রাজনীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ মিঠুন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তদন্তকারী সংস্থার একের পর এক নোটিশ এবং দলের নেতাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া – এইসব কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজনীতি থেকে সরে এসেছেন তিনি৷ চুপিসাড়ে রাজ্যসভার সদস্য পদ ত্যাগ করেছেন৷ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে আসতে নারাজ টলিউড ও বলিউডের জনপ্রিয় তারকা মিঠুন নিজে৷ তবে বিরোধী দল বিজেপির সদ্য সাংসদ হওয়া আরেক অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলী বলছেন, ‘‘বীতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনীতি ও সংসদের সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন মিঠুন৷ থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বছরের পর বছর ধরে মিঠুন চক্রবর্তী নিঃশব্দে যে কাজ করে গেছেন, তা অনেকেই জানেন না৷ অথচ তাঁর গায়ে কালি পড়েছে৷ কয়েক দশকের কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের দ্বারা তিনি যে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি তাকে কালিমালিপ্ত করেছে৷ অন্যের দুর্নীতির দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না৷ কোনো স্বচ্ছ ও স্বাধীনচেতা মানুষের পক্ষেই সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ উনিও মেনে নিতে পারেননি৷''
ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে মিঠুনের ছেড়ে দেওয়া পদটিতে উপ-নির্বাচন হবে ১৭ই মার্চ৷ মাস দেড়েক আগে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর, মঙ্গলবার ওই পদে উপ-নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করল দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ কমিশনের প্রধান সচিব বারীন্দ্র কুমার এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেন৷ কলকাতা বিধানসভায় ভোটগ্রহন হবে ১৭ই মার্চ, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত৷ সেদিনই বিকেল ৫টায় ভোট গণনা হবে৷ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ২৮শে ফেব্রুয়ারি৷ এছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৭ই মার্চ, স্ক্রুটিনি ৮ই মার্চ৷ প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ই মার্চ৷ আর ২০শে মার্চের মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে৷
অন্ধ্রপ্রদেশের সাত এবং তেলেঙ্গানার তিনজন বিধানপরিষদ সদস্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৯শে মার্চ৷ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এই দুই রাজ্যের ১০টি আসনে নির্বাচন হবে৷
বিশিষ্টজনেদের তৃণমূলের যোগ দিয়ে, পরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সরে আসার ঘটনা এই প্রথম নয়৷ ২০০৬-০৭ সালে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল সংগীতশিল্পী কবির সুমনের৷ ২০০৯ সালে তিনি যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন৷ কিন্তু দলের নেতাদের সঙ্গে ঠোকাঠুকি বেঁধে যায় শুরুতেই৷ ২০১০ সালের মার্চে দল ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি৷ সাংসদ পদটিও ছাড়তে চেয়েছিলেন৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর অনুরোধে আর পদ ছাড়েননি৷ অর্থাৎ ২০১৪ সালে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন সুমন৷
এদিকে রাজ্যসভায় মিঠুনের পদটি ফাঁকা হওয়ায় আরও সাড়ে তিন বছর সাংসদ পদে কাকে আনা হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে৷ নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সাংসদ পদ ফাঁকা হলে পরবর্তী ছ'মাসের মধ্যে সেই পদটি পূরণ করতে হয়৷ ফলে তৃণমূল মিঠুনের জায়গায় নতুন সাংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে৷ দলীয় সূত্রের খবর, ফাঁকা পদে দলের প্রার্থী হিসেবে যে কয়েকটি নাম উঠে এসেছে, তার মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন দেবপ্রসাদ রায়৷ চলতি বছরের মাঝামাঝি বাংলার আরও কয়েকজন রাজ্যসভার সাংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে দিল্লির এক প্রভাবশালী বাঙালি কংগ্রেস নেত্রী তৃণমূলে যোগ দিয়ে তৃণমূলের টিকিটেই রাজ্যসভায় যেতে আগ্রহী বলেও দাবি করেছে তৃণমূলের সূত্রটি৷ তালিকায় রয়েছেন মানস ভুঁইয়া, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মহুয়া মৈত্ররাও৷
প্রায় সাড়ে তিন বছর মেয়াদ থাকতেই গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজ্যসভার সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অভিনেতা সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তী৷ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন৷ চিঠিতে শারীরিক অসুস্থতার কথা লিখেছিলেন তিনি৷ নিজে না আসতে পারার কারণও জানিয়েচিলেন৷ সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে শিরদাঁড়া ও অগ্ন্যাশয়ের অসুখে ভুগছেন এই তারকা৷ ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিকবার মিঠুন বলেছেন যে, রাজনীতি তাঁর প্রকৃত জায়গা নয়৷ তিনি সরে আসতে চান৷ বছর দুয়েক ধরেই তিনি সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন৷ প্রতিবার সংসদ অধিবেশনে নিজের অসুস্থতার প্রমাণপত্র-সহ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন৷ রাজ্যসভার নিয়ম অনুযায়ী, পদত্যাগ করতে হলে সাংসদকে সশরীরে উপস্থিত থেকে ইস্তফা পত্র জমা দিতে হয়৷ এই নিয়মের অন্যতম কারণ হলো, পদত্যাগী সাংসদ সত্যিই নিজে পদত্যাগ করতে চাইছেন কিনা এবং বিশেষ কারও চাপের মুখে পড়ে তিনি পদত্যাগ করছেন কিনা যাচাই করা৷ মিঠুনের আবেদন গ্রহণ করেছিলেন হামিদ আনসারি৷