ভারতে পরিবেশের নাভিশ্বাস
১৪ আগস্ট ২০১৩নদী থেকে তোলা বালুর ব্যবসা নতুন নয়৷ কিন্তু হালে বিষয়টি সামনে আসে দিল্লির সংলগ্ন উত্তর প্রদেশের নয়ডা অঞ্চলে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের একজন মহিলা অফিসার যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু খনন বন্ধ করার এবং কয়েক ডজন লরি আটক করার আদেশ দেবার পর৷ সঙ্গে সঙ্গে বালু মাফিয়ার সমর্থনে এগিয়ে আসে উত্তর প্রদেশের শাসকদলের রাজনীতিকরা৷ সামান্য এক আমলার আদেশে তাঁদের এই রমরমা অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে? না, কিছুতেই তা হতে দেয়া যায়না৷ ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সাসপেন্ড করা হয় ঐ অফিসারকে৷ ঐ ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে শুরু হয় বিতর্ক৷
নদীবক্ষের বালু যথেচ্ছভাবে তোলা হলে পরিবেশের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে৷ এই অবৈধ খনন রোধে তাই জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ জারি করেছে যে, পরিবেশ মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়া বালু তোলা যাবেনা৷ বালু খননে নদীর ইকো-সিস্টেমের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে সে সম্পর্কে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে নদীর জলস্তর নেমে যায়৷ ভূগর্ভের সঞ্চিত জলের পরিমাণ কমে যায়৷ জলাভাব দেখা দেয়, অগভীর কুয়োতে জল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে৷
যমুনা নদীবক্ষে ১৫ থেকে ২০ ফুট বেআইনি খননে যমুনার জলপ্রবাহ ৫০০ মিটার পুবে সরে গেছে৷ উত্তর প্রদেশের পশ্চিমে হিন্দোন নদী শুধু অবৈধ বালু খননের জেরে শুকিয়ে গেছে৷ উল্টোটাও ঘটে৷ বালু তোলার ফলে নদী পাড়ে ক্ষয় হয় দ্রুত৷ বর্ষায় নদী পাড় ছাপিয়ে বন্যা আসে৷ ভাসিয়ে নিয়ে যায় জনপদ, ঘরবাড়ি, খেতখামার৷ মোহনার দিকে বালু তোলা ফলে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে বিপন্ন করে মিষ্টি জলের জলজ প্রাণী সম্পদ, জীববৈচিত্র্য৷
সমুদ্রতীর থেকে লাগাতার বালু তোলা হলে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে মৎসজীবীদের জীবন ও রুজি রোজগার বিপদে পড়বে৷ সমুদ্রের জলজ প্রাণী – যেমন বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসে সমুদ্রতীরে, সেটা ব্যাহত হবে৷ এ সব নিয়ে রাজনীতিক এবং মাফিয়াচক্রের মাথামাথা নেই৷ কেনই বা থাকবে? তাদের চাই বখরা৷ সেখানে কেউ বাগড়া দিলে তার নিস্তার নেই৷ নির্বাচনী তহবিলে টাকা আসার পথ বন্ধ হতে দেয়া যায়না৷ তাই দুর্গাশক্তি নাগপালের মত অফিসারকে সাসপেন্ড হতে হয়৷
তবে হ্যাঁ, অবৈধ বালু তোলা আটকে গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে নির্মাণশিল্প৷ আটকে যাবে হাইওয়ে, বাঁধ, মেট্রো রেলের মত ইমারতি অবকাঠামো এবং আবাসন প্রকল্পের কাজ৷ বালু যেহেতু নির্মাণশিল্পের এক অত্যাবশ্যক উপকরণ, তাই সরবরাহে টান পড়ায় আবাসনের দাম ইতিমধ্যেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে চলেছে, যদি না বালুর বিকল্প জোগান সুনিশ্চিত করা যায়৷ অনেকে বিদেশ থেকে আমদানির প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু সেটা কতটা বাস্তবসম্মত হবে বলা মুশকিল৷
তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের ইকো-সিস্টেমকে বাঁচাতে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে এক বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা জরুরি৷ দেশের শীর্ষ আদালত সেই কাজের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ দুঃখের বিষয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব চোখে পড়ে৷ অশুভ আঁতাত না থাকলে অবৈধভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ এভাবে লুণ্ঠিত হতে পারতো না৷