পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় কলঙ্কজনক অধ্যায়
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭বুধবার ‘সম্পত্তি ক্ষতি রোধ’ বিল পেশ করার সময় সরকার বনাম বিরোধীদের তুমুল বিরোধ শুরু হয় বিধানসভায়৷ ধস্তাধস্তি, ধাক্কাধাক্কিতে গুরুতর চোট পান বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান৷ তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এখনও৷ এই হাঙ্গামার পর থেকেই বিধানসভা অধিবেশন বয়কট করে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিরোধীরা৷ বৃহস্পতিবারও সভায় সরকারের পেশ করা শিক্ষা বিলটি ছিঁড়ে, আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ দেখান হয়৷ সি পি এম বিধায়ক সুজন দাশগুপ্ত বলেছেন, যেভাবে সরকারের সমর্থনে বিরোধী বিধায়কদের ওপর হামলা করা হল, পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে তা বেনজির৷ দুই মহিলা বিধায়ক প্রতিমা রজক এবং জাহানারা খাতুনের সঙ্গে অসভ্যতা করা হয়েছে৷ প্রতিমা রজক বিধানসভার মার্শালের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ তবে এসবের মধ্যেও অসুস্থ আবদুল মান্নান–কে দেখতে যান পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উপ সচেতক তাপস রায়৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কেন বিরোধী দলনেতাকে দেখতে যাননি, সেই প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা৷
হাঙ্গামার জেরে বাজেটের দিনটি বয়কট করলেও সভার বাইরে বিকল্প বাজেট পেশ বিরোধীরা করেছেন৷
এভাবেই পশ্চিমবঙ্গের আগামী অর্থবর্ষের বাজেট প্রস্তাব পেশ হলো বিধানসভায়৷ যে প্রস্তাবের সূচনা হলো কেন্দ্র সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের দীর্ঘ সমালোচনায়৷ নোট বাতিলের ফলে রাজ্যের এবং সারা দেশের অর্থনীতি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে, তার বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো৷ একদিকে কেন্দ্র সরকারের নোট বাতিল এবং রাজ্যে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের ছেড়ে যাওয়া বিপুল ঋণের বোঝার সমালোচনায় বাজেট ভাষণের অনেকটা সময় খরচ করলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ তবে সরকার পক্ষের টেবিল চাপড়ানি ছাড়া এদিন বিধানসভায় দ্বিতীয় কোনও শব্দ ছিল না৷ কারণ, বুধবার বিধানসভায় হাঙ্গামা এবং বিরোধী বিধায়কদের ওপর শাসকদলের বিধায়কদের হামলার প্রতিবাদে এদিন বাজেট অধিবেশন বয়কট করে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট৷ বাজেট ভাষণের সময় সভার বাইরে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা৷ তার পর নকল অধিবেশন সাজিয়ে এক বিকল্প বাজেট পেশ করেন৷ যদিও এই বিকল্প বাজেট নেহাতই প্রতীকি, তা সত্ত্বেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই তার খসড়া তৈরি করা হয়৷ স্রেফ এটা বোঝাতে যে বর্তমান রাজ্য সরকারের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে বিরোধীদের নীতির কতটা তফাত৷ কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস ভার্মা, যিনি প্রাক্তন আই এ এস, এবং সিপিআইএম–এর সুজন দাশগুপ্ত মিলে খসড়াটি তৈরি করেন৷ পরামর্শ নেওয়া হয় রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, অর্থনীতির অধ্যাপক অসীম দাশগুপ্তের৷ সুখবিলাস ভার্মা বিকল্প বাজেট ভাষণ দেন৷ রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদিও কটাক্ষ করেছেন এই বিকল্প বাজেটকে৷ বলেছেন, আগের বামফ্রন্ট সরকার ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ শোধের দায় এই সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে রেখে গেছে৷ বাম বিধায়কদের মুখ দেখানোর উপায় কোথায়!