‘ভাইরাল হওয়াই এখন মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে’
১২ এপ্রিল ২০২৪গণমাধ্যমের সম্প্রসারণ, নতুন পরিচালক, প্রযোজক, অভিনয় শিল্পীদের উত্থানে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে বেশি কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে৷ টেলিভিশন, থিয়েটারের বাইরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেছে দর্শকদের সঙ্গে শিল্পীদের যোগাযোগ৷ রুপালি পর্দার বাইরেও তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনুসারীরা৷
তবে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে দুই ধরনের মনোভাবই রয়েছে৷ অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘‘আমার কাছে মনে হয় পরিবর্তন মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা আমাদের থাকা উচিত৷''
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' টকশো-তে বিনোদনের একাল ও সেকাল, বিনোদনের মান নিয়ে আলোচনায় অতিথি ছিলেন শিল্পী ও নির্মাতা আফজাল হোসেন এবং অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলোয়ার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাঁধন বলেন, ‘‘আমার ফলোয়ার্স অনেক আছে কিন্তু কতজন আমাকে পছন্দ করে বা আমার ভক্ত সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই৷ বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেটা ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুক যা হোক৷ যারা আমাকে আমার কাজের জন্য পছন্দ করে তারা আমি যেমন, যে কাজ করছি সেগুলো দেখেই আমাকে পছন্দ করেন৷ তারা যে সবাই আমার ফলোয়ার্সের মধ্যে আছে বা সবাই আমাকে ফলো করছে সবসময় এমন নয়৷ আমি এই পার্থক্যটা দেখেছি৷''
দর্শক নির্বাচন ও সে অনুযায়ী কনটেন্ট নির্মাণের প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা একটা পজিটিভ সময়ে কাজ করতে পেরেছি৷ কাজ করার আগে যদি ভাবতে হতো, আমাদের অনেক বড় জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে হবে, তাহলে অনেকগুলো ভালো কাজ হতো না৷''
গণমাধ্যম, নির্মাতাদের দর্শক ধরার প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যখন অনেক টেলিভিশন এলো, তখন আর অনুষ্ঠান থাকলো না৷ অনুষ্ঠান দর্শককে খাওয়ানোর বিষয় তৈরি হলো৷''
আজমেরী হক বাঁধনের অভিনীত সিনেমা ‘রেহানা মারিয়াম নূর' প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে কান উৎসবে মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলো৷ তবে ছবিটি ব্যবসা সফল কিনা সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে বাঁধন বলেন, ‘‘সুপার ডুপার হিট বলতে যা বুঝায় তা অবশ্যই ছিল না৷''
একটি মোবাইক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া বিপণন কৌশল নিয়ে প্রশ্ন ছিল দুই অতিথির কাছে৷ এ বিষয়ে বাঁধন বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্য বিষয় হচ্ছে ভাইরাল হতে হবে৷ এত কনটেন্ট এত বিজ্ঞাপন, এত খবর, এত কিছু পৃথিবীতে ঘটে যাচ্ছে এখন এটা একটা মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি আমরা কীভাবে ভাইরাল করবো একটা কিছু৷ মানুষ চিন্তা করছে তার কাজটা কয়জন দেখছে, কয়টা ক্লিক হচ্ছে, ভিউ হচ্ছে এটার জন্য তারা অস্থির হয়ে যাচ্ছে৷''
আফজাল হোসেন মনে করেন, শুধু বিজ্ঞাপন নয় যে যেখানে আছে সেই অবস্থায় যা খুশি তা করতে পারে৷ এক্ষেত্রে প্রশ্ন করার মানুষ নাই৷ যদি প্রশ্ন কেউ করে থাকে, করে ফেলে তাহলে আক্রমণ করার মানুষেরও অভাব হয় না৷ বলেন, ‘‘কোনটি ন্যায় কোনটি অন্যায় সেটাও আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না৷''
তবে ভাইরাল হওয়া দোষের কিছু নয় এমনটা মনে করেন তিনি৷ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘জনপ্রিয় করে তোলার মাধ্যমে ভাবনায় যদি একটা বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় এর মতো আসাধারণ সৃজনশীলতা আর হতে পারে না৷ যখন মানুষ ঐ অসাধারণত্ত্বকে স্পর্শ করতে পারে না তখন খুব সাধারণ বিষয় নিয়ে এসে মানুষ হৈ চৈ ফেলে দেয় এবং এটাকে আমরা ভাইরাল বলি৷ এটা আসলে সাফল্য নয়৷ বরং এই বিষয়গুলো মানুষকে দিনে দিনে নিম্নগামী করে৷’’
এসএইচ/এফএস