিতে বড় ভূমিকা নেবে এই আম আদমি পার্টি৷ দিল্লির স্থানীয় সমস্যা, নাগরিক অভাব অভিযোগের সুরাহা করার অঙ্গীকারই এই দলের প্রধান হাতিয়ার৷ ফলে দলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাড়াতাড়ি৷ দিল্লি মহানগরের নীচু তলার গরিব লোকজন আম আদমির মূল ভোট ব্যাংক বলে মনে করছেন অনেকে৷ প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া বইছে৷ বিজেপি দলীয় কোন্দলের জন্য এখনো মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি৷