ভারতে অনুমোদনের পরেই শুরু ভ্যাকসিন বিতর্ক
৪ জানুয়ারি ২০২১অনুমোদনের পরেই ভারতেভ্যাকসিন-বিতর্ক তুঙ্গে। যথারীতি এর মধ্যে ঢুকে গিয়েছে রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। দেশাত্মবোধের জিগির এবং দেশের স্বার্থরক্ষার কথা এবং সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ সেই বিতর্ক।
ভারতে দুইটি ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড, যা তৈরি করছে পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট। দ্বিতীয়টি হলো ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চের তৈরি করা কোভ্যাকসিন। বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রথমে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেয়। পরের দিন ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিনকেও। তারপর ড্রাগ কন্ট্রোলার অফ ইন্ডিয়া দুইটি ভ্যাকসিনকেও ছাড়পত্র দিয়েছেন।
বিতর্ক শুরু হয়েছে তারপর থেকেই। ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিন নিয়ে প্রধান আপত্তি হলো, কোভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। এখনো শেষ হয়নি। সেই পরীক্ষার ফলাফল পুরোপুরি সামনে আসেনি। তার আগেই কি করে এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হলো?
কংগ্রেসের একাধিক নেতা দাবি করেছেন, তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে যেন কোভ্যাকসিন দেয়া না হয়। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর টুইট করে বলেছেন, ''ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিনের অনুমোদন সময়ের আগেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফল মারাত্মক হতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত পরীক্ষা শেষ না হচ্ছে, ততক্ষণ এই ভ্যাকসিন যেন দেয়া না হয়।'' একই ধরনের আপত্তি জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব। তিনি তো আরো একধাপ এগিয়ে বলেছেন, বিজেপি-র ভ্যাকসিন তিনি অন্তত নেবেন না।
তাঁরা যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা বিশেষজ্ঞদের মনেও আছে। এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যখন তাঁদের ভ্যাকসিন স্পুটনিক ৫ চালু করার কথা ঘোষণা করেন, তখন প্রশ্ন ওঠে, পুরো পরীক্ষা না করে ভ্যাকসিন চালু করা বিপজ্জনক এবং অনুচিত। ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিন নিয়ে আপত্তি এখানেই।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এই সব অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, ''এর পিছনে আছে নিখাদ রাজনীতি। শশী থারুররা এই সব কথা বলে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন। সব বৈজ্ঞানিক প্রটোকল অনুসরণ করেই কোভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।'' ড্রাগ কন্ট্রোলার জানিয়েছেন, দুইটি ভ্যাকসিনই ১১০ শতাংশ নিরাপদ।
বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার দাবি, ''কংগ্রেস ও বিরোধীরা ভারতের সাফল্য দেখতে পারে না। তাদের এটুকু বোঝা উচিত, তারা যে মিথ্যা কথাগুলো বলছে, তাতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলি সুবিধা পাবে।'' থারুরের জবাব, ''ভারতের ভ্যাকসিন সফল হলে আমিও গর্ববোধ করব। কিন্তু সেটা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পরেই।''
এটা ঘটনা, ভারত বায়োটেকের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। ২৯ ডিসেম্বর তাঁরা জানিয়েছিলেন, ১২ হাজার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা হয়েছে। তাঁদের ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ।
প্রশ্ন হলো, পরীক্ষাপর্ব কবে শেষ হবে, কোভ্যাকসিনের উৎপাদন কবে শুরু হবে, প্রতি মাসে কত তৈরি হবে? অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন যেমন এখনই পাঁচ কোটি তৈরি আছে। আর মাস দুয়েকের মধ্যে আট কোটি ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে। তারা সরকারকে ভ্যাকসিন ২০০ টাকায় দেবে। আর সরকার অনুমতি দিলে বাইরে এক হাজার টাকায় বিক্রি করতে চায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্র জানাচ্ছে, এমন সম্ভাবনাও আছে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনই প্রথমে দেয়া হবে। কোভ্যাকসিনকে প্রথমে রাখা হবে ব্যাক আপ হিসাবে।
দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক কভার করছেন প্রবীণ সাংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''সরকারের দাবি, এই ভ্যাকসিন ভালোভাবে কাজ করবে। তবে ভারত যদি বিশ্বে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে চায়, তা হলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটা প্রভাব ফেলতে পারে।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এনডিটিভি)