1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কি কারণে বন্ধ সামহোয়্যারইন ব্লগ?

১ মার্চ ২০১৯

বিটিআরসি'র নির্দেশে সবগুলো আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) থেকে সামহোয়্যারইন ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ মত প্রকাশের অন্যতম বড় এই প্ল্যাটফর্মটি বন্ধের কারণ জানার চেষ্টা করেছে ডয়চে ভেলে৷

https://p.dw.com/p/3EIX6

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই বন্ধ করা হয়েছে সামহোয়্যারইন ব্লগ৷ কার ক্ষোভ? কেন ক্ষোভ? জবাবে তাঁরা বলছেন, বর্তমান আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে ২০০৫ সালেই একটা বিবাদে জড়িয়েছিল সামহোয়্যারইন ব্লগ৷

‘সামহোয়্যারইন ব্লগ একসময় খুবই বিতর্কিত ব্লগ ছিল, নাস্তিকতার জন্যও দায়ী তারা'

কী ছিল সেই বিবাদ? সামহোয়্যারইন ব্লগের সম্পাদক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা নিজের ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘অভ্রকে সমর্থন, এর পক্ষে জনমত গড়ে তোলা এবং ফোনেটিক সুবিধা ও ভার্চুয়াল কিবোর্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে সর্বসাধারণের জন্য বাংলা লেখার অবাধ সুবিধা করে দেওয়াটা যদি জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কর্মকাণ্ড এবং পর্নো ও জুয়াসাইট বলে আইনগত বিবেচিত হয়ে থাকে, তবে নির্দ্বিধায় এবং মাথা উঁচু করেই স্বীকার করছি, আমরা সামহোয়্যারইন ব্লগ সেই কাণ্ডটা করেছি৷ শুধুমাত্র সে কারণেই বাংলাদেশের আইন যদি আমাকে অভিযুক্ত করে/শাস্তি দেয় আমি তা বিনয়ের সাথে মাথা পেতে নেব৷ জয় হোক মাতৃভাষা বাংলার, জয় হোক বাংলা ব্লগের, জয় হোক বাংলা ব্লগারদের, জয় হোক সত্যের৷''

 

ব্লগারদের অনেকেই সামহোয়্যারইন ব্লগ বন্ধের কঠোর সমালোচনা করেছেন৷ ২ লাখ ১৩ হাজার ব্লগারের প্ল্যাটফর্ম সামহোয়্যারইন ব্লগ৷ এই প্ল্যাটফর্মের শুরুর দিকের লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই এটা বন্ধ করা হয়েছে৷ এখানে নানা মতের মানুষ লিখেছেন৷ আমাদের বর্তমান আইসিটি মন্ত্রী বাংলায় লেখার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় ভূমিকা রেখেছেন, সেটা আমরা স্বীকার করছি৷ কিন্তু যে গ্রাউন্ডে এটা বন্ধ করা হয়েছে, সেটা কি ঠিক হয়েছে? আমরা ৩৩ জন যারা সামহোয়্যারের শুরুর দিকে লেখালেখি করেছি তারা একটা বিবৃতি দিয়েছি৷ সেখানে আমরা বলেছি, লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর এই সাইটটির বিরুদ্ধে এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে আমরা- সামহোয়্যারইন ব্লগের যাত্রা শুরুর সময় থেকেই যারা এই প্ল্যাটফর্মে লেখালেখিতে জড়িত ছিলাম- তারা স্তম্ভিত, মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন৷''

‘দেশে মুক্তভাবে মত প্রকাশের সব পথই রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘সামহোয়্যারইন ব্লগের অবদানকে যেখানে স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন করা দরকার, সেখানে বিটিআরসি কেন এবং কোন উৎস হতে তথ্য পেয়ে এই প্ল্যাটফর্মটিকে অশ্লীল হিসেবে চিহ্নিত করেছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন৷ একটি দেশীয় ব্লগসাইট, যা বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষা-ভাষীদের কাছে জনপ্রিয়, তার বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কারো ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা আক্রোশ কাজ করছে কিনা, তাও উন্মোচন হওয়া আবশ্যক৷ নইলে ভবিষ্যতে সামহোয়্যারইন ব্লগের মতো আরো প্ল্যাটফর্ম-যারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং জ্ঞান ও যুক্তির চর্চাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর, হয়তো ভবিষ্যতে এমন কালোতালিকাভুক্ত হয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷''

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ছাড়াও আছেন সাংবাদিক শওকত হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক আব্দুল্লাহ আল মামুন, লেখক ও রাজনৈতিক সংগঠক ফিরোজ আহমেদ, সাবেক ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক কর্মী ও ব্লগার বাকী বিল্লাহ, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক কর্মী লাকী আক্তার, লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কৌশিক আহমেদ, প্রকৌশলী ও লেখক অনুপম সৈকত শান্ত, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক নুরুজ্জামান মানিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক গৌতম রায়৷

‘আমার মনে হয় ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই এটা বন্ধ করা হয়েছে’

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে মুক্তভাবে মত প্রকাশের সব পথই রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এটা বন্ধ করা হয়েছে৷ সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো লেখা তারা সহ্য করতে পারছে না৷ এটা তারই অংশ৷''

কেন সামহোয়্যারকে বন্ধ করা হয়েছে? জানতে চাইলে রাজনৈতিক কর্মী ও ব্লগার বাকী বিল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যারা শুরুর দিকে লেখালেখি শুরু করেছি, তখন কিন্তু সামহোয়্যারে লেখালেখির কারণে প্রগতিশীল আন্দোলন তৈরি হয়েছে৷ এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনমত সৃষ্ঠিতে এই সামহোয়্যার পজেটিভ রোল প্লে করেছে৷ আসলে সামহোয়্যারের ওপেন মডারেশন পলিসি নিয়ে সরকারপন্থি অনেকের আপত্তি ছিল৷ তাদের বক্তব্য ছিল, ওপেন পলিসির কারণে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরাও এখানে কথা বলার সুযোগ পায়৷ তবে আমরা তাদের ওপেন পলিসিকে সমর্থন করেছি৷ এই কারণে তারা আমার ব্লগ খুলেছে৷ আসলে অনেকদিন ধরেই এক ধরনের ঠেলাঠেলি চলছে৷ এবার যা শুনছি এসব নিয়ে বুদ্ধি পরামর্শ গেছে সিপি গ্যাং থেকে৷ আরেকটা জিনিস মনে হয়, এত ব্লগারের একটা প্ল্যাটফর্ম যেটা নিয়ে সরকারের একটা ভীতিও আছে৷ সেই ভীতির জায়গা থেকেই এটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷''

‘এত ব্লগারের একটা প্ল্যাটফর্ম যেটা নিয়ে সরকারের একটা ভীতিও আছে’

সামহোয়্যার বন্ধের পর বিধান রিবেরু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সামহোয়্যারইন বন্ধ করে কী চকবাজারের আগুন ঠেকানো গেছে? কিংবা বিমানে অস্ত্র নিয়ে ওঠা? অথবা অন্যান্য দুর্ঘটনা ও অপতৎপরতা? যায়নি৷ কাজেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে দেশের প্রথম এই বাংলা ব্লগটিকে মুক্ত করা হোক৷ ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যা দিবস ছিল৷ লেখালেখির কারণে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিলো৷ তিনি মুক্তমনা নামের একটি ব্লগ চালাতেন৷ এই মানুষটিকে হত্যার বিচার হয়নি, কিন্তু সামহোয়্যারইন ব্লগের মতো প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করতে কালক্ষেপণ হয় না৷''

আরেকজন ব্লগার ও সাংবাদিক শিবলী নোমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা যে বন্ধ করা হয়েছে, তার পরে বা আগে কিন্তু কিছুই বলা হয়নি কেন এটা বন্ধ করা হলো৷ মত প্রকাশের উপর এক ধরনের বাধা হিসেবে আমরা এটা দেখতে চাই৷ মত প্রকাশের পথ রুদ্ধ হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না৷ এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই অনেক বছর আগে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে সোচ্চার হয়েছি৷''

অনেকেই ব্যক্তিগত বিরোধের কথা বলছেন? আপনি কি মনে করেন? ‘‘দেখেন অনেকে অনেক রকম কথা বলতে পারেন৷ আলোচনা হতে পারে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে চাই না৷ আমি মনে করি, রাষ্ট্র তার নাগরিকদের যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সেটি নিশ্চিত করতে কাজ করবে, মন্ত্রীও একইভাবে কাজ করবেন৷ এখানে মত প্রকাশের পথ রুদ্ধ হোক, সেটা তো কেউ চান না৷ সেটা তো কেউ চাইতে পারেন না৷''

টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসে যোগ দিতে বর্তমানে স্পেনের বার্সেলোনায় আছেন৷ অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গত দুই দিন ধরে চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি৷

তবে বার্সেলোনা যাওয়ার আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সামহোয়্যার নিয়ে নিজের অবস্থান ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখা করেছিলেন তিনি৷ বলেছিলেন, ‘‘সামহোয়্যারইন ব্লগ একসময় খুবই বিতর্কিত ব্লগ ছিল৷ এদের কনটেন্টগুলো শুধুমাত্র সরকারবিরোধী না, আরো জঘন্য ছিল৷ যে কোনো বিষয়ে যাকে তাকে যেখানে সেখানে আক্রমণ করত তারা৷ নাস্তিকতার জন্যও দায়ী ছিল তারা৷''

আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য