ব্রিটেনের প্রতিক্রিয়ায় চিন্তিত রাশিয়া?
১৫ মার্চ ২০১৮বুধবার ব্রিটিশ সংসদে দেয়া বক্তৃতায় টেরেসা মে ২৩ জন রুশ গোয়েন্দাকে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রিটেন ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন৷ এই ২৩ ব্যক্তি কূটনীতিক পরিচয়ের আড়ালে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন বলে ব্রিটেন মনে করছে৷ এছাড়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে দেয়া লন্ডন সফরের আমন্ত্রণও বাতিল করা হয়েছে৷ দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের যেসব বৈঠক হওয়ার কথা সেগুলোও স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন টেরেসা মে৷ আর জুন-জুলাই মাসে রাশিয়া অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপের সময় সেখানে কোনো মন্ত্রী কিংবা রাজ পরিবারের কোনো সদস্যকে পাঠাবে হবে না বলেও জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷
কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রিটেনের এই প্রতিক্রিয়া রাশিয়ার উপর সামান্যই প্রভাব ফেলবে৷ লন্ডনের থিংক ট্যাংক চেটেম হাউসের রাশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাটিয়ু বুলেগ মনে করছেন, ‘‘ক্রেমলিন এটাকে খুবই হালকা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখবে৷ এটি নিয়ে পুটিন চিন্তিত হবে না বলে মনে হচ্ছে৷''
একসময় রাশিয়ায় সবচেয়ে বড় ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ছিল ‘হার্মিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট'৷ এই কোম্পানির প্রধান বিল ব্রাউডার রয়টার্সকে বলেন, লন্ডনকে আরও শক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, নইলে আরও হামলা হতে পারে৷ ‘‘রাষ্ট্র সমর্থিত এমন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকার যদি ২৩ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার এবং বিশ্বকাপে কিছু কর্মকর্তাকে না পাঠানোর মধ্যে সীমিত থাকে, তাহলে ব্রিটেনের মাটিতে আরও হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে,'' বলেন তিনি৷
২০০৬ সালে লন্ডনে হত্যা হওয়া রাশিয়ার আরেক সাবেক গোয়েন্দা আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোর বিধবা স্ত্রী মারিনা লিটভিনেঙ্কোও মনে করছেন ব্রিটেনের প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয়৷ অবশ্য তাঁর স্বামীর হত্যার পর নেয়া পদক্ষেপের চেয়ে এবারেরটি শক্তিশালী বলে মনে করছেন তিনি৷
লিটভিনেঙ্কোকে হত্যার জন্য যে দুই রুশ নাগরিককে দায়ী মনে করেছিল ব্রিটেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে ব্রিটেনে পাঠাতে রাশিয়াকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু রাশিয়া সেটি না করায় ব্রিটেন চারজন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল৷
উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ সাবেক রুশ গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়েকে ব্রিটেনের সলসবেরি শহরের এক বেঞ্চিতে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়৷ এরপর তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ দু'জনের অবস্থা এখনও সংকটজনক, তবে স্থিতিশীল বলে জানা গেছে৷ তাঁদের শরীরে বিষ প্রবেশ করাতে ‘নোভিচক' নামে একটি ‘নার্ভ এজেন্ট' ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ উল্লেখ্য, নার্ভ এজেন্ট হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাছে বার্তা পাঠানোর কাজ ব্যহত করে৷
৬৬ বছর বয়সি সের্গেই স্ক্রিপাল রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্নেল ছিলেন৷ পরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্রিটেনের এম১৬ গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে রুশ গোয়েন্দা এজেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ এরপর ২০১০ সালে লন্ডন ও মস্কোর মধ্যে গোয়েন্দা বিনিময় চুক্তির আওতায় সের্গেই স্ক্রিপাল ব্রিটেনে গিয়েছিলেন৷
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্ক্রিপালের উপর হামলার অভিযোগ এনে টেরেসা মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন' বলে উল্লেখ করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা৷ রাশিয়াও ব্রিটেনের বিরুদ্ধে পালটা ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছে বলেও জানান তিনি৷
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ ব্রিটেনের অবস্থানকে ‘দায়িত্বহীন' বলে মন্তব্য করেছেন৷ আর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলছেন, স্ক্রিপাল ইস্যুতে ব্রিটেনের এমন প্রতিক্রিয়ার অন্যতম একটি কারণ ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সমস্যায় থাকা৷
এদিকে টেরেসা মের বক্তব্যের পর লন্ডনের রুশ দূতাবাসের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট করা হয়েছে৷ এতে একটি থার্মোমিটারের ছবি দেয়া হয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখানো হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার শীতল সম্পর্কের বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ তবে রাশিয়া শীতল আবহাওয়াকে ভয় পায় না বলেও টুইটে উল্লেখ করা হয়েছে৷
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে ইংল্যান্ডে সাবেক রুশ গোয়েন্দার উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং এর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন৷ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ঐ বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, স্ক্রিপালকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে ধরণের নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে সেটি রাশিয়ায় তৈরি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে এটিই প্রথম নার্ভ এজেন্টের ব্যবহার বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়৷ এছাড়া ‘‘এটি যুক্তরাজ্যের সার্বভৌমত্বের উপর হামলা,’’ বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)