পিছু হটলেন প্রধানমন্ত্রী
৩ অক্টোবর ২০১৩বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে নির্বাচনি সংস্কার এবং রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণ আনতে গত জুলাই মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সুশীল সমাজ৷ শীর্ষ আদালত মনে করে ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি যেভাবে বাসা বেঁধেছে, তা থেকে দেশকে বাঁচাতে এই রায়ের বিশেষ ভূমিকা থাকবে৷ তবে এই রায় না-পসন্দ রাজনৈতিক দলগুলির কাছে৷
রায়ে বলা হয়, কোনো সাংসদ বা বিধায়ক যদি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দু'বছর বা তার বেশি বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আইনসভার পদ হারাতে হবে৷ এখানেই শেষ নয়, আগামী ১০ বছর পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না৷ ভোটের মুখে শরিক দলগুলির মুখ চেয়ে তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স এনে মনমোহন সিং-এর জোট সরকার সেই রায় নাকচ করতে চায়৷ সুশীল সমাজ একযোগে প্রশ্ন তুলেছে, কেন দাগি সাংসদ ও বিধায়কদের বাঁচাতে সরকারের এই তৎপরতা?
আমজনতার ক্ষোভ আঁচ কোরে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী ঐ অর্ডিন্যান্সকে ছিঁড়ে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেবার কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে৷ প্রধানমন্ত্রী তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় রাহুলের এই অপ্রত্যাশিত কামান দাগায় কেঁপে ওঠে সরকারের পায়ের তলার মাটি৷ চেষ্টা হয় পরিস্থিতি সামাল দেবার৷ কিন্তু শেষরক্ষা না হওয়ায় কংগ্রেসের ‘কোর কমিটি'-র বৈঠকে আলোচনার পর অর্ডিন্যান্সটি বাতিল করার কথা বলা হয়৷
উল্লেখ্য, এই ‘কোর কমিটি'-র প্রধান সোনিয়া গান্ধী স্বয়ং৷ তাঁরই সামনে তাঁরই সরকারের মুখ পুড়িয়ে রাহুল গান্ধী প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনিই এখন দলের এক নম্বর হতে চলেছেন৷ তাঁর কথাই এখন থেকে হবে শেষকথা৷ অথচ বছর তিনেক আগে এই সোনিয়া গান্ধীই বলেছিলেন, যাঁদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন নয়, তাঁরা যাতে ভোটে দাঁড়াতে না পারে, তার জন্য সহমত গড়ে তোলা দরকার৷
ভারতের নির্বাচনে দাগি প্রার্থীদের এত রমরমা কেন? মনে করা হয়, কোনো দলের স্থানীয় বা জাতীয় স্তরের রাজনীতিকদের জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ তাঁদের প্রার্থী না করলে ভোটের অঙ্কে ওলটপালট হবে৷ দিল্লি-ভিত্তিক এডিআর সংস্থার মতে, সংদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ জন সাংসদের মধ্যে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে ঝুলছে ফৌজদারি অপরাধের মামলা৷ সারা ভারতে এই সংখ্যাটা ১৪৬০৷ দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পর ভার্মা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, ধর্ষণ বা অনুরূপ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রাজনীতিকরা কোনো পদে বহাল থাকতে পারবেন না৷ দুঃখের বিষয়, ছয়জন রাজনীতিক এখনো নিজেদের পদে বহাল আছেন৷ সামাজিক নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ছাড়া আর কী?