এক ধাপ এগুলো ইইউ
১৪ ডিসেম্বর ২০১২বুধবার সারারাত ধরে ব্রাসেলসে আলোচনা চলেছে৷ পরে ভোরের আলো ফোটার সময় এই ঐতিহাসিক ঐকমত্য অর্জিত হল৷ এক বছর ধরে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট, অর্থাৎ কোনোক্রমে, কোনোমতে সংকট সামাল দেবার প্রক্রিয়ার পর এলো ব্যাংকিং ইউনিয়নের এই প্রথম পর্যায়৷ অর্থাৎ গ্রিস বারংবার ইউরোজোন থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাবার মুখে আসবার পর এবার চাকা ঘুরল অন্যদিকে - ইউরোপের বৃহত্তর সংহতির দিকে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে এটা একটা জয় বৈকি৷ বিশেষ করে যখন তার সদস্য দেশরা প্রমাণ করল যে, তারা দশের স্বার্থে আরো খানিকটা সার্বভৌমত্ব উৎসর্গ করতে রাজি৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বার্লিন থেকেই জার্মান সংসদকে বলেন, ‘‘এই চুক্তির গুরুত্বকে বাড়িয়ে বলা যায় না৷'' জার্মানির মূল দাবিগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে, বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
কিন্তু তা'বলে কাজ এখানেই শেষ হচ্ছে না৷ কেননা এটা হল ব্যাংকিং ইউনিয়নের প্রথম পর্যায়৷ এর পর আসবে একটি তহবিল সৃষ্টি করার প্রসঙ্গ, যে তহবিল থেকে বিপন্ন ব্যাংকগুলি গুটিয়ে আনার ব্যবস্থা করা যাবে৷ এছাড়া থাকবে সেই ধরণের ব্যাংকগুলির গ্রাহকদের রক্ষিত অর্থের নিশ্চয়তা প্রদান ও তার সমন্বয় করার প্রশ্ন৷ এবং এ'সব নিয়ে আরো বেশি হাড্ডাহাড্ডি হবার সম্ভাবনাই বেশি৷
অবিলম্বে যে কাজটা হওয়া দরকার, সেটি হল, ব্যাংকিং ইউনিয়নের একটি আইনগত কাঠামো চূড়ান্ত করা এবং ইউরোপীয় সংসদের সমর্থন যোগাড় করা৷ ইসিবিকেও দেখতে হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার এই তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কিভাবে পালন করবে৷ হয়তো ইসিবি আগামী বছরের এপ্রিলের আগে এ'কাজ শুরু করতে পারবে না, এবং এ'ক্ষেত্রে পুরোপুরি কর্মক্ষম হতে ইউরো এলাকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো এক বছর সময় লেগে যাবে৷
কর্মকর্তারা বলছেন, ইসিবি বস্তুত শ'দেড়েক থেকে দুয়েক বড় বড় ব্যাংক সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করবে৷ বাকি সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো ব্যাংক বিপদে পড়লে, তবেই ইসিবি তাদের দিকে নজর দেবার মতো সময় পাবে৷
আসল কথা হল - ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী পিয়ের মস্কোভিচি যেমন সাংবাদিকদের বলেছেন - বোঝা যাচ্ছে যে ইউরো এলাকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে উঠছে৷ অতোদূর না গেলেও, এ'টুকু বলা যেতে পারে যে, এই পদক্ষেপের ফলে ইউরো এলাকার স্থাপত্য আরো কিছুটা মজবুত হবে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ইউরোপের একীকরণের পথে যেতে বারংবার একক, স্বতন্ত্র, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলিকে তাদের সেই সার্বভৌমত্বের একাংশ পরিত্যাগ করতে হবে, যার ফলে স্বদেশে রাজনৈতিক ঝড় ওঠার বিপদ থেকে যাবে৷ এ'ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ইউনিয়ন হল সরলতম পদক্ষেপ৷ ফিস্কাল অর্থাৎ আর্থিক নীতি সংক্রান্ত ইউনিয়ন আসবে তার পরে৷ আরও পরে আসবে অর্থনৈতিক এবং সবশেষে রাজনৈতিক ইউনিয়ন৷
এক্ষেত্রে জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট এবং ইসিবি ও ইউরো এলাকার প্রধানদের মতো এখনই কোনো বিরাট পরিকল্পনা দেখতে চান না৷ তিনি বলেছেন, রয়ে-সয়ে কাজ করাই ভালো৷
এসি / জেডএইচ (রয়টার্স)