‘বিউটিফুল গেম’
৬ জুন ২০১৪এক কথায়, ব্রাজিলে পেশাদারি ফুটবল ধুঁকছে৷ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস সংবাদ সংস্থার একটি বিবরণ অনুযায়ী টপ ক্লাবগুলো যেখানে অত্যন্ত বেশি ম্যাচ খেলে, সেখানে লোয়ার ডিভিশন ক্লাবগুলো যথেষ্ট খেলার সুযোগ পায় না; তাদের প্লেয়ারদের অন্যান্য নানা চাকরি নিয়ে পেট কিংবা সংসার চালাতে হয়; ওদিকে বড় বড় ক্লাবগুলেোর খেলাতেও মাঠে দর্শকের অভাব৷ এবং ফিরিস্তির এখানেই শেষ নয়৷
দেশের সেরা খেলোয়াড়রা অফার পেলেই বিদেশে পাড়ি জমান৷ ওদিকে ব্রাজিলের প্রায় ৭০০ পেশাদারি ফুটবল টিমের প্লেয়ারদের ৭০ শতাংশ বছরে মাত্র তিন মাস খেলার সুযোগ পান – অর্থাৎ প্রায় বারো হাজার খেলোয়াড় মরশুমের অধিকাংশ সময় বেকার থাকেন৷ অপরদিকে সেরা দলগুলোকে বছরে ৮৫টা অবধি গেম খেলতে হচ্ছে, যা ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি৷
ব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলোর বাজারে ধার গত পাঁচ বছরে প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড়েছে৷ শুধুমাত্র সরকারের কাছেই তাদের ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার৷ অন্যদিকে আয়ের হিসেবে ব্রাজিলের প্রায় বিশ হাজার পেশাদারি ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে ১৬ হাজারের রোজগার মাসে সাড়ে ছ'শো ডলারের কম৷ ক্লাবগুলোর আমদানি বাড়ার আর একটা পন্থা হতে পারতো, মাঠে গেট কলেকশন, অর্থাৎ টিকিট বিক্রি৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি৷
একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে৷ এ বছরের সূচনায় রিও ডি জানেরো রাজ্যের প্রাদেশিক চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাব ফ্লামেঙ্গো খেলেছে মাত্র ৩৭৫ জন দর্শকের সামনে! সেই চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল ছিল আবার মারাকানা স্টেডিয়ামো, যেখানে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে৷ মারাকানায় প্রায় আশি হাজার দর্শক বসতে পারবেন – কিন্তু ফ্লামেঙ্গো বনাম কাবোফ্রিয়েন্সের সেই ম্যাচে দর্শক হয়েছিল চার হাজারের কম৷ ব্রাজিলিয়ান কাপে নাউটিকো এবং অ্যামেরিকার মধ্যে খেলায় দর্শক হয়েছিল চারশো'র কম৷ ভাবলেও আশ্চর্য লাগে: ব্রাজিলের স্টেডিয়ামগুলোতে দর্শক সমাগম গড়ে বারো হাজার ন'শো, যা কিনা অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও কম!
দেশের ফুটবল ক্লাবগুলো যাঁরা চালান, তাঁদের পেশাদারি অভিজ্ঞতা নেই৷ ফুটবল ফেডারেশনের উপর রাজনীতির প্রভাব৷ সবচেয়ে বড় কথা, দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফুটবল টুর্নামেন্টগুলো তাদের আকর্ষণীয়তা হারিয়েছে৷ তার একটা কারণ হলো, টপ ক্লাবগুলোর এতই ‘প্যাকড সিডিউল', তাদের এত বেশি ম্যাচ খেলতে হয় যে, তারা বহু ম্যাচে ‘সেকেন্ড স্ট্রিঙ্গার' বা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্লেয়ারদের মাঠে নামায়, ফলে দর্শকদের মাঠে যাওয়ার প্রবণতা আরো কমে৷
তাহলে কি বিউটিফুল গেমের দেশে ‘বিউটিফুল গেম'-কে বাঁচানোর কোনো উপায় নেই? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে মনে করিয়ে দিতে হবে, বিউটিফুল গেম তো বড় বড় স্টেডিয়ামে গজায় না – তা গজায় ফাভেলা নামধারী কুখ্যাত বস্তিগুলির অলি-গলিতে, আনাচে-কানাচে, নিজের প্রাণশক্তির প্রেরণায় কিংবা তাড়নায়৷ তবে ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন দেশের ছোট দলগুলোকে আরো বেশি খেলার সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি পঞ্চম ডিভিশন চালু করার কথা ভাবছে বটে৷
এসি/ডিজি (এপি, এএফপি)