1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুম্বইতে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশি নারী

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৪ এপ্রিল ২০১৬

বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুম্বইয়ের যৌনপল্লিতে নারী পাচার বাড়ছে বলে ভারতের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে৷ তাদের তথ্য অনুয়ায়ী, নগরীর কামাথিপুরার প্রধান যৌনপল্লিতে বাংলাভাষী যৌনকর্মীর সংখ্যা এখন রেকর্ড পরিমাণ৷

https://p.dw.com/p/1IO0c
মানবপাচারের প্রতীকী ছবি
ছবি: AFP/Getty Images

যৌনকর্মী পাচার নিয়ে কাজ করা মুম্বই ভিত্তিক এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির নাম ‘প্রিরানা'৷ সংস্থাটির কো-ফাউন্ডার প্রিতি পাটকার জানান, ‘‘বাংলাদেশ থেকে নারী পাচার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে যৌনপল্লিতে বাংলাদেশি যৌনকর্মী বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে৷'' তাই এবার তাদের উদ্ধারে রাজনৈতিক এবং সামাজিক উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘নারী পাচারকারীরা বেশ বেপরোয়া এবং তারা ভালো চাকরি এবং জীবনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে নারীদের পাচার করে আনে৷''

জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যৌনকর্মীদের ২১৩ জন সন্তানকে প্রিরানা-র নাইট কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করা হয়৷ এর মধ্যে ১২৮ জন বাংলাভাষী মায়ের সন্তান৷ শহরের অন্যান্য এলাকার যৌনপল্লিতেও নাকি ঐ একইরকম চিত্র৷ তবে এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের যৌনকর্মী ওআছেন৷

এলিনা খান

ভারতের সরকারি হিসেবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আছে সেখানে৷ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিদিন শত শত বাংলাদেশি ৪০০০ কিমি. সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে৷ এরা গরিব এবং এদের বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালরা সংগ্রহ করে৷

এশিয়ার ভেতরে অবৈধ অভিবাসন বেড়েই চলেছে৷ এর পেছনে আছে মানব পাচারকারী এবং মাদক পাচারকারীরা৷ জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধ বিষয়ক অফিস (ইউএনওডিসি)-এর তথ্য মতে, বছরে এই অবৈধ ব্যবসার আয় অন্ততপক্ষে ২ বিলিয়ন ডলার৷

তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় মানবপাচার বিশ্বের মধ্যে দ্রুত গতিতে বাড়ছে৷ আর বিশ্বে এই মানবপাচারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরই দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান৷

ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবছর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ১,৫০,০০ মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে৷ তবে প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়েও বেশি হতে পারে৷ তাছাড়া এশিয়ায় মানবপাচার বেড়ে যাওয়া তার প্রভাবও পড়ছে এই এলাকায়৷

প্রিতি পাটকার জানান, ‘‘বাংলাদেশ থেকে মুম্বইয়ে পাচার হয়ে আসা নারীরা তাদের অধিকারের জন্য সহায়তার বিষয়টি জানেন না এবং সহায়তা নিতে ভয় পান৷ তাই যৌনপল্লি থেকে উদ্ধারের পর তারা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিতে চান না৷''

বাংলাদেশ-ভারত গত বছর মানবপাচার বন্ধে একটি সহযোগিতা চুক্তি সই করে৷ এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো মানবপাচারের তথ্য বিনিময়, তদন্ত এবং পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা৷ এই চুক্তর ফলে মানবপচারের শিকার যারা, তাদের উদ্ধার এবং পুনর্বাসনের কাজ সহজ হয়েছে৷ কারণ আগে তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবেই বিবেচনা করার হতো৷

মুম্বই পুলিশের মুখপাত্র জানান, ‘‘এখন আমরা তাদের উদ্ধার করে সরাসরি যেসব এনজিও তাদের দায়িত্ব নিতে এবং পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের কাছে হস্তান্তর করি৷ এর ফলে পাচার হওয়া নরীদের জন্য ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে৷''

এই যেমন গতমাসেই একজন বাংলাদেশি মানবপাচারকারী দণ্ডিত হয়েছে ভারতে৷ পাচারের শিকার বাংলাদেশে পুনর্বাসিত এক নারীর ভিডিও বক্তব্যের ভিত্তিতে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে খবর৷

এ নিয়ে মানবাধিকার নেতা এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাচারকারী নানা কৌশলে নারী পাচারের কাজ করে৷ তারা চাকরি এবং ভালো জীবনের প্রলোভন ছাড়াও বিয়ে, প্রেম, বিয়ের প্রলোভন বা পরিবারের সবাইকে একযোগে চাকরির প্রলোভন দেয়৷ যারা এই ফাঁদে পড়েন তারা নিজেরাও জানেন না যে, আসলে তারা কোথায় যাচ্ছেন৷ পাচারকারীরা এমন কৌশলে কাজ করেন যে তাদের ধরাও সহজ হয় না৷''

তিনি জানান, ‘‘পরচারকারী এখন সরাসরি কাজ না করে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনকে কাজে লাগায়৷ অর্থাৎ বিষয়টি তারা এভাবেই বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন৷''

এলিনা খানের কথায়, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক ক্যাম্পেইন হয়েছে৷ তাই মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার এখন কমে এসেছে৷ আজ সকলেই জানে যে, ওখানে চাকরির নামে পাচার করা হয়৷ কিন্তু ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে পাচারের বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো সচেতনতামূলক কর্মসূচি এখনও নেই৷ সরকার সেটা করলে পাচার কমে আসবে বলেই আমার আশা৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য