জেল খেটেও নিস্তার পাচ্ছেন না ওয়ালাদ
২৫ জুলাই ২০১৯২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে আফ্রিকান এই তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ তিনি ইসলামের প্রথমদিককার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে একটি বিশ্লেষণমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন ফেসবুকে৷ তার বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ এনে অনেক মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন বিচারের দাবিতে৷
সে বছর ডিসেম্বরে একটি আদালত ওয়ালাদকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন৷ ২০১৭ সালে তিনি আপীল করলে উচ্চতর আদালত সে সাজা কমিয়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন৷ এমনকি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষমাও চান৷
সেই দু'বছরের সাজা শেষ হয়েছে৷ ফেসবুকে আবারো ক্ষমা চেয়েছেন ওয়ালাদ৷ কিন্তু তারপরও তাকে ছাড়া হচ্ছে না৷
‘‘আমরা জানি তাকে আইনগতভাবে এখন ছেড়ে দেয়া উচিত৷ কিন্তু ৪০ লাখ মৌরিতানিয়ানের নিরাপত্তার খাতিরে তা করতে পারছি না,'' এভাবেই বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন দেশটির সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্ট মোহামেদ ওউলদ আবেদল আজিজ৷ ‘‘লাখো মৌরিতানিয়ান তার মৃত্যুর দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন৷ তাকে ছেড়ে দেয়া মানে আবারো অরাজকতা শুরু হবে৷''
সম্প্রতি ব্লাসফেমি আইন আবারো আলোচনায় এসেছে৷ এই আইনের অপব্যবহার রোধ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে সাড়া দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ ওয়াশিংটনে কিছুদিন আগে ধর্মের স্বাধীনতা বিষয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে আলবেনিয়া ও কসভোর পর মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে আরব আমিরাত এক বিবৃতিতে সই করে৷ বিবৃতিটি ছিল ব্লাসফেমি ও মুরতাদ আইনের অপব্যবহার নিয়ে৷
সেখানে বলা হয়েছে, আইনটি ব্যক্তিগত ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কার্যসিদ্ধি করতে সাধারণ মানুষকে সহিংস করে তোলার উপায় হিসেবে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়৷ ‘‘আমরা দেখেছি যে, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ধর্ম বা বিশ্বাসের সঙ্গে মেলে না এমন মত বা আদর্শের অনুসারীদের এই আইনের আওতায় অন্যায্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে,'' বিবৃতিতে বলা হয়৷
সেখানে আরো বলা হয়েছে, ‘‘আমরা সরকারগুলোকে অনুরোধ করছি যে ব্লাসফেমি ও এমন অন্য যেসব আইন আন্তর্জাতিক আইনের বিপরীতে গিয়ে মানুষের বাক স্বাধীনতা, ধর্ম ও বিশ্বাসের সুযোগ সীমিত করে , তা বাতিল করা হোক৷''
আরব আমিরাতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ব্লাসফেমি আইন কার্যকর রয়েছে৷ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এর প্রয়োগ বেশি৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানেও ব্লাসফেমি আইনের কঠোর প্রয়োগ দেখা যায়৷ সম্প্রতি আসিয়া বিবির ঘটনা এর বড় উদাহরণ৷ আদালত তাকে নির্দোষ ঘোষণা করলেও তিনি নিজ দেশে নিরাপদ ছিলেন না৷ ইউরোপে চলে আসতে হয়েছে তাকে৷
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির একটি ছিল ব্লাসফেমি আইনের প্রয়োগ৷ কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে তথ্য প্রযুক্তি আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ফৌজদারি বিধিতেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে৷
জেডএ/কেএম (এএফপি)