মিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা!
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪নিহত দুজনের একজন ১৮ বছরের চিরশ্রী জামান৷ আর ভাইটির নাম মো. বিন আলিম৷ তার বয়স হয়েছিল ১৫৷ তাদের মা জয়শ্রী জামান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক হিসেবে কর্মরত৷
ফেসবুক ব্যবহারকারী মোহাম্মদ গোলাম নবী মনে করেন, এই ঘটনার প্রথম দিনের মিডিয়া ‘কাভারেজে' যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁরা তাঁদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অবহেলা এবং বিষয়ের গভীরে না গিয়ে সস্তা সেন্টিমেন্ট উসকে দিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য একটি কলংকজনক উদাহরণ তৈরি করে দিয়েছেন৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভাই-বোনের মৃত্যুর ঘটনার মিডিয়া কাভারেজ আরেকবার প্রমাণ করল যে, সাংবাদিকতায় মেধাবী, সংবেদনশীল ও পরিশ্রমী সাংবাদিকদের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান৷ কিংবা সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের মোট সংখ্যার তুলনায় তাদের সংখ্যা অনেক কম৷''
গোলাম নবী বলেন, যাঁরা পরিশ্রমী সাংবাদিক এবং সংবাদপত্রের মান ধরে রাখার ব্যাপারে আন্তরিক তাঁদেরকে ভাইবোনের মৃত্যু নিয়ে নিম্নমানের সংবাদ কাভারেজের কার্যকারণ খুঁজে দেখতে হবে৷ নতুবা ‘‘কতিপয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দায়ভার তাঁদেরকে নিতে হবে কিংবা তাঁদেরকে এই ধরনের আচরণের বলি হতে হবে৷''
এই স্ট্যাটাসের নীচে শওগাত আলী সাগর লিখেছেন, ‘‘সেনসিটিভিটি বা সংবেদনশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ মিডিয়ার জন্য মিডিয়াকর্মীদের জন্য এটি আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ ঢাকার মিডিয়ায় এই সংবেদনশীলতা জিনিসিটা আদৌ আছে বলে মনে হয় না৷ ভাই-বোনের আত্মহত্যার মতো একটি মর্মন্তুদ খবর তৈরি করা এবং পরিবেশন করার ক্ষেত্রে রিপোর্টার থেকে শুরু করে নিউজ ডেস্কের কর্তা ব্যক্তি কেউই সংবেদনশীলতা দেখাতে পারেননি৷''
এই ঘটনায় গণমাধ্যমের ভূমিকায় মর্মাহত হয়ে একটি মতামত-বিশ্লেষণ লিখেছেন নিহতদের মা জয়শ্রী জামানের বন্ধু ও সহকর্মীরা৷ ‘মিডিয়াকে বলছি, দায়িত্বশীল হোন, প্লিজ' শীর্ষক লেখাটি ১৮ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হয়৷ লেখকবৃন্দ লিখেছেন, ‘‘...নারীর চরিত্র হননে মত্ত হয়েছে আমাদের গণমাধ্যমের একটি অংশ৷ কয়েকটি পত্রিকায় এই ঘটনায় আঙুল তোলা হয়েছে জয়শ্রী জামানের দিকে, যা আমাদের ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে৷ একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত৷ সাংবাদিকতার নীতির বাইরে গিয়ে কল্পিত গল্পগাথা যে সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে সে কথাটাও আমরা ভুলে গেছি৷''
আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী গীতিআরা নাসরীন গণমাধ্যম এমন আচরণ করতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন৷ ১৭ই সেপ্টেম্বর তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘...ভয়ে আছি, ঐশীর মতো এই জোড়া-মৃত্যুর ঘটনা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গা-গুলিয়ে, ক্ষত খুঁচিয়ে, নৈতিকতা খুন করে মিডিয়া বিক্রি করতে থাকবে কিনা৷ ‘পবিত্র পারিবারিক সম্পর্ক বিনষ্ট হয়ে সমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে' টাইপের ফাউল বাকোয়াজি বন্ধ করে জরুরি প্রশ্ন তুলবেন কিনা যে – বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তান পালনের দায়িত্ব এবং ব্যয়নির্বাহ শুধু মায়ের ওপর বর্তেছে কেন? আইনগতভাবে এক্ষেত্রে পিতাকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?''
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ