‘পর্নোসাইটের তালিকায়’ সামহোয়্যারইন ব্লগ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ওয়েবসাইট বন্ধ করার যে তালিকা গত বুধবার পাঠানো হয়েছে সেখানে দেখা গেছে সামহোয়্যারইন ব্লগ ও গুগল বুকসের নাম রয়েছে৷
সামহোয়্যারইন ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ' আইএসপিএবি-র সভাপতি আমিনুল হাকিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নির্দেশ পেয়েছি৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে সর্বশেষ যে তালিকা এসেছে সেখানে সামহোয়্যারের নাম আছে৷ আমরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছি৷ তিন দিন বন্ধ ছিল তাই হয়তো অনেক আইএসপি এটা বন্ধ করতে পারিনি৷ শিগগিরই বন্ধ করে দেবে৷ আর গুগল বুকস যেটা বলা হচ্ছে, সেটা কিন্তু গুগলস বুকস ডট কম ডট বিডি৷ আসল যেটা গুগল বুকস ডট কম, সেটা চালু আছে৷ আমরা তালিকা অনুযায়ী বন্ধ করতে পারি শুধু৷ আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷''
অনেকগুলো জনপ্রিয় সাইটতো বন্ধ হচ্ছে? সেগুলো নিয়ে কেউ অভিযোগ করছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে৷ কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই৷'' বিটিআরসিকে বিষয়টি জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে আমিনুল হাকিম বলেন, ‘‘না, আসলে বলা হয়নি৷ আসলে বিটিআরসিকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি৷''
কী বলছেন আইসিটি মন্ত্রী?
বিষয়টি নিয়ে ডয়চে ভেলে কথা বলেছে ডাক টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে৷ তাঁকে জানানো হয়েছে, পর্নোসাইট বন্ধ করতে গিয়ে অনেকগুলো পপুলার সাইটও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ যেমন সামহোয়্যারইন ব্লগ, গুগল বুকস৷ কিন্তু এগুলো তো পর্নোসাইট না, তাহলে এগুলো বন্ধ হচ্ছে কেন? জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘‘নিশ্চয় কোনো কারণ আছে৷ নিশ্চয় অশ্লীল কোনো কনটেন্ট আছে৷ আমরা তো পর্নো বলতে শুধুমাত্র ‘ন্যাংটা' ছবি বুঝি না, যে কোনো কনটেন্ট লেখা কিংবা নাটক এরকম বহু জিনিস আছে যে সব জায়গাতে অনুচ্চারিত শব্দ ব্যবহার হয়৷ আমরা কিন্তু কেবলমাত্র ছবির পর্নোসাইট বন্ধ করছি না৷ অতএব কন্টেন্টের মধ্যে থাকতে পারে... ৷ সামহোয়্যারইন ব্লগ একসময় খুবই বিতর্কিত ব্লগ ছিল৷ এদের কনটেন্টগুলো শুধুমাত্র সরকারবিরোধী না, আরো জঘন্য ছিল৷ যে কোনো বিষয়ে যাকে তাকে যেখানে সেখানে আক্রমণ করত তারা৷ নাস্তিকতার জন্যও দায়ী ছিল তারা৷ সুতরাং এরকম কোনো কনটেন্টের জন্য এটা হতে পারে৷ ওভারঅল একটা সম্পূর্ণ নিরাপদ ইন্টারনেট চাই আমরা৷ আমরা ফেসবুক, ইউটিউবকে ধরবো৷ ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাপস যেগুলো আছে সেগুলোও ধরব৷ আমাদের জন্য প্রতিজ্ঞা হচ্ছে শিশুর জন্য এটা নিরাপদ করে যাব৷''
সামহোয়্যারইন ব্লগ একটি জনপ্রিয় ব্লগ, সেখানে অনেকে লেখালেখি করে - মন্ত্রীকে এই বিষয় জানানো হলে তিনি বলেন, ‘‘দেখেন সবচেয়ে বেশি পপুলার তো পর্নোসাইট৷ পপুলারিটি কোনো সংজ্ঞা না৷ যদি তাদের কোনো ত্রুটি না থাকে তাহলে তাদের বলতে হবে যে, আমাদের কোনো ত্রুটি নেই৷ তারা কমপ্লেইন করলে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচাই করে দেখব? কিন্তু আমাদের এখানে এই কাজটা যারা করছে সেটা কিন্তু কোনো ব্যক্তি না৷ ৫/৬টা ইন্টেলিজেন্স উইং যাচাই-বাছাই করে তালিকাটা করছে৷ অতত্রব ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম৷''
এই পর্নোসাইটগুলো বন্ধ করা ছাড়া কি অন্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন আপনারা? জবাবে জনাব জব্বার বলেন, ‘‘নেব৷ এখন তো আমরা শুরু করলাম মাত্র৷ আমরা প্রতিদিন খুঁজে বের করছি, প্রতিদিন দেখছি আমাদের যেখানে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেগুলো নিচ্ছি৷ আমরা আগামী পাঁচ ছয় মাসের মধ্যেই একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করব৷ তখন প্রতিটা জিনিস আমরা টাচ করতে পারব৷ এখন তো অনেক কিছুই কাজ করতে পারছি না৷ আমরা এই সক্ষমতা অর্জন করার চেষ্টা করছি৷''
বইপত্রের কনটেন্টেও এই ধরনের বিষয় থাকার কথা জানালে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘‘বইপত্রের দায়িত্ব আমার না৷ বইপত্রের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ আছে৷ আমার দায়িত্ব ডিজিটাল দুনিয়া৷ ডিজিটাল বাংলাদেশ বানাতে হলে ডিজিটাল দুনিয়া নিরাপদ করতে হবে৷ আমার জায়গা থেকে আমি যাত্রা শুরু করেছি৷ এখন তো শুধুমাত্র পর্নোসাইটগুলো বন্ধ করতে পারছি৷ এখন পর্যন্ত যা করেছি তা এক পারসেন্টও না৷''
সামহোয়্যার.. এর বক্তব্য
তবে সামহোয়্যার ইন ব্লগের সম্পাদক ও সহ প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করতে চায় সরকার৷ সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সামহোয়্যার ইন ব্লগের নাম তালিকায় রাখা হয়েছে৷ গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সামহোয়্যার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে৷ এখানে প্রতিদিন ৬০ হাজার মানুষ ভিজিট করেন৷ ২ লাখ ১৩ হাজার ব্লগার এখানে রেজিষ্ট্রার্ড৷ এখানে এমন কোনো কনটেন্ট থাকে না, যে কারণে এটা পর্নোসাইটের তালিকায় পড়বে৷ কোনো লেখায় সমস্যা দেখলে সেটা বাদ দেওয়া হয়৷ সরকার এবারই প্রথম না যে, এটা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে৷ ২০০৫ সাল থেকে এই ব্লগটি চলছে৷ এখানে যে ধরনের লেখা থাকে, ফেসবুক-ইউটিউব বা টুইটারেও সে ধরনের কনটেন্ট থাকে৷''
বিটিআরসি'র চেয়ারম্যান জহুরুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেকগুলো এজেন্সি তালিকা করে আমাদের দিচ্ছে৷ সেই তালিকাই আমরা বন্ধ করার জন্য আইএসপিএবি'কে পাঠাচ্ছি৷ এর মধ্যে কেউ যদি নির্দোষ থাকে, তাহলে আমরা তাদের বলব, আপনারা আমাদের কাছে এসে বলুন, আপনি নির্দোষ হলে আমরা আপনার সাইটটি খুলে দেব৷''