1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানসিক চাপের সমস্যা

৭ জুন ২০১৩

প্রাপ্তবয়স্কদের ‘স্ট্রেস' বা মানসিক চাপের উৎস যে মায়ের পেটে থাকতে পারে, তা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা৷ দেখা গেছে, এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বয়সও অনেক দ্রুত বাড়ে৷

https://p.dw.com/p/18lsD
ছবি: Fotolia/F. Prochasson

উৎস মায়ের পেটেই

স্ট্রেস বা মানসিক চাপের অনেক রূপ ও নানা কারণ রয়েছে৷ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশুর জন্মের উপক্রম হলে ডাক্তাররা হরমোনের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে তার ফুসফুসকে আরো পরিণত করতে বাধ্য হন৷ কিন্তু মায়ের পেটে শিশু তখন চাপের মুখে পড়ে৷ তার মস্তিষ্কের বয়স দ্রুত বাড়ে৷ গবেষকদের ধারণা, স্মৃতিভ্রম, ডায়াবিটিস বা স্ট্রোকের মতো বিপদের আশঙ্কাও তখন বেড়ে যায়৷

গুস্তাভ-এর কথাই ধরা যাক৷ সে জানে না, তাকে নিয়ে ঠিক কী করা হচ্ছে৷ এখনো অবশ্য সে অস্থির হয়ে ওঠে নি৷ গবেষকরা তার উপর এক পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ প্রায় ৮০টি শিশুর উপর এমন পরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ তাদের মধ্যে অর্ধেক মায়ের পেটে থাকতেই মানসিক চাপের মুখে পড়েছিল৷ বাকি অর্ধেককে তেমন কিছুর মুখোমুখি হতে হয়নি৷ মাটিয়াস শোয়াব বললেন, ‘‘আমি একটা গল্প বলতে শুরু করছি, তুমি চেষ্টা করো গল্পের শেষটা বলতে৷'' গুস্তাভ সহজে দমে যাবার পাত্র নয়৷ গল্প সে ভালোই বলতে পারে৷ গবেষণা প্রকল্পের প্রধান মাটিয়াস শোয়াব ইচ্ছা করে তাকে ঘাবড়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন৷ মাটিয়াস শোয়াব বললেন, ‘‘আচ্ছা, দিগন্তে আবার আলো ফুটে উঠলো কেন? কেন এমনটা হলো?''

উত্তরটা সে জানে না৷ গুস্তাভ অস্থির হলে তার মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্দায় ফুটে ওঠে৷ রক্তের চাপ ও হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বাড়লেও তা ধরা পড়ে৷ এই পরীক্ষায় দুই দলের শিশুদের মধ্যে তফাত চোখে পড়ে৷ শোয়াব বললেন, ‘‘যে সব শিশু মায়ের পেটে থাকতেই স্ট্রেস বোধ করেছে, তারা সাধারণত পরীক্ষার আগেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে৷ সেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যেতে পারে৷ তারা অস্থির, নার্ভাস হয়ে পড়ে৷ ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না৷ ছটফট করে, বসে থেকেও জোরে-জোরে পা দোলায়৷''

Flash-Galerie MEDICA Messe Farbiger Ultraschall
মায়ের পেটে থাকতেই শিশুর যত্নের প্রয়োজনছবি: Messe Düsseldorf/ctillmann

মস্তিষ্কের কাঠামো ও বয়স

পরের পর্যায়ে ডাক্তাররা শিশুদের মস্তিষ্ক আরও ভালো করে পরীক্ষা করেন৷ তাঁরা জানতে চান, মস্তিষ্কের কাঠামোর মধ্যেও তফাত খুঁজে পাওয়া যা কি না এবং মস্তিষ্কের জৈবিক বয়সও বোঝা যায় কি না৷ তাঁদের মতে, যে সব শিশু মায়ের পেটে থাকতে মানসিক চাপে ভুগেছে, তাদের মস্তিষ্কের বয়স অনেক দ্রুত বাড়ে৷

মানুষের ক্ষেত্রে সম্ভব না হলেও মায়ের পেটে থাকতে ভেড়ার শিশুর উপর পরীক্ষা চালানো যায়৷ শোয়াব বললেন, ‘‘একা হয়ে পড়লেই স্ট্রেস দেখা দেয়৷ এরা পালের মধ্যে থাকতে অভ্যস্ত৷ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমরা এদের সপ্তাহে দু-বার ৩ ঘণ্টার জন্য বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলাম৷''

মায়ের মনে একবার স্ট্রেস তৈরি হলে বিশেষ হরমোনের মাধ্যমে তার পেটের শিশুর মনেও তা চলে যায়৷ মা ও শিশুর মধ্যে যোগাযোগের সূত্র যে নাড়ি, তার মধ্যে রক্তের পরিমাপ করে তা টের পাওয়া যায়৷ রক্তসঞ্চালন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়৷ ফলে শিশুর শরীরে যথেষ্ট পুষ্টি ঢোকে না৷

মানুষ বা ভেড়ার তুলনায় ধেড়ে ইঁদুরের আয়ু আরও কম৷ ইঁদুরের ক্ষেত্রে গবেষকরা আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছেন, মায়ের পেটে স্ট্রেস হলে কীভাবে তাদের আয়ুর উপর প্রভাব ফেলে৷ ইঁদুরদের বেশি স্ট্রোক হয়, তার তীব্রতাও হয় মারাত্মক৷ ঘন ঘন মানসিক চাপের ফলে রক্তের চাপ বেড়ে যায়, শিরা শুকিয়ে যায়৷

রোগের ভয়

শোয়াব বলেন, ‘‘স্ট্রোক হলে ঠিক তার পরেই দ্রুত ধমনী বা শিরা টেনে আরও চওড়া করতে হয়, যাতে মস্তিষ্কের যে কোষের ক্ষতি হয়েছে, তাতে রক্ত সঞ্চালন ঘটতে পারে৷ কিন্তু শিরা আগে থেকেই সরু হয়ে গেলে কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে স্ট্রোক মারাত্মক আকার ধারণ করে৷ মানসিক চাপ না থাকলে কিন্তু সেই পশুর এমন দশা হয় না৷''

মায়ের পেটে সন্তানের স্ট্রেস জিনের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, একই প্রকল্পের আওতায় আরেক দল গবেষক তা পরীক্ষা করছেন৷

গোটা ইউরোপ জুড়ে এ বিষয়ে গবেষণা চলছে৷ তাঁদের লক্ষ্য একটাই৷ এর প্রভাব আরও ভালোভাবে বুঝে একদিন এর মোকাবিলা করতে ওষুধ তৈরি করা৷

বিজ্ঞানীদের আশা, সেই দিন এলে আরও বেশি মানুষ বয়স বাড়লেও সুস্থ অবস্থায় থাকতে পারবেন৷

এসবি/ডিজি