আত্মহত্যার প্রবণতা
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪জাফরুল মবীন সামহয়্যার ইন ব্লগে ‘‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস-এর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আত্মহত্যা প্রবণতা ও করণীয়'' নামে বেশ সমৃদ্ধ একটি ব্লগ লিখেছেন৷ তিনি যেমন কিছু পরিচিত ব্যক্তির উদাহরণ দিয়েছেন৷ তেমনি নানা জরিপ এবং ঘটনার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘সারাবিশ্বে প্রতি ২ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন এবং প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন সফলভাবে আত্মহত্যা করছেন৷ বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রতিবছর ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস৷''
জাফরুল মবীন তাঁর ব্লগ পোস্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে পাওয়া আত্মহত্যা সংক্রান্ত তথ্যের কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরেন৷ যেমন, ২০১২ সালে বাংলাদেশে মোট ১০,১৬৭ জন আত্মহত্যা করেছেন, অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতি ৫০ মিনিটে একজন আত্মহত্যা করছেন৷ এছাড়া বাংলাদেশে প্রতি ২.৫ মিনিটে একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকেন৷
২০১০ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃক প্রকাশিত এবং প্রফেসর এএমএম ফিরোজ ও প্রফেসর এসএম নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যাপ্রবণ৷ ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়েসিদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা৷ বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি আত্মহত্যা করেন৷ এর মধ্যে বিষপানে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি৷
মবীনের পোস্ট থেকে জানা যায়, ‘‘বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগ আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় কারণ হলেও আমাদের দেশে মানসিক রোগের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক তীব্র তাড়না বা হঠকারিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে প্রতিভাত হয়েছে৷ যৌথ পরিবারের সদস্যদের তুলনায় একক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে৷ আমাদের দেশেও অভাব-অনটন তথা আর্থিক দৈন্যতা মানসিক চাপ ও মানসিক রোগ তৈরিতে এবং আত্মহত্যার অন্যতম নিয়ামক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷ এছাড়া অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিতরা বেশি আত্মহত্যা করে থাকে৷ বাংলাদেশে শহরের তুলনায় গ্রামে আত্মহত্যার ঘটনা প্রায় ১৭ গুণ বেশি৷''
আত্মহত্যা করার আরও কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে মবীন লেখেন, ‘‘আমাদের অনেক অভিভাবকই সন্তানদের উপর প্রত্যাশার চাপ বাড়িয়ে দেন৷ সামান্য ব্যর্থতাতেও তাদের উপর নেমে আসে মানসিক নির্যাতনের খড়গ৷ অনেকেই এই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়৷''
আরেক ব্লগার রাজীব নুর একই ব্লগে লিখেছেন, ‘‘অনেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যখন জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে৷ আত্মহত্যা হলো ঈশ্বরের বিরুদ্ধে একটি ভয়ানক পাপ৷ এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ্ তা'আলা বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিণামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে পবিত্র আল কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন৷ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ...আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে উহা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে উহা সহজসাধ্য৷ (সূরা-নিসা-২৯-৩০)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে৷ যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: জাহিদুল হক