পাচার নারী-শিশুদের জন্য চুক্তি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাচার হওয়া নারী-শিশুদের দেশে ফেরাতে আমরা শিগগিরই ভারতের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে একটি এমইউ স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি৷ আগামী মাসেই আমার সঙ্গে ভারতের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের একটা বৈঠক হবে৷ সেখানে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হবে৷ দেশে অথবা ভারতে গিয়ে আমরা এই চুক্তি স্বাক্ষর করব৷''
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের দশ নারীকে ১১টি শিশুসহ আটক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতা ভিত্তিক সংগঠন মানবাধিকার সুরা মঞ্চ ‘মাসুম'৷ এ ঘটনায় ভারতের মানবাধিকার কমিশনকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়ে আটক নারীদের দ্রুত মুক্তি দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কিরিটী রায়৷ এই নারীদের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ডয়চে ভেলেকে চুক্তির প্রসঙ্গটি বলেছেন৷
কিরিটী রায় এক বিবৃতিতে বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর বিথারি হাকিমপুর থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনার স্বরূপনগর থানা পুলিশ ঐ নারীদের আটক করে৷ ঐ সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলেন৷ পাচারকারীরা তাদের গুজরাটে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে এসেছিল৷ কিন্তু যখন তারা বাংলাদেশে ফিরছিলেন, তখনই তাদের আটক করা হয়৷ ঐ নারী ও শিশুদের যেভাবে আটক করা হয়েছে, তা ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১২ সালের একটি নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷
ঐ নির্দেশনায় বলা আছে, যারা পাচারের শিকার হয়ে দেশান্তরী হন, তাদের কাছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈধ কাগজপত্র বা পাসপোর্ট থাকে না৷ পাচারের শিকার হওয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা করা যাবে না৷ তিনি স্বেচ্ছায় ভারতে না গেলে বা অপরাধে না জড়ালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেওয়া যাবে না৷
বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশ যদি ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে থাকে, তাহলে সেই মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়৷ আদালতের এই নির্দেশনা অমান্য করে স্বরূপনগর থানা পুলিশ ঐ ১০ নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলেও কিরিটী রায়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে৷ বশিরহাটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপনের আগে তাদেরকে শারাপুল হাসপাতালে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় বলেও মাসুম সাধারণ সম্পাদক জানান৷ বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঐ নারীদের ১৪ দিনের রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, এখন তারা কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন৷
মানবপাচার নিয়ে কাজ করে যশোরের ‘রাইটস যশোর' নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিরিটী রায়ের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে৷ তিনি আমাকেও কিছু কাজ দিয়েছেন৷ ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসা নারীদের নাম-ঠিকানা তিনি দিয়েছেন৷ আমরা সেগুলো নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কিছু কাজ করছি৷ আমাদের দেশে নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ টিম যতটা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে ভারতে সেভাবে কাজটা হয় না৷ ফলে অনেক নারী ও শিশুকে সেখানে কারাগারে আটকে থাকতে হয়৷ আমরাও চাই দ্রুত এসব ভিকটিম নিজ দেশে ফেরত আসুক৷''
রাইটস যশোরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে যশোর ও আশেপাশের সীমান্ত দিয়ে পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫৭ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷ বিনয় মল্লিক বলেন, সীমান্ত ছাড়াও নৌপথ বা আকাশপথেও পাচারের ঘটনা ঘটছে৷ সেসব তথ্য আমরা জানতে পারছি না৷ ভারতের এমন অনেক এলাকা থেকে আমাদের কাছে পাচারের তথ্য আসছে, যা আগে কখনও আসেনি৷ তিনি বলেন, এ সব থেকে মনে হচ্ছে, পাচার যেমন বাড়ছে, আবার আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে দেশে ফিরিয়ে আনছি৷
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচারের ৬০ ভাগেরও বেশি কিশোরী৷ এদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে৷ বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার নারী ও শিশু দালালের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হচ্ছে৷ এদের মধ্যে ছেলে-শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার আর মেয়ে-শিশু প্রায় ১০ হাজার৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই পাচারের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করে৷ আমরা পাচার প্রতিরোধের পাশাপাশি জনসচেতনতায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি৷ প্রতিনিয়তই পুলিশ পাচারকারীদের ধরছে, পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের উদ্ধার করছে৷ অনেক পাচারকারীর শাস্তিও নিশ্চিত করা হয়েছে৷''