1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরাতে ইউরোপের চাপে বাংলাদেশ

২৮ আগস্ট ২০২১

আনডকুমেন্টেট বা বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় বাংলাদেশের উপর নাখোশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এজন্য বাংলাদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সাময়িক কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় কমিশন৷  

https://p.dw.com/p/3zbzb
Bosnien | Verzweifelte Lage | Migranten aus Bangladesch
বসনিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত একটি ক্যাম্পে ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিরা৷ ছবিটি গত বছরের অক্টোবরে তোলা৷ ছবি: Arafatul Islam/DW

১৫ জুলাই ইউরোপীয় কাউন্সিলের কাছে পাঠানো এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক এবং গাম্বিয়াকেও যুক্ত করা হয়েছে৷ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈধ কাগজবিহীন (আনডকুমেন্টেড) অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার (রিঅ্যাডমিশন) ব্যাপারে দেশগুলোর সহাযোগিতা আরো জোরদার করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা৷  

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তি হয়৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের আরো দ্রুত সহযোগিতা  চায় ইইউ৷ এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদান-প্রদান এবং জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দিক থেকে আরো তৎপর পদক্ষেপের প্রত্যাশা তাদের৷ ইইউ অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ সরকার অনেক চিঠির জবাব দেয় না বা দিতে অনেক দেরি করে৷

ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত: শহীদুল হক

২০১৭ সালে চুক্তির পর তালিকা ও কাগজপত্র ম্যানুয়ালি বা সনাতন পদ্ধতিতে হস্তান্তর করা হতো৷ কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরে এই ব্যবস্থা ডিজিটাল করা হয়৷ ডিজিটাল হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ ‘আনডকুমেন্টেড’ বাংলাদেশির তালিকা ও কাগজপত্র হস্তান্তর করে তারা৷ সেগুলো এখনও নিস্পত্তির অপেক্ষায় আছে৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে জার্মানিতে৷ ইউরোপের এ দেশটিতে এমন ৮০০জন বাংলাদেশি রয়েছেন৷ বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশির তালিকায় তারপরে রয়েছে ইটালি, গ্রিস ও মাল্টা৷

ইউরোপের ভিসায় কড়াকড়ি

২০২০ সালের ফেব্রুয়রি মাসে ইইউ তাদের ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আনে৷ তাতে বলা হয় যেসব দেশ রিঅ্যাডমিশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে না তাদের ভিসা প্রক্রিয়া কড়াকড়ি করা হবে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জার্মানিতে আনডকুমেন্টেড তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ ১৫০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়৷ তার মধ্যে মাত্র একজনকে ‘বাংলাদেশি আনডকুমেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা, যা জার্মানি ভালোভাবে নেয়নি৷

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের বিষয়টি নিস্পত্তি করতে ইইউ যদি ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে তাহলে তা মানবাধিকারের লংঘন৷ কারণ এখন যারা ইউরোপের দেশে যাওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে তাদের ভিসা বন্ধ করতে পারে না৷ যার বৈধ ডকুমেন্ট আছে তাকে আটকানো হলে তার মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা হবে৷ তারাই মানবাধিকারের প্রবক্তা৷ তারাই যদি এটা করে তাহলে তা হবে দুঃখজনক৷ কেউ আদালতে গেলে এর প্রতিকার পেতে পারেন৷’’

তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আজ (শনিবার) একটি বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তারা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন৷ কিন্তু যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আনডকুমেন্টেড আছেন তাদের মানবাধিকারের কী হবে?’’

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তে বিস্মিত নন৷ ‘‘কারণ ২০১৬ সাল থেকেই তারা এ বিষয়ে কথা বলছে৷ এখন এই সিদ্ধান্তের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো৷ আমাদের পোশাক শিল্পসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হতে পারে৷ যাদের প্রয়োজন তারাও ভিসা নাও পেতে পারেন৷”

তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের দুইটি কাজ করা উচিত৷ প্রথমত, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং দ্বিতীয়ত তারা যে তালিকা দেয় তা থেকে যাচাই বাছাই করে টোকেন হলেও কিছু লোককে ফেরত আনা৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘অবৈধ অভিবাসীরা দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করছেন৷’’

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এখন সরকারি সফরে জার্মানিতে আছেন৷ তিনি বার্লিনে বাংলাদেশ-জার্মানি কৌশলগত সংলাপে বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেখানে ভিসা কড়াকড়ি এবং আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশি ইস্যু দুইটি বিষয় নিয়েও তিনি কথা বলবেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে ফোন করলে তিনি এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত কতজন বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসী ফেরত এসেছেন তা জানা যায়নি৷ তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই সংখ্যা হাতে গোনা হবে৷ সম্প্রতি ব্র্যাকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে গত ১২ বছরে ৬২ হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে গেছেন৷ আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গেছেন তিন হাজার ৩৩২জন৷ তাদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৭ হাজার ১৯৮ জন ভূমধ্যসাগরের রুট ব্যবহার করেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান