ভারতে শুরু করোনা ভ্যাকসিনের ড্রাই রান
২৮ ডিসেম্বর ২০২০এখনো পর্যন্ত সরকারের ইঙ্গিত, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়ে যাবে। কাদের কখন দেয়া হবে, সেই তালিকাও তৈরি। অক্সফোর্ডের টিকাও তৈরি। ভারত বায়োটেক ও ফাইজারও অনুমতি চেয়েছে। এখন শুধু চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা। তার আগে সোমবার অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাট, আসাম ও পাঞ্জাবে ভ্য়াকসিনের ড্রাই রান হচ্ছে।
ড্রাই রান মানে শুধু টিকাটা দেয়া হচ্ছে না। বাকি সব কিছু দেখা হচ্ছে। টিকা যাঁরা দেবেন, তাঁরা কতটা প্রস্তুত, যে কোল্ড স্টোরেজে টিকা রাখা হবে তার অবস্থা কেমন, সেখান থেকে টিকা দেয়ার কেন্দ্রে কীভাবে ভ্যাকসিন যাবে তার ব্যবস্থা, কীভাবে দেয়া হবে, কাদের দেয়া হবে, সব দেখে নেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রস্তুতির মধ্যে কোনো ফাঁক আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখাই ড্রাই রানের উদ্দেশ্য। যাতে ভ্যাকসিন দেয়া যখন শুরু হবে, তখন যেন কোনো গোলমাল না হয়, সমালোচনার জায়গা না থাকে। দিল্লি এই ড্রাই রানের তালিকায় না থাকলেও এখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিনিয়ার সিটিজেনদের তালিকা মিলিয়ে দেখে নেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত দুই হাজার ৩৬০টি প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছে, সাত হাজার পেশাদারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাঁরা বাকিদের শেখাচ্ছেন। সোমবার যে ড্রাই রান হচ্ছে, সেখানে ভ্যাকসিন কেন্দ্রে পাঁচটি করে সেশন হবে। প্রতিটি সেশনে ২৫ জন করে স্বাস্থ্যকর্মীকে ডাকা হয়েছে। প্রতিটি জায়গায় অ্যাডভার্স এফেক্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন(এইএফআই) গঠন করা হয়েছে। যাতে ভ্যাকসিন নেয়ার পর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সামাল দেয়া যায়।
কোন ভ্যাকসিন দেয়া হবে?
ভারতে এটাই এখন সব চেয়ে আলোচিত প্রশ্ন। মোট তিনটি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক জরুরি ভিত্তিতে দেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। তারা যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানাচ্ছে। কিন্তু বায়োনটেক-ফাইজারের ক্ষেত্রে তা বলা যাচ্ছে না। ভারতের নিজস্ব উদ্যোগ ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিনের চূড়াস্ত পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদনের সম্ভাবনা বেশি। তবে পুরোটাই কর্তৃপক্ষের হাতে। তারা চাইলে বা দ্রুত সব তথ্য পেলে যে কোনো সময় তিনটি বা দুইটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন তারা দিতে পারে।
প্রবীণ সাংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সেরামের কাছে চার কোটি ডোজ টিকা আছে। তারা ভ্যাকসিন উৎপাদনের গতি অনেকটাই বাড়াচ্ছে। ফেব্রুয়ারি থেকে তারা মাসে ১০ কোটি ভ্যাকসিন তৈরি করবে।''
তবে এর সবটাই ভারত পাবে না। বাংলাদেশ সহ অন্য দেশেও পাঠানো হবে। সেরাম আগেই জানিয়েছিল, তাদের ভ্যাকসিনের দুইটি ডোজের জন্য এক হাজার টাকার মতো লাগবে।
দেরি কেন?
যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। শুরু করে দিয়েছে অ্যামেরিকা এবং ইইউ-র দেশগুলি। আরো কিছু দেশেও ভ্যাকসিন চালু হয়ে গেছে। সেখানে ভারতে সব কিছু হাতের কাছে থাকলেও ভ্যাকসিন চালুর ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে কেন?
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সূত্র জানাচ্ছে, তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে না। সব কিছু নিশ্চিত করেই কাজে নামা হচ্ছে। ভারতে ইউনিভার্সাল ইমিউনাইজেশন প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে চলে। জাতীয় নির্বাচনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞও সাফল্যের সঙ্গে সামলানো হয়। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিন সকলকে দেয়া তার চেয়ে অনেক বড় ও সময়সাপেক্ষ কাজ। সে জন্যই সব দিক ভালো করে দেখে নিয়ে ভ্যাকসিন চালু করা হচ্ছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার মতে, ভারত বায়োটেকের টিকাও যাতে একসঙ্গে চালু করা যায়, সেই বিষয়টি না কি মথায় রাখা হচ্ছে। যদিও এই ধরনের কথা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অন্য সূত্র।
নতুন বছরের গোড়াতেই করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই)