1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের উন্নয়ন মডেল কি গ্রহণযোগ্য?

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১৭ মে ২০১৫

উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দ্বিমত না থাকলেও উন্নয়নের মডেল এবং তা বাস্তবায়নের সদিচ্ছা ও ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যায়৷ ভারতের বর্তমান উন্নয়নের মডেল কতটা টেকসই এবং সাধারণ মানুষের জন্য কতটা উপযোগী, সেই প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি৷

https://p.dw.com/p/1FPlV
Indischer Premierminister Narendra Modi
ছবি: AFP/Getty Images/Puni Paranjpe

বিশ্ব অর্থনীতি তথা ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতার সঙ্গে যে তাল মিলিয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ দেশে-বিদেশে ভারতের সেই ক্যানভাসটাই নিপুণ মার্কেটিং দক্ষতায় তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং৷ নরেন্দ্র মোদীর দোস্তিকে ইতিমধ্যে দু'হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতারা৷

প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ছবিটার বাস্তবায়ন কি হচ্ছে? হলে কতটা? আমার তো মনে হয়, ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের ১২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশে যতটা বলা হচ্ছে, ততটা করে দেখানো সহজ নয়৷ বিশেষ করে, ভারতের মতো বহু জাতি বহুমতের গণতন্ত্রে যেখানে তিন পা এগোলে দু'পা পিছিয়ে আসাটাই দস্তুর৷ দ্বিতীয়ত, গোটা বিশ্বের উন্নয়নের সঙ্গে এখন গভীরভাবে সম্পৃক্ত পরিবেশ, কার্বন নির্গমন৷ উন্নত দেশগুলির মতে, দরকার হলে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে উন্নতিকামী দেশগুলিকে উন্নয়নে কাটছাঁট করতে হবে৷ এর প্রত্যক্ষ অভিঘাত ভারতের মতো উন্নয়নমুখী দেশগুলির ওপর কতটা, এই মুহূর্তে সেটা বহু-চর্চিত একটা ইস্যু৷ অবশ্যই একটা বিতর্কিত ইস্যু৷ পরিবেশের রক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করেও আমার মতো কেউ কেউ মনে করে, উন্নত দেশগুলি কিন্তু তাদের শিল্পায়নে রাশ টানেনি৷ কিয়োটো প্রোটোকল নিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে৷ কাজেই সেদিক থেকে মোদী কি উন্নত দেশগুলির সঙ্গে সমান তালে পা মিলিয়ে চলতে পারবেন?

প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিজেপি দল ক্ষমতাসীন হবার পর এ নিয়ে নানা মহলে নানা মত৷ প্রশ্ন উঠেছে, মোদীর ‘আচ্ছা দিন'-এর প্রতিশ্রুতি কি নেহাতই স্লোগান সর্বস্ব? তাছাড়া যে স্লোগান দিয়ে মোদী জমানা শুরু হয়েছে, তা বাস্তবায়িত করতে মোদী কতটা তত্পর? আমার তো মনে হয়, মূল প্রশ্নটা ঠিক তা নয়৷ মোদী সরকার অনেক ভালো ভালো অর্থনৈতিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে, অর্থনৈতিক সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে, জোর গলায় কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা তথা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর জোর দিয়েছেন, বৈদেশিক নীতিতেও ভুবনায়নের অনেক খোলা বইছে৷ অনেক খোলা মন নিয়ে বৈশ্বিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ভারতকে মেলাতে চেয়েছেন৷

তা সত্ত্বেও বাস্তব প্রতিফলনের নিরিখে বিচার করলে তার নিট ফল আশানুরূপ হয়েছে বলে অন্তত আমার মনে হয় না, অন্তত এখনো পর্যন্ত৷ কেন হয়নি তার আপাত কারণ সরকারের ‘আচ্ছা দিন'-এর সদিচ্ছার অনেকটাই আমলাতান্ত্রিক স্তরে গিয়ে খেই পাচ্ছে না৷ কিংবা বলা যায়, প্রশাসনিক জঙ্গলে হারিয়ে যাচ্ছে৷ সেটাকে মুঠোয় আনতে মোদীর এখনো সময় লাগবে৷ অথচ এমনটা হবার কথা নয়, অন্তত রাজনৈতিক স্তরে৷ সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে মোদী সরকারের৷ প্রতি পদে অন্য দলের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না৷ যে কারণে সাবেক মনমোহন সিং-এর কংগ্রেস জোট সরকারকে নীতি রূপায়ণে পদে পদে ঠোক্কর খেতে হয়েছিল৷ দ্বিতীয়ত, মোদী সরকারের আগ্রাসী সাংস্কৃতিক নীতিও এ জন্য আংশিক দায়ী৷ এই নীতি দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছে৷

Bildgalerie Bengali Redaktion - Anil Chatterjee
অনিল চট্টোপাধ্যায়, ডিডাব্লিউ বাংলার দিল্লি প্রতিনিধিছবি: DW

তবে হ্যাঁ, দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যে কিছুটা হলেও অক্সিজেন জোগাতে পেরেছেন মোদী সন্দেহ নেই৷ আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে হয়েছে সাত শতাংশের ওপরে৷ দ্বিতীয় বড় ইতিবাচক ইঙ্গিত মুদ্রাস্ফীতির হার নেমে এসেছে পাঁচ শতাংশে৷ এখানেও পুরো কৃতিত্ব আমি দিতে পারছি না মোদী সরকারকে৷ এটা অনেকটাই হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায়৷ মোটা বিদেশি লগ্নি এখনো মোদী টানতে পারেননি৷ কর সংস্কারে হাত দিতে গিয়ে হাত পুড়িয়েছেন৷ শেয়ার বাজারে লেনদেনকারী বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির পুরনো মুনাফার ওপর কর চাপাতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে৷ বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে৷ অন্যদিকে পরিকাঠামো উন্নয়ন তথা শিল্পায়নে ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া' নীতির রোডম্যাপ কার্যকর করতে গিয়ে সংসদে জমি অধিগ্রহণ বিল এবং পণ্য ও পরিষেবা কর বিল পাশ করাতে হিমশিম খাচ্ছে মোদী সরকার, যেহেতু সংসদের উচ্চকক্ষে সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতিও ফাইলবন্দি৷ এক কথায় সার্বিক আর্থিক সংস্কারে মোদী সরকারের এখন ন যযৌ ন তস্থৌ অবস্থা৷

উপসংহারে বলা যায়, এ সব সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্বে ভারতের বিশাল বাজারকে কোনো দেশই অস্বীকার করতে পারে না৷ আর্থিক সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে মোদী আগামী চার বছরে সেটাকে কাজে লাগাতে পারবেন বলে আশা করা যায়৷ যদি পারেন, তাহলে মোদী উচ্ছ্বাস আবার ফিরে আসবে৷ সফল হবে ভারতের বিশ্বায়নের ধারাবাহিকতা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান