ম্যানেজারদের ডানা ছাঁটছে ইইউ
৬ মার্চ ২০১৩সবার নজর আপাতত সপ্তাহান্তে সুইজারল্যান্ডের গণভোটের ফলাফলের দিকে৷ সেখানকার মানুষ এমন এক রায় দিয়েছেন, যার প্রভাব গোটা ইউরোপে পড়তে বাধ্য৷ বেসরকারি কোম্পানি ও ব্যাংকের ম্যানেজারদের এতকাল কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছিল৷ এমনকি সংস্থা লোকসান করলেও মোটা টাকার বেতন ও বোনাস পকেটে নিয়ে বিদায় নিচ্ছিলেন ম্যানেজাররা৷ এবার সেই রীতি বদলে যাবে৷ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন ছাড়া সুইজারল্যান্ডের কোম্পানিগুলি ম্যানেজারদের আর এমন অস্বাভাবিক অঙ্কের পারিশ্রমিক দিতে পারবে না৷ অর্থাৎ রাষ্ট্র সরাসরি ম্যানেজারদের বেতন ও অন্যান্য আয় নিয়ন্ত্রণ করবে না, বিষয়টা ছেড়ে দেবে শেয়ারহোল্ডারদের উপর৷
এমন এক মডেল ইউরোপীয় ইউনিয়নেও আলোচিত হচ্ছে৷ তবে ইউরোপ সেই সঙ্গে আরও একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিতে চাইছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট প্রতিরোধ করা৷ মনে রাখতে হবে, ২০০৮ সালে আর্থিক সংকটের মূলেই ছিল ম্যানেজারদের বল্গাহীন ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা৷
ইউরোপীয় অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনে এ বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে৷ ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টও বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা দেখাচ্ছে৷ প্রস্তাবিত এক আইনের আওতায় ম্যানেজারদের বোনাস নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে যথেষ্ট মূলধন প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে সংকট এলে সরকার, তথা করদাতাদের কাছে হাত পাততে না হয়৷ তবে এ নিয়মের বিরুদ্ধে তাদের পাল্টা যুক্তি হলো, সংকটের এই সময়ে তহবিলে অর্থ আটকে থাকলে হিতে বিপরীত হবে৷ বেসরকারি সংস্থাগুলির ঋণের চাহিদা মেটাতে সেই অর্থ কাজে লাগানো যাবে না, ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে আসার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হবে৷
মোটকথা, ২০০৮ সালের মতো পরিস্থিতি এড়াতে চান ইউরোপের নেতারা৷ ‘বাসেল থ্রি'
নামের এই প্যাকেজ নিয়ে জোরালো তর্ক-বিতর্ক চলছে৷ গত সপ্তাহেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি দেশ আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মিলে এই মর্মে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সরাসরি ম্যানেজারদের বেতনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করে বোনাসের প্রশ্নেই কড়া নিয়ম চালু করার পক্ষে সওয়াল করছে দুই পক্ষ৷
আপাতত ব্রিটেন একাই এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে৷ তাদের পুরানো যুক্তি, লন্ডনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির অসুবিধা হলে সরকার কোনো পদক্ষেপ সমর্থন করবে না৷ অন্যদিকে ইউরোজোনের বক্তব্য, ব্যাংকিং ক্ষেত্র আর তাদের কল্পনার জগত আঁকড়ে থাকলে চলবে না – বাস্তব জগত, বাস্তব অর্থনীতি এবং মানুষের সঙ্গে তাদের একাত্ম হতে হবে৷ তবে সবাই রাজি হলেও এই উদ্যোগ কার্যকর করতে বেশ সময় লাগবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই ‘বাসেল থ্রি'
কার্যকর করার কথা ছিল৷ কিন্তু ব্রিটেন এবং কিছু ব্যাংকের আপত্তির কারণে সময়সূচিতে রদবদল করতে হয়েছে৷
বরাবরের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের পেছনে ফ্রান্স ও জার্মানির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷ ‘সিটি অফ লন্ডন'এর বিশেষ স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে তাদের কোনো সহানুভূতি নেই৷ তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থারও কোনো প্রশ্ন ওঠে না বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)