1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলন

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৩ জুলাই ২০১৪

বেতন-বোনাসের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঈদের আগেই রাজপথে নামতে পারে – এমন আশঙ্কা আগেই করেছিল খোদ গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ৷ এই তালিকায় সহস্রাধিক গার্মেন্টস ছিল৷ ঈদ যতই এগিয়ে আসছে শ্রমিকদের আন্দোলন ততই বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/1Ch8Q
Bangladesch nach Brand in einer Textilfabrik in Dhaka Proteste
ছবি: Reuters

বুধবারও সকালে বিজিএমইএ ঘেরাও করেছিল একটি গার্মেন্টসের ৫ শতাধিক শ্রমিক৷ আর দুপুরে বেতন ভাতার দাবিতে রাস্তায় নামা গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে বাড্ডায় পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে৷ এখন প্রতিদিনই কোনো না কোনো গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রাজপথে বিক্ষোভ করছে৷ পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের বুঝিয়ে তুলে দিচ্ছেন৷ কিন্তু এভাবে কতদিন? পুলিশও বলছে, সামনে আরো কঠিন সময় আসছে৷ শ্রমিকরা কাজ করেছে, তারা পাওনা চায়৷ তাদের এ দাবি যৌক্তিক৷ মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ঠিক মতো না দিলে সামনের সময়ে আরো খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশের৷

বিজিএমইএ-র সভাপতি আতিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শ্রমিকরা কাজ করেছে৷ তারা পাওনা চায়, এটাই স্বাভাবিক৷ আমিও শ্রমিক হলে তাদের মতোই পাওনা চাইতাম৷ কিন্তু বিজিএমইএ তো শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারে না৷ শ্রমিকদের পাওনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককেই দিতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে বিজিএমইএ মধ্যস্থতা করে দিতে পারে৷ সরকারকেও ভূমিকা নিতে হবে৷ শুধু বিজিএমইএ-র উপর দায় চাপিয়ে দিলেই হবে না৷''

বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজিএমইএ-র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গার্মেন্টস মালিকদের দ্রুত পাওনা পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়েছেন৷ এর আগে শ্রম প্রতিমন্ত্রী, বিজিএমইএ-র প্রতিনিধি ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখানে ২৬শে জুলাইয়ের মধ্যে সব গার্মেন্টসের শ্রমিকদের পাওনা বেতন ও বোনাস পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়৷ কিন্তু ২৬শে জুলাই চলে এলেও অনেক গার্মেন্টসে বেতন-বোনাস বাকি৷ শ্রমিক নেতারাও মালিকদের হুশিয়ার করে বলেছেন, তারা ওই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন৷ বেতন-বোনাস না দিলে শ্রমিকরা সবাই রাজপথে নেমে আসবেন৷

বুধবার তুবা গ্রুপের প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অবরুদ্ধ করে রাখে বিজিএমইএ ভবন৷ কিন্তু বিজিএমইএ নেতারা তাদের বেতন-বোনাসের ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে পারেনি৷ বিজিএমইএ-র সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘তুবা গ্রুপের মালিক তাজরীনের দুর্ঘটনার মামলায় জেল হাজতে রয়েছেন৷ তাই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না৷'' তিনি আরও বলেন, ব্যাবসা করে ব্যাংক আর ব্যবসায়ী৷ ব্যবসায়ী বিপদে পড়লে ব্যাংকের এগিয়ে আসার কথা৷ কিন্তু তুবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন কারাগারে থাকায় ব্যাংক তাঁর পক্ষে টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না৷

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার শ্রমিক৷ তাদের পাওনা বকেয়া ৭ কোটি টাকার মতো৷ তুবার সব যন্ত্রপাতি বিক্রি করলেও ৭ কোটি টাকা হবে না৷ শ্রমিকরা কাজ করেছে তারা বেতন তো চাইবেই৷ কিন্তু এত টাকা কী ভাবে দেয়া হবে, সে বিষয়টি শ্রম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে৷ দেখি তারা কী সিদ্ধান্ত দেন৷'' তিনি বলেন, এই সেক্টরে ৪৪ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ সবাইকেই ঈদের আগে বেতন বোনাস দিতে হবে৷ সেভাবেই তারা কাজ করছেন৷ তিনি আশা করছেন, ২৬শে জুলাইয়ের মধ্যে সব ফ্যাক্টরি তাদের শ্রমিকদের পাওনা দিয়ে দেবে৷

আন্দোলনকারী তুবা গ্রুপের শ্রমিক নাছিমা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মে মাস থেকে বেতন ভাতা পাই না৷ ঈদ চলে এলেও বোনাস পাচ্ছি না৷ খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে আমাদের দিন কাটছে৷ এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি৷ কোনো আলোচনায় আর কাজ হবে না, আমরা বেতন-বোনাস চাই৷ না দিলে ফিরব না৷''

বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি রিয়াজ-বিন-মাহমুদ বলেছেন, ‘‘বিজিএমইএ সভাপতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করছেন কী ভাবে তাদের বেতন-বোনাস দেয়া যায়৷ সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কারখানার ফ্লোর বিক্রির প্রস্তাবও রাখা হয়েছে৷ আশা করছি অতি শিগগির এ সমস্যার সমাধান হবে৷''

রোজা শুরুর আগে গত ২৫শে জুন গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এক জরিপ প্রকাশ করে বলেছিল, ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে জটিলতায় পড়তে পারে অন্তত ১ হাজার গার্মেন্টস কারখানা৷ তখন সরকার ও মালিক পক্ষ বলেছিল, এ সব কারখানার বেতন-বোনাস নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ যাতে বড় আকারের শ্রম অসন্তোষে রূপ না নেয়, তা নিয়ে তাঁরা সতর্ক আছেন৷ ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে করণীয় ঠিক করতে একাধিক বৈঠকও হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও পাওনা পাচ্ছেন না শ্রমিকরা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য