স্ট্যালিনের মুভির উপর নিষেধাজ্ঞা
২৬ জানুয়ারি ২০১৮‘‘না, রাশিয়ার কোনো সেন্সরশিপ নেই!,'' বলেছেন রুশ সংস্কৃতিমন্ত্রী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি৷ ‘‘না, অতীত নিয়ে সমালোচনামূলক আলোচনা নিয়ে ভীত নয় রাশিয়া,'' বলেন তিনি৷ অথচ রাশিয়ায় মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন আগে ব্রিটিশ কমেডি ‘দ্য ডেথ অফ স্ট্যালিন'-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷
‘রাশিয়ার জনগণকে অবমাননার' লক্ষ্যে ছবিটি নির্মিত হয়েছে বলে মনে করেন রাশিয়ার একদল সরকারি কর্মকর্তা ও চলচ্চিত্র পরিচালক৷ এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রাশিয়ার ইতিহাস নিয়ে হাসিতামাশা করা হয়েছে বলে মন্তব্য তাঁদের৷ তাই মঙ্গলবার ছবিটি মুক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ ১৯৫৩ সালে স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি হাস্যরসাত্মক উপায়ে তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে৷ গত সেপ্টেম্বরে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়৷
রাশিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বলেছে, ছবিটির লাইসেন্স প্রত্যাহারের কারণ এতে ‘এমন তথ্য আছে যার প্রচারে রাশিয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে'৷ কিন্তু কী সেই তথ্য, তা একমাত্র মন্ত্রীই জানেন৷ তিনি এবং রুশ সংসদের কয়েকজন প্রতিনিধি হয়ত মনে করেছেন, স্ট্যালিনকে নিয়ে হাসিতামাশা করা ঠিক নয়৷
ইয়েলেনা ড্রাপেকো নামের এক সাংসদ বলেছেন, রুশ সমাজে যে একতা বিরাজ করছে, এই চলচ্চিত্র তা হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে৷
স্পষ্ট করে বললে, রাশিয়ার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, রুশ নাগরিকরা কী ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখবে তা তারা ঠিক করবে৷ সরকার মনে করছে, জর্জিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি কিংবা অ্যামেরিকার জনগণের জন্য যা ঠিক, রুশদের জন্য তা ঠিক নয়৷
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন? নাগরিকরা নিজেদের মতামত গড়ে তুলুক, ক্রেমলিন কি তা চায় না? এটি হাস্যকর৷ পশ্চিমা নাগরিকদের মতোই রাশিয়ার নাগরিকরাও প্রাপ্তবয়স্ক৷ ব্রিটেন সহ অন্যান্য দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে রাশিয়ার যে সাংবাদিকরা মুভিটি দেখার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরাও কমেডি দেখে নির্মল আনন্দ পেয়েছেন, হেসেছেন৷
নিষিদ্ধ ফলের মজা
অতীত নিয়ে খোলা আলোচনা ও বিতর্ককে ভয় পায় না কোনো সভ্য দেশ৷ কোনো মতের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা গণতন্ত্রেরই একটি অংশ – আসলে এটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে৷ যে গণতন্ত্রে বিতর্কের সুযোগ নেই সেটি কোনো গণতন্ত্র নয়৷
যাঁরা ছবিটি দেখতে চান না, দেখবেন না৷ এটি খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার৷ কোনো মুভি নিষিদ্ধ করলে তরুণদের কাছে সেটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে৷ কারণ নিষিদ্ধ ফল খেতে সবসময় সুস্বাদু হয়৷ নিষিদ্ধ বইও সাধারণত বেশি মজার হয়ে থাকে - সাবেক সোভিয়েত আমল থেকেই রুশ নাগরিকরা এই বিষয়টি জানেন৷
তবে সাবেক ঐ আমলের চেয়ে এখনকার পার্থক্য হচ্ছে, ইন্টারনেটের এই যুগে মানুষকে কোনো কিছু দেখা থেকে বিরত রাখা সহজ নয়৷ যাঁরা দেখতে আগ্রহী তাঁরা সহজেই কোনো তরুণ রুশ নাগরিকের কাছ থেকে ছবিটি দেখার উপায় জেনে নিতে পারবেন৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷