শুরু হলো ব্রেক্সিট আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব
১৭ জুলাই ২০১৭আপাতত কে কোথায়?
দ্বিতীয় পর্বের আলাপ-আলোচনা হবে মূলত ‘ডিভোর্স' বা ‘বিবাহবিচ্ছেদের' খরচপত্র নিয়ে৷ গত জুনে ব্রিটেন ও ইইউ-এর মধ্যে ব্রেক্সিট আলোচনার প্রথম পর্বে প্রধানত বৈঠকের সময়, পর্যায়ক্রম ইত্যাদি নির্দিষ্ট করা হয়েছিল: ২০১৭ সালের অক্টোবর অবধি প্রতি মাসে একবার করে বৈঠক বসবে – বাকি সময়টা ব্রেক্সিট সংক্রান্ত ধ্যানধারণা ও প্রস্তাব বিকাশের কাজে ব্যবহার করা হবে৷
মূল কথা হলো, ব্রেক্সিটের মূল খুঁটিনাটি নির্ধারিত হওয়ার আগে ইইউ-এর সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা হবে না – যা কিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান৷ যুক্তরাজ্য সরকার ব্রিটেনের ইইউ পরিত্যাগ ও ইউরোপিয়ান কমন মার্কেট বা যৌথ বাজারের সঙ্গে ব্রিটেনের যোগাযোগের ব্যাপারে যুগপৎ আলাপ-আলোচনা চালাতে চেয়েছিলেন৷
দ্বিতীয় পর্বের আলাপ-আলোচনা শুরু হচ্ছে ১৭ই জুলাই৷ ব্রিটেনের পক্ষে মুখ্য মধ্যস্থ হলেন ডেভিড ডেভিস; ইইউ তরফে মুখ্য মধ্যস্থ হলেন মিশেল বার্নিয়ের৷
কী নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে?
সম্ভবত যে বিষয়টিতে আপোশে আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই বিষয়টি নিয়ে: অর্থাৎ ব্রিটেনে বসবাসকারী ইইউ নাগরিক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের ভবিষ্যৎ মর্যাদা৷ প্রায় ৩০ লাখ ইইউ নাগরিক আপাতত ব্রিটেনে বাস করছেন; অপরদিকে ইইউ-তে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের সংখ্যা ১৫ লাখ৷
কিন্তু এখানেও ঐকমত্যের কোনো গ্যারান্টি নেই৷ ব্রেক্সিট আবাপ-আলোচনার প্রথম পর্বে ব্রিটেন বলেছিল যে, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে যারা ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তেমন ইইউ নাগরিকদের ব্রিটেনে থাকতে দেওয়া হবে; এমনকি যারা তার চেয়ে কম সময় ব্রিটেনে পাকাপাকিভাবে বাস করছেন, তারাও থাকতে পারবেন – তবে উভয় গোষ্ঠীকেই রেসিডেন্সির আবেদন করতে হবে; কতোদিন অবধি সেই আবেদন করা চলবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়নি৷
ইইউ ব্রিটেনের এই প্রস্তাবে বিশেষ উৎসাহ প্রদর্শন করেনি৷ বার্নিয়ের প্রস্তাবটিকে ভাসা-ভাসা ও অপর্যাপ্ত বলে অভিহিত করেছেন৷ ইউরোপের অধিকাংশ নেতা তাদের দেশবাসীদের জন্য এর চাইতে অনেক বেশি স্পষ্ট গ্যারান্টি চান; এছাড়া তারা চান যে, রেসিডেন্সি নিয়ে বিরোধের ক্ষেত্রে সেই সব মামলা ইউরোপীয় আদালত, অর্থাৎ ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস-এ যাবে, ব্রিটেনের কাছে যা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য৷
কোন বিষয়ে কোঁদলের সম্ভাবনা বেশি?
ইইউ ব্রিটেনকে যে ‘ডিভোর্সের বিল' পেশ করতে চায়, সেটাই সম্ভবত সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয়৷ ইইউ-এর ‘অ্যাসেটস', অর্থাৎ ধনসম্পত্তির যে অংশ ব্রিটেনের প্রাপ্য, তা বাদ দিয়ে ইইউ-এর প্রতি ব্রিটেনের বাদবাকি দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব – যেমন কর্মচারীদের পেনশন ইত্যাদি – দাঁড়াবে ২৫ থেকে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে৷ এছাড়া থাকবে খরচ-খরচার নানা খুঁটিনাটি: যেমন ইইউ-এর জন্য ওষুধপত্র অনুমোদন করে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি, যাদের অফিস লন্ডনে৷ প্রতিষ্ঠানটিকে ইইউ-এর কোনো শহরে নিয়ে আসার খরচ ধরা হচ্ছে আধ বিলিয়ন ইউরোর কিছু বেশি – এ তো শুধু একটিমাত্র দৃষ্টান্ত৷ স্বভাবতই ব্রিটেন ‘বিবাহবিচ্ছেদের' জন্য কানাকড়ি না দিতে হলেই খুশি৷
দু'পক্ষের মন-মেজাজ?
ব্রিটেনের প্রস্তুতি কাঁচা ও তারা যে কী চায়, তাও স্পষ্ট নয় – এই হল ইউরোপীয়দের মনোভাব৷ জুন মাসের নির্বাচনে টেরেসা মে-র ভরাডুবির ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে: ইউরোপীয় নেতৃবর্গ ‘বিশৃঙ্খলা', ‘নেতৃত্বের অভাব' ও পরিস্থিতি পুরোপুরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকার কথা বলেছেন৷
অন্যদিকেও সন্দেহের ছায়া: লন্ডনের ব্রেক্সিট প্রতিনিধি জেরেমি ব্রাউন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, ফ্রান্স অর্থব্যবসায়ের কেন্দ্র হিসেবে লন্ডনের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করছে৷
বার্নিয়ের ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার যে সময়সূচি পেশ করেছেন, সে অনুযায়ী এ বছরের মধ্যে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শেষ হবে – অর্থাৎ ইইউ-এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন সম্পর্ক নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য (অক্টোবর ২০১৮ অবধি) আট মাস বাকি থাকবে; ব্রিটেন ও ইইউ-এর তরফ থেকে ব্রেক্সিট চুক্তির অনুমোদনের জন্য আরো পাঁচ মাস৷ ২০১৯ সালের ২৯শে মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট সম্পন্ন হতে হবে৷
প্রায় সব বিশেষজ্ঞই মনে করেন যে, তা সম্ভব হবে না৷ তবে ব্রিটেন সহ ইইউ-এর ২৮টি দেশ চাইলে আলাপ-আলোচনার মেয়াদ বাড়াতে পারে৷ আরো বড় কথা, ব্রিটেন তার মন বদলালে তথাকথিত ‘৫০ নং সূত্রটি' উল্টে দেওয়াতেও কোনো বাধা নেই – অন্তত লিসবন চুক্তিতে নেই৷ তবে এক্ষেত্রেও বাকি ২৭টি ইইউ সদস্যদেশের সম্মতির প্রয়োজন পড়বে৷
জেফারসন চেজ/এসি