রক্তদান, জীবনদান
১৬ জুন ২০১৩রক্তপ্রবাহ প্রতিনিয়ত মানবদেহে জোগায় পুষ্টি উপাদান, অক্সিজেন, প্রোটিন৷ অপসারিত করে দূষিত পদার্থ৷ মানবদেহে থাকে গড়ে পাঁচ লিটার বা এক গ্যালনের বেশি রক্ত৷ এর অর্ধেক হলো প্লাজমা, যাতে থাকে প্রোটিন, যা রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে৷ থাকে গ্লুকোজ ও অন্যান্য দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদান৷ তরল রক্তে অসংখ্য সেল ও প্রোটিন থাকে বলে জলের চেয়ে রক্ত ঘন হয়৷
দুমাস অন্তর রক্ত দেয়া যায়৷ রক্ত দিতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট৷ রক্ত নেবার আগে দাতার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়৷ দেখা হয় দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ির গতি এবং হিমোগ্লোবিন৷ একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ ইউনিট রক্ত দিতে পারে৷ রক্ত নিতে জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়৷ একবার ব্যবহারের পর তা ফেলে দেয়া হয়৷
রক্তের সেলের মধ্যে অর্ধেকটা হলো রেড ব্লাড সেল, যা অক্সিজেন সরবরাহ করে টিস্যুতে৷ হোয়াইট ব্লাড সেল রক্তের সংক্রমণ রোধ করে৷ রক্ত সংগ্রহের পর তা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক৷ রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হয় তাতে কোনো রকম ভাইরাস আছে কিনা৷ যেমন এইচআইভি বা হেপাটাইটিস-বি, সি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিসের মত সংক্রামক রোগের ভাইরাস আছে কিনা৷ যদি থাকে তাহলে সেই রক্ত বাতিল করা হয়৷
সংক্রমণমুক্ত রক্ত বিভিন্নভাগে ভাগ করা হয়৷ যেমন, লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা এবং ব্লাডলেটস অনুসারে ভাগ করে বিভিন্ন রোগীকে তা দেয়া হয়৷ এক ইউনিট রক্ত দিলে তিনজনের জীবন বাঁচানো যায়৷ রক্তদাতার রক্তে কোনো সংক্রমণ থাকলে তাও ধরা পড়ে এবং সেইমতো চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়৷
ভারতে রক্তদাতাদের ৯০ শতাংশ পুরুষ এবং মাত্র ৬ থেকে ১০ শতাংশ মহিলা৷ ভারতের মতো দেশে মহিলাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে৷ তাঁরা রক্তাল্পতায় ভোগে বেশি৷ তাই সুস্থ রেড ব্লাড সেল যথেষ্ট পরিমাণে নেই৷ হিমোগ্লোবিন কম থাকার কারণ প্রোটিন ও আয়রণের অভাব৷ ঋতুকালীন সময়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়াও একটা কারণ৷ রক্তাল্পতা এটা শুধু নিম্নবিত্তদের মধ্যেই যে দেখা যায়, তা নয়, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের মধ্যেও দেখা যায়৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, কোনো দেশের রক্তের চাহিদা থাকে সেই দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ৷ অনেক দেশে চাহিদা অনুযায়ী সুস্থ রক্তের জোগান কম৷ এটা একটা বড় সমস্যা বটে৷ ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী ভারতে বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১,৫৬৪ এবং সরকারি ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ৯৮১৷ এছাড়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা হবে আড়াই হাজারের মতো৷
প্রতি দু'সেকেন্ডে কারো না কারোর রক্ত দরকার হয়৷ বছরে চার কোটি ইউনিট রক্ত দরকার হয়৷ পাওয়া যায় মাত্র ৪০ লাখ ইউনিট৷ সবথেকে বেশি দরকার হয় ‘ও' টাইপ রক্ত৷ রক্ত বেশি লাগে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত ব্যক্তি কিংবা কেমোথেরাপিকালে ক্যান্সার রোগীর৷ বছরে লাখেরও বেশি নতুন ক্যানসার রোগ ধরা পড়ে৷